শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০২ পূর্বাহ্ন

এবার ভোটটি দিতে দিন প্রভু

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩
  • ৬৫ বার

ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ঠিক একই রকম মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে একটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মানুষ পোড়ানোর গণহত্যাকাণ্ডে (নিহতরা ছিলেন ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের)। এ দু’টি রেল দুর্ঘটনা একই রকম নয়। তারপরও সিমিলি হচ্ছে ট্রেন দুর্ঘটনা এবং মানুষের জীবন নাশ। মানুষের জীবন যে কতটা মূল্যবান, বেঁচে থাকতে আমরা বুঝি না, বোঝার চেষ্টা করি না। কারণ, আমরা স্বাধীনভাবে জন্ম নিলেও সমাজ আমাদের কোনো না কোনো রাজনৈতিক সমাজের/সম্প্রদায়ের ঠিকানায় অন্তর্ভুক্ত করে দেয়। ফলে মানুষ হয়ে পড়ে জন্মগতভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলমান। কিছু মানুষ অস্পর্শযোগ্য, মানবেতর ও জীবনের অধিকারী হলেও, তাদের সামাজিক পরিচয় নেই বললেই চলে। এদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের মুসলমানরা হিন্দুদের চোখে পরম শত্রু। সে দেশের অন্তজ ও নিম্নবর্গের মানুষদের চেয়েও নিকৃষ্ট চোখে তাদের দেখা হয়। সমাজে যে রাজনীতিকরণের খেলা শুরু করেছিল, তা আজ পলিটিক্যাল রিভেঞ্জের শিকার হয়ে উঠেছে।

গণমানুষ, পুড়ে যাওয়া মানুষদের উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে। সরকারি লোকেরা তামাশা দেখেছে কিছুক্ষণ। তারপর উপরওয়ালাদের নির্দেশ এলে গদাইলস্করি চালে পুড়তে থাকা মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের চোখে সবাই সমান, একমাত্র পরিচয় মানুষ হিসেবে। কিন্তু রাজনৈতিক সমাজ সেই সাংস্কৃতিক সজ্জা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এটি যে কত বড় অপরাধ, রাজনৈতিক সরকারের অধঃপতন ও নিষ্ঠুরতা তা কিন্তু রাজনৈতিক সমাজের অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেন না। কারণ তাদের চোখে পলিটিক্যাল পর্দা ঝুলছে।

২ জুনের ট্রেন দুর্ঘটনায় এর মধ্যেই আমরা জেনেছি ২৮৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, প্রাণহানির সংখ্যা বাড়বে বা বাড়তে পারে। প্রায় ৯০০ আহত মানুষ দু’টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। করমন্ডল নামের কলকাতা টু চেন্নাই সুপার স্পিডি ট্রেনে বাংলাদেশের যাত্রীও ছিলেন। এদের মধ্যে দু’জন মারা গেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। যারা বেঁচে গেছেন, তাদের কেউ কেউ বলেছেন ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা তাদের জান নেয়নি, তাই শুকর গোজার করেছেন আল্লাহর কাছে।

সাধারণ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন দুর্ঘটনার এক-দুই মিনিটের মধ্যেই। এটিই হচ্ছে মানবিকতার লক্ষণ। মানুষ যে মানুষের জন্য, চরম দুর্দশার মধ্যে একমাত্র মানবিকতাই মাথা উঁচু করে এগিয়ে আসে। এটিই আসল মানবধর্ম।

ওই দুর্ঘটনার ক্ষতি আমাদের নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে, মানুষকে বাঁচানোর দায়িত্ব মানুষের, রাজনীতি, ধর্মনীতি ও আদর্শ মানুষ বাঁচাতে পারে না। তারা কেবল মানুষকে দলীয় চিন্তার কাছে বাজারদরে বিক্রি করতে পারে।

২.
বাংলাদেশে, অতি জরুরি না হলেও নির্বাচনী তফসিলের সীমানা নির্ধারণ বা পুনর্নির্ধারণ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য জরুরি। কিন্তু কী কারণে আগের সীমানা ভেঙে নতুন সীমানা সৃষ্টি করতে হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। যে সামান্য তথ্য আমরা জেনেছি, তা কেবল জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে। কিন্তু সেটি কতটা সত্য এবং ভোটার সংখ্যা বেড়ে গেলেই যে সেই আসনের সীমানা বাড়াতে হবে, কমে গেলে সীমানা ছোট বা বড় করতে হবে, এমনটি তো ভালো কোনো বিচার নয়। এমনিতেই ৩০০ আসনের প্রতিটিরই সমান সংখ্যক ভোটার নেই। কমবেশি ভোটার নিয়েই তো আসনের সীমানা সৃষ্টি করা হয়েছে। ৩০০ আসনের সংখ্যা তো আর ৩৪০ বা ৩২০ করা হয়নি যে তাকে নতুন করে ঢেলে-চেলে সমান আকার দিতে হবে। সেটি করা তো হয়নি। আসনসংখ্যাও বাড়েনি। তাহলে বিদ্যমান সীমানাকে ভেঙে নতুন সীমানা সৃষ্টির পেছনে কী এমন কারণ?

নির্বাচনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- ভোটারদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের সর্বোচ্চ সুযোগ সৃষ্টি করা। নির্বাচনী লেভেলফিল্ড সমান করা। সেই সুযোগটি গত ৫০ বছরে কমবেশি নষ্ট করা হয়েছে রাজনৈতিক সরকারের লাভের আশায় ও সামরিক নেতাদের প্রয়োজনের কারণে। ভোট যখন ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’ এর মাধ্যমে নেয়া হতো, তখনো তাদের অধিকার প্রয়োগ সম্ভব ছিল, কিন্তু সেটি হয়নি। কেবল ক্ষমতার মসনদে থাকা ক্ষমতাবানরা যদি ভোটারদের সেই অধিকার প্রয়োগের সুযোগটি দেন, তাহলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু কোনো লোভই খাটো নয়। তাই ভোটার জনগণ সেই সুযোগ পায়নি। আগামীতে যাতে প্রত্যেক ভোটার তাদের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, সেটিই হবে প্রধান কাজ।

এটি প্রমাণিত যে, ৫০ বছরের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সব রাজনৈতিক/সামরিক দলই ভোটারদের অধিকার প্রয়োগে কমবেশি বাধার সৃষ্টি করেছে। নিজেদের বিজয়কে করায়ত্ত করতে রিগিং হলো তাদের রাজনৈতিক কীর্তির পথ রচনা। গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতাসীন দল যেভাবে ভোটের রাজনীতিকে ভোট লুটের উৎসবে পরিণত করে ক্ষমতার মসনদ দখল করেছে, সেই ন্যক্কারজনক ইতিহাসই আমাদের লজ্জার কারণ হলেও আমাদের রাজনীতিকরা কোনোভাবেই লজ্জিত নন। এই লজ্জাহীনতাই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রধান সঙ্কট। এর পেছনে আছে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা আর ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা। এই দ্বিমুখী রাজনৈতিক টানাপড়েনে আজ ভোটার জনগণই কেবল নয়, ক্ষতির কবলে গোটা জাতি। এই ক্ষতিকে আমাদের রাজনীতিকরা, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল ক্ষতি বলে স্বীকারই করে না। তারা দাবি করে, ভোটার জনগণ তাদের পক্ষে, তাই তাদের হয়ে দলীয় কর্মীবাহিনী ভোট দিয়ে দিয়েছে। এটি যে সন্ত্রাসী কাজ, সেটি তারা বুঝতে চান না, মানেন না।

নির্বাচনে জেতার একটি তরিকা হচ্ছে নির্বাচনী আসনের পুনর্গঠন। রাত-দিন তারা ভোটে জেতার নেশায় আসনের সীমানা নিয়ে ভাবেন। ওই এলাকার ওই সব মানুষ আমাদের ভোট ব্যাংক, অতএব দরখাস্ত দাও, পুনর্গঠন করো সীমানা। সেই রাজনৈতিক খেলার কাজটি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন একটি খসড়া আগেই ঘোষণা করেছিল। এখন পুনর্নির্ধারিত সীমানার গেজেট প্রকাশ করে জনগণকে জানিয়ে দিয়েছে।

