ছয় বছরের ব্যবধানে বাজেট বাস্তবায়নে নেয়া ঋণের সুদ ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিদেশী ঋণের সুদ বাড়বে সবচেয়ে বেশি। এই ব্যয় বৃদ্ধির হার ৪ গুণেরও বেশি। অন্য দিকে, দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেয়া সুদে ব্যয় বাড়বে প্রায় দ্বিগুণ। অর্থ বিভাগের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এই পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সুদ ব্যয় ছিল ৭০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এই ব্যয় আগামী এক অর্থবছর পর অর্থ্যাৎ, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে গিয়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ছয় বছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়বে ৯৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৬৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদের জন্য ব্যয় করতে হবে বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে। যেমন-২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সেখানে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই ব্যয় বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
অন্য দিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় যেখানে ছিল ৬৬ হাজার ৩০ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে ধীরে ধীরে সুদ ব্যয় কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে সুদ বাবদ মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ সুদের পরিমাণ ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। এরপর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরো কমে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৮ শতাংশে ফিরে যাবে। ’
তবে টাকার মান কমে যাওয়া ও বিদেশী ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবার কারণে আগামীতে বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় বাড়বে বলে অর্থ বিভাগ মনে করে। বলা হয়েছে, ‘টাকার অবচিতি এবং বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক সুদ ব্যয়ের পরিমাণ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ দশমিক ৬ শতাংশ হবে এবং ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ দশমিক ৭ শতাংশে স্থিতিশীল থাকবে।’
এ দিকে, বাজেট ডকুমেন্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রতি বছরই বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়ে চলেছে। যেমন- ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সুদখাতে ব্যয় ধরা হয় ৭০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। সুদ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় ধরা আছে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২১-২২অর্থবছরে সুদ ছিল ৭০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং সবশেষ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদ বেড়ে হবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩০ কোটি টাকা।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা এবং বিদেশী সুদ ব্যয় ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ১৭-১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। একইভাবে ১৬-১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও ১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।