ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আসা শোভনীয় হচ্ছে কি না বিষয়টি তাকে ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদি এমন এক সময় বাংলাদেশে আসছেন, যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভারতে অবস্থানকালে দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বহু লোক নিহত হয়েছে। আর দাঙ্গায় মোদির দল বিজেপি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময়ে তা বাংলাদেশে আসাটা কতটা উচিত হচ্ছে তা তার ভেবে দেখা উচিত।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। জেএসডির কার্যকরী সভাপতি সা কা ম আনিসুর রহমান খান কামালের সভাপতিত্বে এতে স্মৃতিচারণ করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। আলোচনা করেন, কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, গণসংহতির সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, সারা বিশ্বে এখন অস্থিরতা চলছে। জনবিরোধী একনায়করা বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে। বাংলাদেশে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। তারা শুধু পতাকা উত্তোলক আবদুর রবই নয়, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানীসহ অনেককেই ভুলে গেছে। তাদেরকে সরকার স্বীকার করতে চায় না। বেগম খালেদা জিয়া যিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী তাকেও কারাগারে বন্দী রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। তার সুচিকিৎসা ও জামিন পাওয়ার অধিকার দেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় স্বাধীনতা উদ্ধারে আমাদের প্রয়োজনে আবার রক্ত দিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দানব সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আ স ম আবদুর রব বলেন, ৭১ সালে এক হাজার কামান, বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের পতাকা আমিই প্রথম উত্তোলন করেছিলাম। সেদিন রাতে বঙ্গবন্ধু আমাকে ডেকে বলেছিলেন, রব, দিস ইজ টু আরলি, অর্থাৎ তিনি পতাকা তাড়াতাড়ি ওঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু এখন আমাদের স্বীকার করা হয় না। মনগড়া বিকৃত ইতিহাস জাতির সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় গুণগান করা হচ্ছে। এভাবে ইতিহাস বিকৃতি মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মানের সামিল। তিনি বলেন, সরকার ৭১-এর পাকিস্তানিদের মতো আচরণ করছে। সে সময় পাকিস্তানিদের তাড়াতে তরুণরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। এখন এ সরকারকে গণ-আন্দোলন ছাড়া বিদায় করা যাবে না। আওয়ামী লীগের পরিণতি মুসলিম লীগের মতো হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে স্বাগত জানানো উচিত। কিন্তু তিনি যে সময় আসছেন, যখন তার দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বহু লোক নিহত-আহত হয়েছে। সে সময় তাকে এ দেশের মানুষ সম্মান করবে না। এ জন্য তার ভেবে দেখা উচিত এ দেশে আসা উচিত কি না? তিনি আরো বলেন, দেশে যেভাবে মুজিব শতবর্ষ পালন করা হচ্ছে তাতে মানুষের মনে কোনো স্থান পাচ্ছে না। শুধুমাত্র পত্রিকা, টিভিতে স্থান পাচ্ছে। তিনি ২ মার্চ পতাকা উত্তোলনের দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের আহ্বান জানান।
ড. মঈন খান বলেন, ৭১-এর ২ মার্চ আ স ম আবদুর রব দেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। সে পতাকায় দেশের মানচিত্র ছিল। কিন্তু সেটি এখন নেই। এ দিনে রাষ্ট্রীয়ভাবেও কোনো কর্মসূচি নেই। তাহলে কি সরকার সেই পতাকাকে ভয় পায়? তিনি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আন্দোলন শুরু হলে সরকার খড়কুটার মতো ভেসে যাবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আজ দেশে দালাল আর আপসকামী নেতা তৈরি হয়েছে। ঢাবিতে পতাকা উত্তোলনের দিনে এক সভায় আবদুর রবের নামও নেয়া হয়নি। সেখানে শুধু বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। হয়তো একদিন দেখা যাবে কেউ বলছে, বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এরা আসলে আমাদের পতাকা খামচে ধরেছে। তারা বেগম খালেদা জিয়া, আ স ম রব, কাদের সিদ্দিকী ছাড়ায় মুজিববর্ষ পালন করতে চায়। তারা শুধু নরেন্দ্র মোদিকে চায়। কারণ তারা জানে মোদি ছাড়া তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। কিন্তু বিচারপতি, চিকিৎসকরা তার প্রতি সুবিচার করছেন না। তারা মূলত সরকারের শেখানো কথা বলছেন। এ জন্য বিএনপির আইনজীবীদের উচিত বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত করার ব্যবস্থা করা। রিভিউর আবেদন করা। তাহলে আদালত স্বচক্ষে দেখতে পাবেন খালেদা জিয়া কতটা অসুস্থ। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপির আর কোনো নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে না। বরং তাদের উচিত তারা আবার ক্ষমতায় গেলে দেশে রাজনীতির সুস্থ ধারা তৈরি করবেন। এ ব্যাপারে জনগণকে বোঝানো। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকার নরেন্দ্র মোদিকে আনতে চাচ্ছে। কিন্তু তার আগে মোদিকে ফেলানি হত্যার জন্য ক্ষমতা চাইতে হবে। তাকে পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। অন্যথায় মুজিব শর্তবর্ষে মোদিকে আনলে শেখ মুজিবুর রহমান কবরে থেকেও কাঁদবেন।
নুরুল হক নুরু বলেন, সাম্প্রদায়িক নরেন্দ্র মোদিকে বাংলার মাটিতে কোনোভাবেই আসতে দেয়া হবে না। তাকে ছাত্রসমাজ প্রতিহত করবে।