এ নিয়ে দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ ছিল, এখন আর নেই। কিন্তু আমার কথা অন্য জায়গায়। আর তাহলো, ভোটার জনগণ যেন অতীতের মতো কেন্দ্রে গিয়ে জানতে না পারে যে, আপনার ভোট হয়ে গেছে। যিনি বা যারা ভোটারকে এই বাক্য বলেন, তাদের হাসিমাখা মুখে ঝাপটা মানতে পারে না ভোটার জনগণ। কারণ জনগণ রাজনীতির প্রোডাক্ট নন কিন্তু রাজনৈতিক এজেন্টরা রাজনীতির কেবল প্রোডাক্টই নন, তারা নেতানেত্রীদের ইশারায়ই কাজ করেন। ক্ষমতার রাজনীতি তাদের মেমোরিতে যা ঢুকিয়েছে, তাই তারা প্রডিউস করবেন, করেছেন এবং বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। ওই বিজয় যে কলঙ্কিত ও মিথ্যায় সাঁটানো, মিথ্যার বেসাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে, সেটি জনগণ বুঝতে পারলেও সরকারি দল বোঝে না। এই রাজনৈতিক বেহায়াপনাই আমাদের প্রধান শত্রু।

৩.
এবার আমাদের রেলওয়ে বা রেলরোড নিয়ে যৎসামান্য কথা।
আমাদের দেশেও, ভারতের মতোই ট্রেন সিগন্যাল বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। উড়িষ্যায় ঘটে যাওয়া রেল দুর্ঘটনার যে কারণ তাদের দায়িত্বশীলরা রিপোর্ট করেছে, তদন্ত রিপোর্ট, সেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষের কারণ সিগন্যালের ত্রুটি বা ভুল সিগন্যাল দেয়ার মর্মান্তিক ফল।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১০টির সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ ছাড়া সাতটি আসনের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস করে নামে বদল আনা হলেও বাস্তবে সীমানার কোনো তারতম্য হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, সীমানা পুনর্র্নির্ধারণে মন্ত্রী-এমপিদের তদবির আমলে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে তুষ্ট করে সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর ইসি বলছে, সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে কাউকেই পুরোপুরি সন্তুষ্ট করা যায় না। এর পক্ষে-বিপক্ষে অভিযোগ উঠবেই। ১ জুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাঙ্গীর আলমের সই করা প্রজ্ঞাপনটি গত শনিবার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

সীমানায় পরিবর্তন আনা আসনগুলো হলো- পিরোজপুর-১, পিরোজপুর-২, কুমিল্লা-১, কুমিল্লা-২, ফরিদপুর-২, ফরিদপুর-৪, গাজীপুর-২, গাজীপুর-৫, নোয়াখালী-১ ও নোয়াখালী-২। গত ফেব্রুয়ারিতে ইসির খসড়ার ওপর স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি-আপত্তি জানানোর সময় দেয়া হয়েছিল। সেসব দাবি-আপত্তি নিয়ে শুনানি শেষে নতুন সীমানা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এই নিউজের পর, এর আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। মন্ত্রী-এমপিরা যখন তদবিরে নামেন, তখন বোঝা যায় ক্ষমতাই তার/তাদের লক্ষ্য, জনসেবক বা দেশের সার্বিক উন্নয়ন তাদের চিন্তার প্রবাহ থেকে উধাও হয়ে থাকে। সে সব ফিরে আসে যখন তারা রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তৃতা দিতে আসেন, তখন তাদের স্বপ্নগুলো উন্নয়নের ছায়াছবি হয়ে ওঠে।
এই রাজনৈতিক খেলা আর কতকাল প্রভু? এবার ভোটটি দিতে দিন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত গেজেটে কয়েকটি আসনে পরিবর্তন এসেছে। শনিবার (৩ জুন) এ গেজেট প্রকাশ হয়।

গত বৃহস্পতিবার (১ জুন) ইসি সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে- নির্বাচন কমিশন সীমানা নির্ধারণ আইনের ধারা ৬ এর উপধারা (৪) অনুযায়ী দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত দরখাস্তগুলো পর্যালোচনা করে এবং শুনানিকালে উপস্থাপিত তথ্য ও যুক্তিতর্ক বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com