সব মানুষ সমান নয়। সম্মান, মর্যাদা, যোগ্যতা ও শক্তিমত্তায় তারা এক নয়। ফলে পরস্পরের সহযোগিতা ছাড়া মানবসমাজ টিকতে পারে না। পবিত্র কুরআনের ভাষায়- মানুষের মধ্যে এই উঁচু-নিচু ভেদ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ যাকে যা যোগ্যতা দিয়েছেন তা দিয়েই মানুষকে পরীক্ষা করতে চান, যাতে এর প্রতিদান আখিরাতে যথাস্থানে যথাসময়ে দিতে পারেন। সুতরাং কারো ধনী হওয়া মানে এই নয় যে, তার যোগ্যতা আছে বলেই ধনী হয়েছে এবং আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।
আবার কারো নিঃস্ব থাকা মানে এই নয় যে, তিনি অযোগ্য এবং আল্লাহ তার প্রতি বিরাগভাজন। পবিত্র কুরআনের সূরা আনআমের ১৬৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর তিনি সে সত্তা, যিনি তোমাদেরকে জমিনের খলিফা বানিয়েছেন এবং তোমাদের কতককে কতকের ওপর মর্যাদা দিয়েছেন, যাতে তিনি তোমাদের যাকে যা দিয়েছেন, তা দিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। নিশ্চয় তোমার রব দ্রুত শাস্তিদানকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
এ জন্যই সব শক্তিমানের উচিত আল্লাহর পক্ষ থেকে তার শক্তিপ্রাপ্তির শুকরিয়াস্বরূপ তার চেয়ে কম শক্তিমানকে অত্যাচার না করে বরং দুর্বলের অধিকার হিসেবে সহযোগিতা করা। ইসলামের এই দর্শনের প্রতি মিল রেখেই ইসলামী সমাজে আবশ্যক হয়েছে জাকাত ব্যবস্থা, উৎসাহ দেয়া হয়েছে দান-খয়রাতকে। মানুষ তার আয়ের একটি অংশ জাকাত বা দান হিসেবে যোগ্য গ্রহীতাদের মধ্যে বিলি করতে চায়। কিন্তু অনেক সময় পরিবেশ ও দানের যোগ্য পাত্র বাছাই করতে না পারায় পুরো দান বা জাকাত বিফলে যায়।
সর্বোত্তম ও চিরস্থায়ী দান হলো সদকায়ে জারিয়া। এটি স্থায়ী ও অবিনিময়যোগ্য দান। এর অন্যতম উদ্দেশ্য সামাজিক ও সামষ্টিক পরোপকার। পরোপকার সাধারণত দুইভাবে করা যায়- ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বৃহত্তরভাবে পরোপকার করা যায়। যেমন- কেউ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করল আর কেউ শুধু একজন রোগীকে সেবা দিলো। হাসপাতালের মাধ্যমে বহু রোগীর সেবা করা সম্ভব। রাসূল সা: বলেছেন, ‘দু’টি জিনিস মানুষের উন্নতির উপকরণ। একটি উত্তম সন্তান; অন্যটি সদকায়ে জারিয়া।
‘যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমল স্থগিত হয়ে যায়, কেবল তিনটি আমল ছাড়া- সদকায়ে জারিয়া, কিংবা এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় কিংবা এমন সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস-১৬৩১)
‘একজন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আমলনামায় যা থেকে নেকি যোগ হবে তা হলো- যদি সে শিক্ষা অর্জনের পর তা অপরকে শিক্ষা দেয় ও প্রচার করে, অথবা সৎ সন্তান রেখে যায়, অথবা ভালো বই রেখে যায় অথবা মসজিদ নির্মাণ করে দেয়, অথবা মুসাফিরের জন্য সরাইখানা নির্মাণ করে, অথবা খাল-নদী খনন করে দেয় অথবা জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য সম্পদ থেকে সদকা করে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-২৪২)
রক্ত, কিংবা অঙ্গ দান করা, বৃক্ষরোপণ, মানবতার কল্যাণে সহায়-সম্পদ ওয়াক্ফ করা, এতিমের লালন-পালন, এলাকায় পানীয় জলের জন্য খাল বা কূপ খনন, অসহায়-দুস্থ মানুষের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা, কবরস্থানের জন্য জমি দান, কাউকে কুরআন ও দ্বীনি শিক্ষার ব্যবস্থা করা, মুসলমানদের কল্যাণে আসে এমন ইসলামী বই-পুস্তক মুদ্রণ কিংবা বিতরণে সহায়তা করা, অত্যাচারিতের পাশে দাঁড়ানো, ভালো কাজ করা এবং ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া ইত্যাদি সবই সদকায়ে জারিয়া। শুধু মানুষই নয়, আল্লাহর সৃষ্টিজগতের সব সৃষ্টির কল্যাণে যেকোনো কাজই সদকায়ে জারিয়া হতে পারে যদি তা চলমান থাকে। এমনকি নিঃস্বার্থ যেকোনো কল্যাণকর কাজই হতে পারে সদকায়ে জারিয়া।
