দুই হাজার যাত্রী নিয়ে একটি প্রমোদ তরীকে অবশেষে কম্বোডিয়ার বন্দরে ভিড়তে দেয়া হয়েছে।
জাহাজটি দিনের পর দিন সাগরে ভেসে ছিলো, কোনো বন্দরই এটিকে ভিড়তে দিচ্ছিল না। কারণ তাদের সন্দেহ ছিলো এই জাহাজের যাত্রীরা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে।
‘দ্য ওডিসি অব দ্যা এমএস ওয়েস্টারড্যামকে’ পাঁচটি দেশের বন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
আরেকটি প্রমোদ তরীকে জাপানে কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে। কারণ এটিতে দুই শ’ সংক্রমিত যাত্রী রয়েছে। কিন্তু ওয়েস্ট্যারড্যামের দুই সহস্রাধিক যাত্রী ও ক্রুর কেউই সংক্রমিত নন।
গত বুধবার প্রমোদ তরীটি ব্যাংককের বন্দরে ভিড়তে গেলে এটিকে অনুমতি দেয়া হয়নি।
থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ এটিকে এসকর্ট করে নিয়ে যায় এবং থাই উপসাগরে দিয়ে আসে। পরে জাহাজটি দিক বদল করে কম্বোডিয়ার দিকে ধাবিত হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে জাহাজটি অবশেষে কম্বোডিয়ার সিহানুকভিল বন্দরে নোঙর করে।
আমেরিকান নাগরিক অ্যাঞ্জেলা জোনস বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আমরা কতবার ভেবেছি, এই বুঝি বাড়ি যেতে পারবো আর সেইসব মুহূর্তে আমাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।”
“আজকের সকালটাতে যখন ডাঙার দেখা পেয়েছিলাম, সেটা ছিল একটি শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত। আমি ভাবছিলাম, এটা কি সত্যি!”
আমেরিকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হল্যান্ড আমেরিকা লাইন পরিচালনা করে দ্য ওয়েস্টারড্যামকে। এটি গত ১ ফেব্রুয়ারি হংকং থেকে যাত্রা শুরু করে।
এটিতে ১,৪৫৫ জন যাত্রী এবং ৮০২ জন ক্রু ছিলেন। দুই সপ্তাহ ধরে সাগরে প্রমোদবিহার করার কথা ছিল জাহাজটির।
১৪ দিনের এই বিহার শেষ হয়ে যাওয়ায় জ্বালানী ও খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
থাইল্যান্ড ছাড়াও জাপান, তাইওয়ান, গুয়াম ও ফিলিপিন্স এর আগে বন্দরে ভিড়তে দেয়নি জাহাজটিকে।
“এতোবার বন্দরে ভিড়বার মতো মুহূর্ত এসেছে এবং আমরা যখন ভেবেছি এই বুঝি আমরা বাড়িতে ফিরতে পারবো, আর ঠিক তখনোই আমাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে”, বলছিলেন মিজ জোনস।
জাহাজের ক্যাপ্টেন ভিনসেন্ট স্মিট বলেছেন, জাহাজটিকে সিহানুকভিলের বাইরে নোঙর করা হয়েছে, যাতে কর্তৃপক্ষ আগে জাহাজটির যাত্রী ও ক্রুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারে।
এরপরই রাজধানী নমপেন হয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে যাত্রীরা।
কম্বোডিয়ার মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, তারা জাহাজের মার্কিন নাগরিকদের সাহায্য করতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে।
জাহাজটিকে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্তের জন্য কম্বোডিয়ার প্রশংসা করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।
জাহাজটিতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হতো এবং এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোনো অস্তিত্ব সেখানে মেলেনি।
ওদিকে জাপানের ইয়োকোহামায় নোঙর করা প্রমোদতরীতে এখন পর্যন্ত দুই শ’ সংক্রমিত ব্যক্তি পাওয়া গেছে।
এর ফলে চীনের বাইরে সবচেয়ে বৃহত্তম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত স্থানে পরিণত হয়েছে ‘দ্য ডায়মন্ড প্রিন্সেস’ নামের প্রমোদতরীটি।
জাহাজের সব যাত্রীকে এখনো পরীক্ষা করা হয়নি। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
বৃহস্পতিবারই মোট আক্রান্তের সংখ্যায় যোগ হয়েছে ৪৪ জন।
হংকং থেকে ছাড়া আরেকটি প্রমোদ তরীকেও কয়েকদিন ধরে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছিলো, আর এই জাহাজের একজন পূর্ববর্তী যাত্রী করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
এখন অবশ্য সেই জাহাজের সব যাত্রীকেই নামতে দেয়া হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি