শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গু এবার আরো ভয়াবহ হতে পারে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ২৩০ বার

রাজধানীজুড়ে মশার ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। সন্ধ্যা হলেই মশার অত্যাচারে টেকা দায় হয়ে গেছে। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই একই অবস্থা। দিন-রাতে সমানতালে মানুষের রক্ত চুষছে মশা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নামকাওয়াস্তে কিছু কর্মসূচি পালন করলেও মশা নিধন করতে পারছে না।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির তুলনায় বর্তমানে মশার উপদ্রব বেশি। গত বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এ তিন মাসে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক ছিল। এ বছরও একই সময়ে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজধানীর সর্বত্রই এখন মশা আর মশা। রাত যত বাড়তে থাকে মশার যন্ত্রণাও তত বাড়ে। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে বাসায় মশারির ভেতরে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক ব্যাট কোনো কিছু দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মশা। এ কারণে বর্তমানে শিক্ষার্থী বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে। ঢাকায় সম্প্রতি নতুন দুই সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তারা এখনো দায়িত্ব নেননি। দক্ষিণে আগের মেয়র এবং উত্তরে প্যানেল মেয়র দিয়ে কার্যক্রম চলছে। এ কারণে মশা নিয়ন্ত্রণের কর্মকাণ্ডও অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হয়ে রয়েছে।

দক্ষিণ সিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলা এলাকার গৃহবধূ লিমা খাতুন বলেন, ঘরে ছোট শিশু রয়েছে। এ কারণে রাতদিন সব সময়ই মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। আর সন্ধ্যা হলেই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করতে হয়। তাতেও কাজ হয় না। রাত হলে ঘরে টেকা যায় না। কোথাও বসলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা কামড়াতে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটিতে জরিপ চালিয়েছে। এতে দুই সিটি করপোরেশনের ১১টি ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১, ১২, ১৬, ২৮ ও ৩১ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। উত্তরে ৪১টি ও দক্ষিণের ৫৯টি ওয়ার্ডে এ জরিপ পরিচালিত হয়েছে।

সম্প্রতি উত্তর সিটির বিভিন্ন অঞ্চলে অ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) পক্ষ থেকে পাওয়ার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, গত আগস্ট মাসে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। সারা দেশে এই এক মাসেই প্রায় ৫৩ হাজার রোগী ভর্তির রেকর্ড করা হয়, যার বেশির ভাগই ছিল রাজধানীতে। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এ তিন মাসে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক ছিল এবং ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরও একই সময়ে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার মশার উপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা করে থাকেন। নয়া দিগন্তকে বলেন, গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে এক লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে মশার যে রকম উপদ্রব ছিল বর্তমানে তার থেকেও বেশি রয়েছে। এ জন্য এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না যায় তা হলে জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু মৌসুমে ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসজনিত রোগ; সে জন্য গত বছর যারা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের এ বছর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। কিন্তু বাকি যারা নগরবাসী রয়েছেন তাদের জন্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা: বেনজির আহমেদ বলেন, জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তা হলে এ বছরও ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটতে পারে।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, আমরা গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই। কোথায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে, কোথায় এদের ঘনত্ব বেশি, কোন বয়সের মানুষ বেশি আক্রান্ত হয় এগুলো আমরা জানি। তাই এসব তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে আমরা বছরের শুরু থেকেই পুরোদমে কাজে নেমেছি। এ দিকে এডিস মশা নির্মূলে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে আজ মঙ্গলবার থেকে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
বেলা সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডির কলাবাগান মাঠ থেকে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com