মানুষ তার সম্পদ এককভাবে এবং সাময়িক সময়ের জন্য ব্যয় না করে তা যদি ট্রাস্ট করে, ওয়ক্ফ করে বা ফাউন্ডেশন নিজে করে কিংবা কোনো ট্রাস্টি সংগঠনকে দিয়ে যান সেটি হয় স্থায়ী এবং সঠিক পদ্ধতি। ঠিক এ কারণেই ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্নভাবে জাকাত দেয়ার চেয়ে এমন প্রতিষ্ঠানকে জাকাত দেয়া উত্তম যারা সরাসরি শরিয়তসম্মত পন্থায় জাকাতযোগ্য লোকদের মধ্যে বিলি করে।
ইসলামে জাকাত বিধানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জাকাত গ্রহীতার সাময়িক অভাব দূর করা নয়; বরং তাকে স্থায়ীভাবে স্বাবলম্বী করা। সাময়িক অভাব দূর করার আরো অনেক পন্থা ইসলামে রয়েছে। যেমন- ফিতরা, কোরবানির চামড়ার টাকা বিলি করা কিংবা দান-খয়রাত। কিন্তু জাকাতের ক্ষেত্রে এভাবে টাকা দিলে হক আদায় হবে না। এখানে জাকাতের টাকা দিয়ে তিনি যদি কর্মক্ষম হন এবং প্রয়োজনীয় পুঁজির সংস্থান করতে পারেন, কাজ করে জীবন নির্বাহ করার মতো হয় তাহলে প্রথমে স্বাবলম্বী হওয়ার মতো টাকাই দিতে হবে। একজনের পক্ষে সম্ভব না হলে কয়েকজন জাকাতদাতা মিলে হলেও তাকে এমন পরিমাণ জাকাত দেয়া উচিত যাতে গ্রহীতা স্বাবলম্বী হন। যেমন কর্মক্ষম একজন রিকশাওয়ালাকে রিকশা কিনে দেয়া। কিন্তু রিকশাওয়ালা যদি অসুস্থ হন তাহলে তাকে সুস্থ করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা খরচ করাই হবে তার জন্য অগ্রাধিকার খাত। একটি গ্রামে যদি ১০ জন জাকাত গ্রহীতা থাকেন, তার চেয়ে বেশি জাকাতদাতাও থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে জাকাতদাতারা যদি সবাই মিলে পরিকল্পনা ও সমন্বয় করে ১০ জন জাকাত গ্রহীতার অভাব দূর করার চেষ্টা করেন তাতে কল্যাণ অনেক বেশি।
ব্যক্তিগতভাবে জাকাত দানকালে শাড়ি, লুঙ্গি, চাল-ডাল ইত্যাদি দেয়ার চেয়ে গ্রহীতাকে টাকা দেয়া উত্তম। কারণ গ্রহীতা হয়তো নগদ টাকায় অন্য আরো একটি বেশি অভাব পূরণ করার স্বাধীনতা পাবে।
জাকাত হলো ধনীর ওপর গরিবের একটি আল্লাহ নির্ধারিত হক। এটিকে আক্ষরিক অর্থে দান বলা যাবে না; বরং বলতে হবে অধিকার আদায়। জাকাত সংগ্রহ ও বিলি-বণ্টনের দায়িত্ব মূলত ইসলামী সরকারের। ইসলামী সরকার না থাকলে এর দায়িত্ব বর্তায় জাকাত সংগ্রহ ও বিলি-বণ্টনের জন্য গঠিত সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের বিত্তবানদের ওপর।
ইসলামে জাকাতের বিধান করাই হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও সমন্বিতভাবে জাকাত আদায় এবং প্রকৃত জাকাত গ্রহীতাকে খুঁজে বের করে সমাজ সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার জন্য। ব্যক্তির পক্ষে প্রকৃত ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জাকাত গ্রহীতাকে বাছাই করা যত কঠিন, প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বাছাই করা তত সহজ। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে যে, জাকাতদাতার নিজের অনেক খাত ও প্রতিষ্ঠানও তো জাকাতযোগ্য থাকতে পারে। আত্মীয় হিসেবে তাদের হক কিভাবে আদায় করা যাবে। এ সমস্যার সমাধান দু’ভাবে করা যায়। প্রথমত, জাকাতদাতা তার জাকাত কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রদানকালে এই বলে পরামর্শ বা নির্দেশনা দিতে পারেন যে, তিনি তার জাকাতের টাকা অমুক অমুক খাতে অমুক অমুক ব্যক্তিকে দিতে আগ্রহী। দ্বিতীয়ত, জাকাতদাতা নিজে প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলেমিশে আরো জাকাতদাতার জাকাত সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানকে জাকাত বিলি-বণ্টনে সহযোগিতা করতে পারেন।
জাকাত আদায় করতে হয় জাকাতযোগ্য ব্যক্তি বাছাই করে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দিয়ে। এ ক্ষেত্রে ইসলাম মানবিকতা সবার উপরে স্থান দিয়েছে।
