শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০ অপরাহ্ন

আল্লাহকে পাওয়ার সহজ উপায়

তোহুর আহমদ হিলালী
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩
  • ৭৮ বার

আল্লাহকে পাওয়ার জন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই বা কাউকে ধরাও আবশ্যক নয়। আল্লাহ বান্দার খুব কাছে অবস্থান করেন। তাঁর নিজের উক্তি, ‘হে নবী! আমার বান্দা যখন আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তখন বলে দাও, আমি তাদের অতি কাছে। যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই আমার আহবানে সাড়া দেয়া ও আমার ওপর ঈমান আনা তাদের একান্ত কর্তব্য। এ কথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তোবা তারা সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে’- বাকারা ১৮৬। দ্ব্যর্থহীন কথা, আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক প্রত্যক্ষ। সব প্রয়োজন তাঁর কাছে নিবেদন করতে হবে। তিনি বান্দার ডাক শুধু শুনেনই না, তার জবাবও দেন অর্থাৎ সমাধান দেন। আল্লাহরও চাওয়া আছে এবং তা হলো বান্দা কেবল তাঁর আনুগত্য (ইবাদত) করবে। আল্লাহ তাঁর রাসূল সা.-কে বলে দিয়েছেন, তাঁর এ কথা প্রচার করে দিতে যাতে তারা শিরক থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক পথের সন্ধান পায়।

আল্লাহকে পাওয়ার সহজতম উপায় হলো তাঁর বান্দাদের সাথে সদাচরণ করা। মনে রাখতে হবে মানুষ শুধু আল্লাহর বান্দা নয়, সাথে সাথে তাঁর প্রতিনিধি। আমরা প্রতিনিধির মর্যাদা বুঝি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই সরকারের প্রতিনিধি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাজকর্মে বাধা প্রদান সরকারের বিরোধিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পুলিশ প্রায়ই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে থাকে। তাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হলে তাঁর পুরো সৃষ্টির সাথে সদাচার করতে হবে। সদাচরণ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনাসামনি গালাগাল করে ও পেছনে দোষ প্রচার করে’ (সূরা হুমাজা)। এদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে যে, তাদের হুতামায় নিক্ষেপ করা হবে। আর হুতামার পরিচয় দেয়া হয়েছে, আল্লাহর আগুন প্রচণ্ডভাবে উত্তপ্ত-উৎক্ষিপ্ত। একটু গালি দিলে ও অসাক্ষাতে নিন্দাবাদ করলে যদি এ পরিণতি হয় তাহলে যারা গুম-খুন ও মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে মানুষকে জেল-জুলুম ও নানাভাবে কষ্ট দেয়; তাদের পরিণতি কী হবে? আসলে আল্লাহর দয়া অনুগ্রহের শেষ নেই, তিনি অপেক্ষা করেন তাঁর বান্দারা ফিরে আসে কি না? ঈমানদার বান্দাদের কষ্ট দেয়া আল্লাহর কাছে অসহনীয়। আল্লাহর বাণী, ‘যারা ঈমানদার নর-নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি’ (সুরা বুরুজ)। ‘অতঃপর তওবা করে না’- এ উক্তির মধ্যে একজন জালেম আল্লাহর ক্ষমা আশা করতে পারে যদি সে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসে।

আমাদের স্মরণে রাখা আবশ্যক, কোনো মুসলিম দ্বারা কেউ কষ্ট পাবে সেটি অকল্পনীয়। বরং মানবজাতির কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে মুসলিম জাতির উদ্ভব হয়েছে। আল্লাহর বাণী, ‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে তোমাদের বের করে আনা হয়েছে, তোমরা দুনিয়ার মানুষদের সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে এবং আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা রাখবে’- সূরা আলে ইমরান ১১০। এতে বোঝা যায়, মুসলিমদের শ্রেষ্ঠত্বের মূলে রয়েছে মানুষের কল্যাণ সাধন এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার নির্দেশ প্রদানের মধ্যে। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব যারা নেতৃত্বের আসনে থাকে। এ আয়াতের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায় যে, আল্লাহ তাঁর সর্বোত্তম বান্দাদের (মুসলিম) বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে দেখতে চান।

তাই বলা যায়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব আসে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আল্লাহ সব নবী-রাসূলকে সমসাময়িক রাজশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন। কালেমা তাইয়্যেবাহ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এক বিপ্লবাত্মক স্লোগান। সব নবী-রাসূল একই কালেমার দাওয়াত দিয়েছেন। কালেমার দাবি হলো, আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুত অস্বীকার করো। তাগুতকে অস্বীকার মানে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী নবী-রাসূলদের কোনো তাগুত সহ্য করেনি। নমরুদ সহ্য করেনি ইবরাহিম আ:-কে, ফেরাউন সহ্য করেনি মুসা আ:-কে, আর মুহাম্মদ সা:-কে সহ্য করেনি আবু জেহেল ও আবু লাহাবরা। দুনিয়ার ইতিহাস হলো হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের ইতিহাস। মহান আল্লাহর বাণী, ‘আর সংগ্রাম করো আল্লাহর পথে হক আদায় করে। তিনি (দুনিয়ার নেতৃত্বের জন্য) তোমাদের মনোনীত করেছেন এবং দীনের ব্যাপারে কোনো সঙ্কীর্ণতা রাখেননি’- সূরা হজ ৭৮। কুরআনে অসংখ্য জায়গায় জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে হক আদায় করে অর্থাৎ নিজের জান ও মাল উজাড় করে দিয়ে। নিজেকে পরিপূর্ণ আল্লাহতে সমর্পণ করে।

আল্লাহ মুসলমানদের সর্বোত্তম জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সর্বোত্তম জাতি হওয়া তখনই সম্ভব যখন তাদের হাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব থাকে এবং মানুষ সেখান থেকে শুধু কল্যাণ লাভ করে এবং সমাজ থেকে সব ধরনের পাপাচার দূর হয়। মুসলমান আল্লাহর বাছাই করা বা মনোনীত বান্দা। আল্লাহ সমাজের নেতৃত্ব তাঁর এ মনোনীত বান্দাদের হাতে দিতে চান। সেখানে শর্ত হলো-ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী হতে হবে ও নেক আমলে ভূষিত হতে হবে (সূরা নূর ৫৫)। এখানে নেক আমল অর্থাৎ নফল ইবাদত-বন্দেগিতে শুধু পারদর্শী হওয়া নয় বরং সততা, বিশ্বস্ততা, আমানতদারিতা, প্রতিশ্রুতি পালন, সৃষ্টির প্রতি সদাচরণসহ বহুবিধ মানবিক গুণের অধিকারী হওয়া। এগুলো হলো মৌলিক মানবীয় গুণ। এসব মানবীয় গুণাবলি কোনো একটি জাতিগোষ্ঠী অর্জন করতে পারলে তাদের রোখার সাধ্য কারো থাকে না। আল্লাহ বলেছেন, তাঁর দ্বীনের মধ্যে কোনো সঙ্কীর্ণতা নেই। দুর্ভাগ্য, আজ আমরা আমাদের উদার ও প্রশস্ত দ্বীনকে সঙ্কীর্ণ করে পরস্পর হিংসাবিদ্বেষে মেতে উঠেছি ও নানা দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছি। আল্লাহ আমাদের সঠিক উপলব্ধি দান করুন।

লেখক : সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com