বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নিরবের পরকীয়ার অভিযোগ নিয়ে সুর পাল্টালেন স্ত্রী ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কী কথা হলো, জানালেন মির্জা ফখরুল ভারত থেকে চিন্ময়ের মুক্তি দাবি কিসের আলামত, প্রশ্ন রিজভীর আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৬ : প্রেস উইং চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ রয়টার্সের মনগড়া সংবাদের প্রতিবাদ জানালো সিএমপি হাইকোর্টের নজরে ইসকন-চট্টগ্রামের ঘটনা : আদালতকে পদক্ষেপ জানাবে সরকার ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান

আমানত সংগ্রহ নিয়ে চাপ বাড়ছে ব্যাংকারদের ওপর

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৮৮ বার

আমানত সংগ্রহে ব্যাংকারদের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকে এক বছরের দ্বিগুণ লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। মাঝারি পদমর্যাদার একজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে পাঁচ কোটি টাকার থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকারদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আমানত কমে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে মানুষের হাতে নগদ টাকা রাখার পরিমাণ। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে মানুষ তাদের প্রয়োজনের তুলনায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বাড়তি তুলে তাদের হাতে রেখেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, অক্টোবরে যেখানে ব্যাংকের বাইরে গ্রাহকের হাতে ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা, সেখানে নভেম্বরে এসে তা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার টান পড়েছে। এরওপর এক ধরনের ব্যবসায়ী গ্রুপ নামে বেনামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। এ কারণে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে কোনো কোনো ব্যাংক কলমানি মার্কেটের পাশাপাশি উচ্চ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে। কিছু ব্যাংকের নিয়মিত সিআরআর (কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে ব্যাংকগুলোর বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার) সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে কিছু কিছু ব্যাংকে টাকার সঙ্কট বেড়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে নামে বেনামে টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী গ্রুপ। চিহ্নিত এসব ব্যবসায়ী গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। আর এ কারণেই এক ধরনের গ্রাহক ব্যাংকে টাকা না রেখে নিজেদের কাছে রাখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এতে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট। এ সঙ্কট মেটানোর জন্যই ব্যাংকারদের আমানত সংগ্রহে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে। বাড়তি চাপ দেয়া হচ্ছে। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতির তুলনায় আমানতের সুদহার কম। মানুষ বাড়তি লাভের আশায় ব্যাংকে টাকা না রেখে জমি, বিভিন্ন সিকিউরিটিতে টাকা বিনিয়োগ করতে পারে। এ ছাড়া যখন ব্যাংকের ওপর আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়, তখন ব্যাংকে মানুষ টাকা না রেখে নিজেদের হাতে রাখে। এ কারণেই হয়তো ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, মানুষের আস্থার সঙ্কট কাটাতে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। যাদের কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বা হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ব্যাংকিং খাতে আমানত বেড়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আমানত বেড়েছিল ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের চার মাসে আমানত কমেছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। আমানত কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনায়।

কিছু কিছু ব্যাংক প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে চলছ। ইসলামী ব্যাংকগুলোও তাদের ইসলামী বন্ড বন্ধক রেখে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে। প্রতি ১০০ টাকা ধার নিতে রেপোর মাধ্যমে ৬ শতাংশ সুদে এবং বিশেষ রেপোর আওতায় ৯ শতাংশ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে।

দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, কখনো তাদের ব্যাংকে টাকার সঙ্কট হয়নি। কিন্তু গত কিছুদিন যাবৎ টাকার সঙ্কট প্রকট আকার দেখা দিয়েছে। এখন তুলনামূলক বেশি মুনাফায় আমানত সংগ্রহের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এর পরেও আমানত সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। মানুষ আমানত রাখতে চাচ্ছেন না। তারা পড়ে যাচ্ছেন বেকায়দায়। ব্যাংকের মাঝারি পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা বলেন, গত বছর তাকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার সঙ্কটের মধ্যে তা না কমে বরং দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে বলা হচ্ছে।

এ কারণে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বন্ধু, আত্মীয়স্বজনকে ধরাধরি করছেন। কিন্তু কাউকেও আস্থার সঙ্কট কাটানো যাচ্ছে না। এতেই তিনি পড়ে গেছেন মহাবিপাকে। ওই কর্মকর্তার মতো অনেকেরই একই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এখন কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি জানান, যাদের কারণে এ সঙ্কট তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, উপরন্তু নিরীহ কর্মকর্তাদের ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে যা অমানবিক বলে তিনি মনে করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com