বাংলাদেশে জাকাত আদায়ের বর্তমান সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ : বাংলাদেশ যেহেতু ইসলামী রাষ্ট্র নয়, এখানে সরাসরি সরকারের মাধ্যমে জাকাত আদায়ের শক্তিশালী কোনো বিধান নেই। তবে সীমিত পরিসরে জাকাত সংগ্রহ এবং বিলি-বণ্টনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৮২ সালে একটি জাকাত ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেছে যাতে খুব কমসংখক জাকাতদাতাই জাকাত দিয়ে থাকেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ডের মাধ্যমে ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার জাকাত বণ্টন করা হয়েছে। অথচ অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ জাকাত দেয়ার সামর্থ্য রাখে এবং তাদের থেকে বছরে অন্তত ৮০ হাজার কোটি টাকা জাকাত আদায় করা সম্ভব। কিন্তু ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে তার খুব সামান্য অংশই আদায় করা হয়।
মানুষের আস্থার সঙ্কট এবং জাকাত সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে হয়তো জাকাত বোর্ড তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। যদিও এর মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলাতেই জাকাত সংগ্রহ করে, সরকারি বিধান অনুযায়ী সংগৃহীত অর্থের ৭০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট জেলাতেই ব্যয় করার বিধান আছে। বাংলাদেশে সরকারিভাবে সংগ্রহ করা জাকাত শিশু হাসপাতাল, সেলাই প্রশিক্ষণ এমন নানা খাতে খরচ করা হয়।
ফলে জাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ-মাদরাসা, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ করা যায় না। তবে মাদরাসায় এতিম, অসহায় ও দরিদ্র ছাত্রদের ভরণপোষণ এবং চিকিৎসার জন্য জাকাত দেয়া যাবে। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, নগদ টাকা দিয়ে জাকাত আদায় করা উত্তম, যেন জাকাতগ্রহীতা নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যয় করতে পারে। গ্রহীতার প্রয়োজন বিবেচনা না করে ঢালাওভাবে শাড়ি-কাপড় ইত্যাদি দিলে দেখা যায়, এক গরিব একাধিক কাপড় পায়, অথচ তার চাল-ডাল বা অন্য কিছুর প্রয়োজন ছিল। তখন সে তার কাপড়টি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে যার অর্থ দাঁড়ায়, গরিব ব্যক্তি পুরো টাকাটা পেল না।
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা, উদ্যোগ ও বাধ্যবাধকতা না থাকায় জাকাত দেয়া ফরজ এমন বহু মানুষ জাকাত আদায় করেন না। অথচ জাকাত না দেয়া মানে অন্যের জাকাত নিজেই খেয়ে ফেলা। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সংগৃহীত জাকাতের অর্থের পরিমাণ ও তা ব্যয়ের খাত সম্পর্কেও মানুষের স্বচ্ছ ধারণা নেই। ফলে তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার প্রতি আস্থাশীল হতে পারছে না। গবেষকদের দাবি, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সঠিক ব্যবস্থাপনায় জাকাতের অর্থ বণ্টন করা হলে বাংলাদেশে মাত্র ১০ বছরে দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব।
জাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান : সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) হলো জাকাত ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের একটি সংস্থা। এ ছাড়া জাকাত ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, বারাকা ফাউন্ডেশন, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনসহ আরো কয়েকটি বেসরকারি উদ্যোগ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টনের ব্যবস্থা করে।
