দেশে নারীর ক্ষমতায়নের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, এখনো দেশে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে, নারী শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে, তাহলে কোথায় নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষনের ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা ও অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি স্পিকার ও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে একথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী নিজেকে, স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতাকে হাতের ইশারায় দেখিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে রওশনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
জবাবে রওশন এরশাদ বলেন, এটা তো ভাগ্যক্রমে হয়ে গেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী আপনি নির্ধারিত, সকলে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না, কিন্তু আমি তো ভাগ্যক্রমে হয়ে গেছি। আমার বদলে অন্য কেউও হতে পারতো। এটা দেখিয়ে তো নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে বলা যাবে না, কেননা, আমরা সংসদে মাত্র কয়জন নারী, প্রায় সকলেই তো পুরুষ। তাছাড়া প্রতিনিয়ত গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র নারীরা নির্যাতিত, ধর্ষিত, অত্যাচারিত হচ্ছে, তাহলে এটাকে কি বলা চলে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে?
রওশন এরশাদ পরিকল্পনা মন্ত্রীর সমলোচনা করে বলেন, দেশে কি দুর্ভীক্ষ চলছে? যে আমাদের কচুরী পানা খেতে হবে? আমাদের পরিকল্পণামন্ত্রী মান্নান সাহেব মানুষকে কচুরী পানা খেতে উপদেশ দিয়েছেন। আমি এখানে কিছু কচুরীপানা নিয়ে এসেছিলাম, ওনাকে দিতাম। গরুতো ঘাস খায়, ঘাসেও ভিটামিন রয়েছে, তাহলে আমরা কেন ঘাস খাচ্ছি না।
রওশন এরশাদ বলেন, দেশে ব্যাংক লুটপাট হচ্ছে, হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী তো এটা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ব্যাংকে কোনো টাকা নেই, ব্যাংক গুলোতে লিকুইড মানি নেই। তিনি দেশে ব্লাক মানি সাদা করার জন্য উদ্যোগ নেবার আহ্বান জানান।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংসদে অনুপস্থিত থাকায় সমালোচনা করে তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী তো প্রায় বিদেশে থাকেন, তাকে সংসদেও আমি দেখি না। তাহলে কিভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে?
তিনি বলেন, একজন শিক্ষামন্ত্রী বদল হয় আর তার সাথে সাথে শিক্ষা ব্যবস্থা যদি পরিবর্তন হয় তাহলে তো অরাজকতা দেখা দেবে। আগে শিক্ষার্থীদের জন্য গাইড বই ছিল, বর্তমানে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিভাবে গাইড পাবে, শিক্ষকরাও কিভাবে তাদের গাইড করবে, এধরনের পরিবর্তন হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় নিশ্চয় অরাজকতা দেখে দেবে। তবে শিক্ষামন্ত্রী না থাকায় তা বলে তো কোনো লাভ নেই। তিনি শিক্ষার প্রকৃত মান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান ছাত্র ছাত্রীরা রাত জেগে ফেসবুক দেখে, তাদের পড়াশুনা হচ্ছে না, সারা রাত ফেসবুক দেখে চোখে কালি পড়ে যাচ্ছে। যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাতে ইন্টারনেট বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
ফলমুল শাক সবজীতে ফরমালিন মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেণ, বাজারে সব ফলমুল শাক সবজি বিষাক্ত, ফরমালিনযুক্ত। তিনি বলেন, রাজধানীতে সর্বত্র মশা, কথা বলতে গেলে মুখের মধ্যে মশা ঢোকে, সিটি করপোরেশন তো কোনো কাজ করে না। মশা মারার জন্য কর্মী থাকলেও কেউ কাজ করে না। তাহলে মশা মরবে কিভাবে। আবার ডেঙ্গু তো হবে, যদি এমন মশা থাকে তাহলে আবার ডেঙ্গু তো আসবে। এভাবে চললে আমরা কেন ট্যাক্স দেব। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে একদিন গোপনে বের হয়ে জনগণ কতটা অসুবিধা- দুরবস্থার মধ্যে বসবাস করছে তা দেখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ওয়াসার পানিতে এত নোংরা যে খাওয়া তো দূরের কথা আপনি গোসল করতেও পারবেন না। অথচ মানুষ এই পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।