নিউইয়র্কে বাঙালীদের অন্যতম সামাজিক সংগঠন বাংলা ক্লাব ইউএসএ ইনক’র পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৭ ফেব্রুয়ারী শনিবার। ব্যাপক আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ঐতিহ্যবাহী পিঠার সমন্বয় ঘটিয়ে এদিন সন্ধ্যায় ব্রঙ্কসের নিরব পার্টি সেন্টারে পিঠা উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার সংষ্কৃতির ধারক এ পিঠা উৎসবটি পরিণত হয় বাঙালীদের মিলন মেলায়। উচ্চারিত হয় বাঙালী সংস্কৃতির জয় গান।
পিঠা উৎসবে বিভিন্ন স্বাদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক পিঠার প্রাচুর্য দেখা যায়। দেশীয় সাজে সজ্জিত হয়ে বাংলা ক্লাব পরিবার হাতে তৈরী বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানান আকৃতি, নানান স্বাদ আর রঙের পিঠা নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। উৎসবে বাসায় তৈরী পিঠা আনার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন যেন আয়োজকরা। আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ঐতিহ্যবাহী সব পিঠাই তাদের এ উৎসবে ছিল। ভাপা পিঠা, পাটিশাপটা পিঠা, চিতুই পিঠা, জিলাপী পিঠা, রসভরা পিঠা, পুলি পিঠা, নক্সি পিঠা, কলা পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা, ভালবাসার পিঠা, বুলশা, বিবিখানা, তেলেপিঠা, চানার সন্দেষ, গজাগজা, পাকুনপিঠা, মাংশেরপিঠা, নারিকেল পুলি, নিমকি, চুপতি পিঠা, ঝালপিঠা, সাবুদানার, ডালপুরি, ডালপাকন সহ হরেক রকম মজার মজার পিঠার মৌ মৌ সুবাসে চারদিক ভরপুর করে রাখে। সারি সারি পিঠার এ উৎসব ক্ষনিকের জন্য হলেও বাংলাদেশের শীতকালীন দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয় প্রবাসীদের। শীত কালে গ্রামের বাড়িতে ভোর বেলার খেজুরের রসের সাথে নানা রকম পিঠার স্বাদ ভুলার নয়। নষ্টালজিক অনুভুতি কিছঝুটা হলেও নিউইয়র্কের বাঙালিরা অনুভব করেছে এদিন। এসব পিঠা অতিথিদের জন্যে ছিল ফ্রী। গভীর রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান উপভোগ করেন আগত সবাই। উৎসবে যোগ দেয়া হলভর্তি অতিথিদের তৃপ্তি মিটিয়েও পিঠার বিপুল ভান্ডার থেকে যায় অনুষ্ঠানে শেষে। অনেকে বাড়ি নিয়ে যান স্বাদের সেসব পিঠা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ। সংগঠনের সভাপতি আবুল কালাম পিনুর সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ সভাপতি মো. মমিনুল ইসলাম ও মো: কামরুজ্জামান বাবু, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন. সাংস্কৃতিক সম্পাদক সোনার বলাই, প্রচার সম্পাদক শাহ মনজুরুল হক চুন্নু, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সবুজ, সহ কোষাধ্যক্ষ ফয়সাল আহমেদ, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট আবদুল বাছির খান, খবির উদ্দিন ভূইয়া, আখতারুজ্জামান হ্যাপি, লিপি আক্তার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও মুনাজাত পরিচালনা করেন কামাল আহমেদ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম এবং সাপ্তাহিক জনতার কন্ঠ’র সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, আজকালের প্রতিনিধি শামিম আহমেদ, সংগঠনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, বখতিয়ার রহমান খোকন, মো. খলিলুর রহমান, এ ইসলাম মামুন, মীর সারোয়ার আলী, রুহুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মামুনুর রশীদ, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট এস আর লিংকন, রফিকুল ইসলাম, আফজালুর রহমান, মমতাজ উদ্দিন, পল্লব সরকার, মোতাসিন বিল্লাহ তুষার সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বাংলা ক্লাব ইউএসএ’র সদস্যরা স্বপরিবারে অংশ নেন। মহিলা ও নতুন প্রজন্মের উপস্থিতিতে এটি পরিনত হয় ক্লাব সদস্যদের মিলন মেলায়।
উৎসবমুখর পরিবেশে প্রধান অতিথি কামাল আহমেদ বাংলা ক্লাব ইউএসএ’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন খেলা-ধূলারও আয়োজন ছিল। বিজয়ীদের জন্য ছিল পুরস্কার। সঙ্গীত পরিবেশন করেন হেলাল উদ্দিন সহ অন্যান্যরা। দর্শকরা প্রাণভরে উপভোগ করেন মনোজ্ঞ এ আয়োজন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি আবুল কালাম পিনু এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমেরিকায় জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালী সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই এ আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। সকলের আন্তরিক সহযোগিতার এই আয়োজন সফল হয়েছে। তারা এ আয়োজনে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। অথিতিরা মনোমুগ্ধকর এ আয়োজনের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করেন। তারা বলেন, প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মকে দেশের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করাতে বাংলা ক্লাব’র এ আয়োজন অতুলনীয়।