মহেন্দ্র সিং ধোনি প্রায় এক বছরের কাছাকাছি জাতীয় দলের বাইরে। দলের দুই নির্ভরযোগ্য ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানও চোটে ছিটকে গেছেন। দলের প্রথমসারির তিন তারকা ব্যাটসম্যান না থাকলে কী হতে পারে একদিনের ক্রিকেটে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ভারত।
তিন ম্যাচের প্রথম দুটোতে হেরে ভারতে আপাতত হোয়াইটওয়াশের আতঙ্ক তাড়া করছে। নিউজিল্যান্ডের ২৭৪ রান তাড়া করতে নেমে ভারতীয় হেভিওয়েট ব্যাটিং লাইনআপ শেষ হলো ২৫১ রানে। দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের জয় ২৩।
একা কুম্ভ হয়ে লড়লেন জাদেজা। ৭৩ বলে ৫৫ করে শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ম্যাচে উত্তেজনা আমদানি করলেও সহযোগী হিসেবে শেষ পর্যন্ত কাউকে পেলেন না। চলতি সিরিজে প্রথমবার ওপেনার হিসেবে অভিষেক ঘটানো পৃথ্বী শ, মায়াঙ্ক আগারওয়াল তো বটেই ব্যর্থদের তালিকায় নাম লেখালেন বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল থেকে কেদার যাদবরাও।
হুড়মুড়িয়ে পড়া ব্য়াটিং লাইনআপে প্রদীপের সলতের আলো হয়ে টিকে থাকল শ্রেয়স আইয়ারের লড়াকু হাফসেঞ্চুরি। শেষ দিকে জাদেজার মরিয়া লড়াই রান না থাকলে ভারত এদিন ২০০-ও পেরোয় না।
অধিনায়ক হিসেবে কোহলি কোনো দিনই উচ্চমানের নয়। ক্যাপ্টেন হিসেবে বেনজির সাফল্য ছোঁয়ার পরও নয়। একাধিকবার দল গঠনে সমালোচনার, মুখে পড়েছিলেন। অকল্যান্ডেও তাই ঘটল। টি২০ সিরিজে রানের মধ্য়ে থাকা মণীশ পাণ্ডেকে বসিয়ে একদিনের সিরিজে খেলানো হচ্ছে কেদার যাদবকে। আগের ম্যাচে কেদারের পারফরম্যান্স সেভাবে পরিলক্ষিত না হলেও প্রয়োজনের মুহূর্তেই ফের একবার ডাহা ফেল তিনি।
৬ নম্বরে নেমে কেদারের ব্যাট থেকে এলো ২৭ বলে ৯ বল! যে সময় ক্রিজে এসেছিলেন তিনি তা পুরোটাই ধোনির আদর্শ মঞ্চ। দলকে ফিনিশিং লাইনে ছুঁইয়ে দেয়ার চ্যালেঞ্জ। তবে তিনি দেখিয়ে দিলেন ধোনি তো দূর কী বাত, মণীশ পাণ্ডেও নন তিনি। স্রেফ ক্রিকেটীয় পারফরম্যান্স বিচার্য হলে কেদারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হওয়া উচিত শনিবারের অকল্যান্ডই।
প্রথম ৫ ওভারের মধ্যেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলার পরে পুরো চাপই এসে পড়েছিল মিডল অর্ডারের উপরে। সেই চাপই সামলাতে ব্যর্থ কোহলিরা। ২৫ বলে ১৫ রান করে কোহলি ফিরলেন টিম সাউদির বলে! একদিনের ক্রিকেটে সাউদিই কোহলিকে সবথেকে বেশিবার আউট করলেন, ৬বার।
টানা ভালো খেলে চলা লোকেশ রাহুল এদিন ল অফ অ্যাভারেজের শিকার। ৮ বলে ৪ করার পরে তিনি ফিরলেন গ্র্যান্ডহোমের বলে। আয়ারাম গয়ারামের তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন কেদারও। মাঝে শ্রেয়স নিজের জাত চিনিয়ে ৫৭ বলে ৫২ করলেও দলের এদিনের জয়ে তা যথেষ্ট ছিল না।
১৫৩ রানে ৭ উইকেট হারানোর পরে নভদীপ সাইনিকে নিয়ে মরিয়া লড়াই চালাচ্ছিলেন জাদেজা। নভদীপ অপ্রত্যাশিতভাবে ৪৭ বলে ৩৯ করেও যান। তবে চাপের ম্যাচে আর বেশিক্ষণ টানতে পারেননি উঠতি তারকা পেসার।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে এদিনই বোলিংয়ে অভিষেক ঘটল ৬ ফুট ৭ ইঞ্চির পেসার কাইল জামেসনের। অভিষেকেই নজর কাড়লেন তিনি।
টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে এদিন শুরুটা ভালোই করেছিল কিউইরা। ওপেনিং পার্টনারশিপে মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলাস ৯৩ তুলে দিয়েছিলেন। এরপর নিকোলাস হাফসেঞ্চুরির ঠিক আগে ব্যক্তিগত ৪১ রানে আউট হয়ে গেলেও দলকে টানতে থাকেন গাপটিল।
রান আউট হওয়ার আগে গাপটিল ৭৯ বলে ৭৯ করে যান। এরপরেই বিপর্যয় নেমে এসেছিল ব্ল্যাক ক্যাপসদের ইনিংসে। ২ উইকেটে ১৪২ থেকে চাহল-জাদেজাদের দাপটে ১৯৭/৮ হয়ে গিয়েছিল। ৫৫ রানের মধ্যে ৭ উইকেট খুইয়ে বিপর্যয়ের সামনে পরে যায় তারা। সেখান থেকে রস টেলর ও নিউজিল্যান্ডের হয়ে অভিষেকে ব্যাট করতে নামা জামেসন এর ২৪ বলে ২৫ রানে ভর করে ২৭৩ অবধি পৌঁছয় নিউজিল্যান্ড।
প্রথম ওয়ানডেতে বসানো হয়েছিল চাহলকে। দ্বিতীয় ম্যাচে কুলদীপের জায়গায় সুযোগ পেয়েই কাঁপিয়ে দিলেন তারকা স্পিনার। ১০ ওভারে ৫৮ রান খরচ করলেও ৩ ব্যাটসম্যানকে ফেরত পাঠান তিনি। পাশাপাশি ২ উইকেট নিয়েছেন শার্দূল ঠাকুরও। তবে বুমরাহকে নিয়ে ভারতের চিন্তা রয়েই গেল। ১০ ওভারে ৬৪ রান দিয়ে একটাও উইকেট পাননি তিনি।
যাইহোক, ফিনিশার ধোনি, আর ওপেনার রোহিতের অনুপস্থিতিতেই ভারত সিরিজ হারাল অকল্যান্ডে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস