বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান আইনজীবীকে ‘কুপিয়ে হত্যা করল’ ইসকন সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল বন্ধ ঘোষণা অহিংস গণঅভ্যুত্থানের আহ্বায়কসহ ১৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ চিন্ময়কে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে ভারতের বিবৃতি মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

এক সপ্তাহে পুঁজি ফিরেছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২১ মে, ২০২৩
  • ৫১ বার

দেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে কেনার চেয়ে বেশি পরিমাণ বিক্রির পর এবার পুঁজিবাজারে শেয়ার কিনতে সক্রিয় হয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, এপ্রিল মাসে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চেয়ে শেয়ার কিনেছে বেশি। ফলে পুঁজিবাজারে তাদের নিট বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এপ্রিলে বিদেশীদের নিট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটি টাকা, যা মার্চ মাসে ছিল মাত্র ৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ১৩১ কোটি টাকা শেয়ার কিনেছে, এর বিপরীতে বিক্রি করেছে মাত্র ৫০ কোটি টাকার শেয়ার।

২০২২ সালের এপ্রিলে বিদেশীদের শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩০৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে শেয়ার কিনেছিল ৬৪ কোটি টাকা আর শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৪৪ কোটি টাকা। গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

রিচার্ড বলেন, মূলত ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতা শুরুর পর বিদেশীদের মূলধন উত্তোলন বেড়ে যায়, যাতে পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়েছে। এখন ডলার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল থাকায় তারা আবার পুঁজিবাজারে আসছে।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার নিয়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখন আস্থা বাড়ছে, ফলে তারা ভালো রিটার্ন পাওয়ার আশায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, এটা দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের জন্য খুবই ভালো।

করোনা মহামারী ও সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় বেশিরভাগ বিদেশী বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে।

পাশাপাশি মার্কিন ফেডারেল সুদহার বাড়ানো হয়েছে, যার কারণে ডলার আমেরিকামুখী হয়েছে। এতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছিল।

তবে গত মার্চ থেকে ডলারের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারী ফিরে আসতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির ব্যবসা খারাপ হয়েছে। তবে কাঁচামালের দাম বিশ্ববাজারের হ্রাস পাওয়া ও ডলার সঙ্কট কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ভালো হয়েছে। দেশীয় মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানি ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে সাধারণত বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ রয়েছে বেশি।

ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাস বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কেনার চেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে। তবে মার্চ ও এপ্রিলে তারা বিক্রির চেয়ে শেয়ার কিনেছে বেশি। যদিও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল বেশি। ফলে চলতি বছর পরপর দুই মাস পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিট বিনিয়োগ ‘পজিটিভ’ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিট বিনিয়োগ ছিল ‘নেগেটিভ’। অর্থাৎ তারা শেয়ারে বিনিয়োগের চেয়ে বিক্রি করে মূলধন তুলে নিয়েছে অনেক বেশি।

দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা কমে আসায় পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে বলে মনে করেন মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান।

তিনি বলেন, বিদেশীরা সবসময় শেয়ারের প্রেডিকটিবিলিটির (অনুমানযোগ্যতা) ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করে। দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায় ডলারের দাম নিয়ে বড় অনিশ্চয়তা ছিল, যা এখন কিছুটা স্থিতিশীল।

বিশ্ববাজারের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তালিকাভূক্ত অনেক কোম্পানির ব্যবসা ভালো হয়নি। তবে ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে বহুজাতিক কোম্পানিসহ অনেক কোম্পানির ব্যবসা ভালো হয়েছে। যার কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে ডিএসইতে মোট টার্নওভার ছিল ১০ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা, যেখানে কি-ইনডেক্সটি ১২ দিনের জন্য বৃদ্ধি এবং ৬ দিনের জন্য হ্রাস পায়।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন দেশের রোডশো এবং ব্রান্ডিংয়ে বাংলাদেশ ও পুঁজিবাজারের ভালো দিকগুলো তুলে ধরায় প্রবাসী ও বিদেশীদের আস্তে আস্তে বাংলাদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আমাদের বাজারে যেহেতু পিই (প্রাইস আর্নিংস) রেশিও কম, তাই এখান থেকে আরো বেশি রিটার্ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি সায়েদুর রহমান বলেন, করোনার পর থেকেই বিদেশী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার থেকে মূলধন তুলে নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। পরবর্তীতে ডলারের দাম নিয়ে সঙ্কট তৈরি হলে তারা সাইড লাইনে চলে যায়।

তিনি বলেন, এখন ডলারের মূল্য মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। পুঁজিবাজারের প্রাইস আর্নিং রেশিও পার্শ্ববর্তী যেকোনো দেশের তুলনায় কম। মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দামও কম রয়েছে। ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে লাভজনক মনে করছে। তিনি মনে করেন, দেশের পুঁজিবাজার যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে আগামীতে আরো বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে।

উল্লেখ্য, ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামী ব্যাংক, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, বিএসআরএম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানিতে বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে।

এপ্রিল মাসের হিসাব অনুযায়ী, ব্র্যাক ব্যাংকে বিদেশীদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ৩৩.৪০ শতাংশ। এছাড়াও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে ২৮.৯৫, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসে ২৭.৭৩, রেনাটায় ২২.৭৩ এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজে ২৩.২৫ শতাংশ বিনিয়োগ আছে।

এ দিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় গত এক সপ্তাহে তিন কর্মদিবস উত্থান আর দুই কর্মদিবস দরপতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বিদায়ী সপ্তাহে ১৪ মে থেকে ১৮ মে মোট পাঁচ কর্মদিবস লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে দাম কমার বিপরীতে বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। তাতে উভয় বাজারে বেড়েছে সূচক।

ফলে গত এক সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন (পুঁজি) ফিরেছে ৪ হাজার ৫৩১ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৫ টাকা। সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা গেছে। প্রায় একই চিত্র দেশের অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)।

গত সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬৬ হাজার ১০৬ কোটি ৭৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩৭১ টাকা। আর শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১১ মে) লেনদেন শেষে মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৩৭ কোটি ৮৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৬ টাকা। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে পুঁজি বেড়েছে ৪ হাজার ৫৩১ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৫ টাকা।

এর আগের সপ্তাহের মূলধন কমেছিল ২১০ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ৭০৩ টাকা। কিন্তু তার আগের সপ্তাহে মূলধন বেড়েছিল ২৫৯ কোটি ৮০ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬০ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১০৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ৭৪টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ২০৫টির। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছিল ১১৮টির, কমেছিল ৪৭টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ২২৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৭ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৬৮ পয়েন্টে ও ডিএস-৩০ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এ সপ্তাহে ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ার লেনদেন হয়নি দুই শতাধিক কোম্পানির। তারপরও বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার ৬৩৮ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৯৫৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯১ টাকা। অর্থাৎ ২৭৭ কোটি ৬৭ লাখ ২৮ হাজার ৯৫৩ টাকার শেয়ার লেনদেন কমেছে, শতাংশের হিসাবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের শেয়ার। এরপর যথাক্রমে লেনদেন হয়েছে, জেমিনি সি ফুড, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের শেয়ার, রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং, পেপার প্রোসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, অগ্নি সিস্টেমস, আমরা নেটওয়ার্কস এবং ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট পিএলসির শেয়ার।

দেশের অন্য পুঁজিবাজার সিএসইতে লেনদেনেও প্রায় একই চিত্র ছিল। বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ৫৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে লেনদেন হয়েছে ৬৭ কোটি ৭২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪৩ কোটি ৮৯ লাখ ৪২ হাজার ৫৬৯ টাকা।

লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৮টির, কমেছে ৬৫টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com