জাকাতের আন্তর্জাতিক প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি : বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। জাকাত ইসলামী অর্থব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে জাকাতের অর্থ ব্যয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে বিশ্ব প্রতিষ্ঠান জাতিসঙ্ঘের। জাকাত এখন ব্যক্তি, সংস্থা বা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যতালিকায় স্থান পেয়েছে। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ, সঙ্ঘাত ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শরণার্থী ও আশ্রয়হীন মানুষের সহায়তার জন্য ‘জাতিসঙ্ঘ জাকাত তহবিল’ গঠন করেছে। জাতিসঙ্ঘের এ উদ্যোগ মুসলমানদের মানবিক ও দাতব্য কার্যক্রমকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ তহবিল সম্পূর্ণ ইসলামী শরিয়াহ ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের ফতোয়া অনুযায়ী পরিচালিত।
সারা বিশ্বের মুসলমানরা প্রতি বছর জাকাত হিসেবে আনুমানিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে থাকে। অথচ যদি প্রত্যেক সচ্ছল মুসলমান সঠিকভাবে তার জাকাত আদায় করেন তাহলে এই অর্থের পরিমাণ হতে পারে ৩৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে এই ৭৬ বিলিয়ন ডলারই যদি মুসলিম বিশ্ব ঠিকমতো সমন্বিত উপায়ে বিলি করতে পারত, তাহলে মুসলিম বিশ্বের ক্ষুধা দারিদ্র্য অনেকাংশেই কমে আসত।
সংস্থাটি জানিয়েছে, সারা বিশ্বের উদ্বাস্তু ও শরণার্থী সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি ওআইসিভুক্ত দেশগুলোতে। সব মিলিয়ে বিশ্বে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৮০ মিলিয়নেরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে জাকাত তহবিলে অনুদান বেড়ে যাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ইউএনএইচসিআর।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২০ সালে তারা ২১ লাখ শরণার্থীকে জাকাত তহবিলের মাধ্যমে সহায়তা করেছে। এ কাজের জন্য তারা বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী দাতা প্রতিষ্ঠান থেকে জাকাত ও সদকা হিসেবে ৬১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। এই অর্থের এক-তৃতীয়াংশই ব্যয় করা হয়েছে যেসব দেশে জাকাতের অর্থ বিতরণ করা হয় সেখানে। এ ছাড়াও জাকাত তহবিলের অর্থ দিয়ে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে উদ্বাস্তু হওয়া প্রায় ৪০ লাখ তুরস্কে আশ্রিত মানুষের জন্য, ইয়েমেন, ইরাকে মানবেতর জীবনযাপন করা শরণার্থীদের জন্য এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নগদ অর্থ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিক পণ্যসামগ্রী দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা মহামারীতে কর্মহীন ও আর্থিক সঙ্কটে পড়া ব্যক্তি ও পরিবারগুলোকেও এই তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া হয়েছে।
জাকাতের হিসাবের জন্য ‘গিভ জাকাত’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে ইউএনএইচসিআর। দাতারা এই অ্যাপের মাধ্যমে জাকাত দিয়ে সেটি কোথায় কিভাবে ব্যয় হয় তাও জানতে পারবেন। এ ছাড়া এককালীন অনুদান ও মাসিক সদকাও দেয়া যায় এই অ্যাপের মাধ্যমে। পাশাপাশি সংস্থাটির জাকাত তহবিল-সংক্রান্ত বিভিন্ন ফতোয়াও যাচাই করা যাবে।
জাকাতের অর্থ সংগ্রহ ও বিতরণে ইউএনএইচসিআরের প্রতিটি পদক্ষেপেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়। নারী ও শিশুদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে। আসলে পাওয়া কিংবা ভোগের মধ্যে নয়; বরং অন্যকে দেয়া ও ত্যাগের মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত- এই সত্য সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলনে সবারই শরিক হওয়া উচিত।
লেখক : কলামিস্ট