স্বাধীনতা দিবসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটিয়ে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’র নামফলক উম্মোচন করা হলো বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে। উল্লেখ্য, দুই দশকেরও অধিক সময় যাবত বাংলাদেশি বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত ৭৩ স্ট্রিটের নামকরণ বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ অথবা বাংলাদেশ স্ট্রিট করার দাবি জানানো হচ্ছিল। সর্বশেষ গত বছর বৈশাখী মেলায় জেবিবিএ কর্মকর্তা ফাহাদ সোলায়মানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এলাকার সিটি কাউন্সিলম্যান শেকর কৃষ্ণান অঙ্গিকার করেছিলেন দাবিটি পূরণের। সেই ধারাবাহিকতায় সিটি কাউন্সিলে শেকর কৃষ্ণান ৭৩ স্ট্রিটের নয়া নাম ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’র প্রস্তাব করেন এবং তা সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়। এবং নামফলক উম্মোচনের দিনটি নির্ধারণ করা হয় বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা দিবসে। জমকালো অনুষ্ঠানে ফলক উম্মোচনের সময় একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের অবয়ব তৈরি হয়েছিল। উল্লাসে মেতে উঠেন উপস্থিত সকলে। এক পর্যায়ে কাউন্সিলম্যান শেকরকে ঘাড়ে উঠিয়েছেন।
উল্লেখ্য, উদ্বোধনী বক্তব্যে এই কাউন্সিলম্যান অকৃত্রিমভাবে উল্লেখ করেন যে, এই এলাকার বাংলাদেশিরা আমার এতটাই ঘনিষ্ঠ যে, আমি সবসময় তাদের ঘাড়ে ভর করে কোন মহৎ কাজে দ্বিধা করি না। উল্লেখ্য, শেকর হচ্ছেন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে প্রথম ভারতীয় আমেরিকান এবং দ্বিতীয় দক্ষিণ এশিয়ান। স্ট্রিটের নামফলক উম্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যের সময় কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং সকলকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এবং রমজানের শুভেচ্ছা দিয়ে বলেন, আমি সম্মানীত বোধ করছি কাউন্সিলম্যান শেকরের এই কাজের জন্যে। এজন্য সকলেই তাকে করতালিতে অভিনন্দন জানানো দরকার। কারণ, এই কাউন্সিলম্যান এলাকার সামগ্রিক কল্যাণের অভিপ্রায়ে প্রায় দিনই আমার সাথে মিলিত হচ্ছেন। আমরা এলাকাবাসীর জন্যে বিশেষ করে বাংলাদেশিদের কল্যাণে সর্বোত্তম দায়িত্বটি পালনে সক্ষম হচ্ছি-তা নিশ্চিত হতে চান। উল্লেখ্য, জ্যাকসন হাইটস, উডসাইড এবং ইস্ট এলমহার্স্ট এলাকাটিও কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং-এর আওতায় এসেছে সর্বশেষ নির্বাচনী এলাকা পুনর্গঠন পরিক্রমায়।
কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের অন্যতম সদস্য গ্রেস মেং বলেন, আমরা সকলেই জানি যে,নিউইয়র্ক সিটিতে সর্বাধিক সংখ্যক বাংলাদেশির বসতি গড়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশির বাস কুইন্সে এবং তারা নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে ওয়াশিংটন ডিসিতে আমাদেরকে উজ্জীবিত রাখেন। আজ আমরা সমবেত হয়েছি অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের। বাংলাদেশ হচ্ছে একটি গর্বিত রাষ্ট্র যেখানে বর্ণবিদ্বেষের লেশমাত্র নেই, মানবিকতার সংস্কৃতি, অর্থনীতির প্রসার ঘটছে, এবং উজ্জ্বল একটি ভবিষ্যতের পথে হাঁটছে। দেশটি বহুক্ষেত্রেই অবিশ্বাস্যরকমের অগ্রগতি অর্জন করেছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বেশকিছু সেক্টরে অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নে দৃঢ় সংকল্পেরই প্রমাণ দৃশ্যমান হচ্ছে।
গ্রেস মেং বলেন, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্কে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে সাম্প্রতিক বছরসমূহে। এরফলে যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু কোম্পানীর বাংলাদেশে বিপুল বিনিয়োগও ঘটেছে। উল্লেখ্য,গত বছরটি ছিল ইউএস-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব। সে সময় দ্বি-পাক্ষিক অর্থনীতি, বাণিজ্যিক এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে উচ্চ পর্যায়ের বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি এবং ঢাকায়। গ্রেস মেং অবশ্য উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্যে আরো অনেক কিছু করার আছে চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে। একইসাথে পরবর্তী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বার্থেও আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
শ্রমিক নেতা মিলন রহমান এবং সিটি মেয়রের এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মানের যৌথ সঞ্চালনায় উদ্বোধনী পর্বে আরো বক্তব্য দেন এলাকার স্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান ক্যাটালিনা ক্রুজ, জেসিকা গঞ্জালেজ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কম্যুনিটির নেতৃবৃন্দ উচ্ছ্বাস করেন স্বাধীনতা দিবসে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ প্রাপ্তির আনন্দে। এ সময় জেবিবিএর প্রেসিডেন্ট হারুন ভুঁইয়া, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, এবিপিসির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, কম্যুনিটি বোর্ড মেম্বার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, কুইন্স ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ, বিজনেস লিডার ড. মাহাবুবুর রহমান টুকু, বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আনন্দানুভূতি প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, অর্জনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তাহলে বহুজাতিক এ সমাজে বাংলাদেশীদের অধিকার সুসংহত হবে। উল্লেখ্য, এর আগে কুইন্সের হিলসাইড এভিনিউতে লিটল বাংলাদেশ, ওজোনপার্কে বাংলাদেশ ওয়ে এবং ব্রুকলীনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডকে ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসেবে নতুন নামকরণের ‘নামফলক’ উম্মোচন করা হয়েছে।