আগামী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একক পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত ৫ জুলাই গঠন করা হয়েছে ১৫ সদস্যের কমিটি। এই কমিটির প্রধান হলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান। এ ছাড়া কমিটিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদেরও সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটির অন্য দুই সদস্যের একজন ইউজিসির প্রশাসন বিভাগের সদস্য ও একজন স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স বিভাগের (এসপিকিউএ) সদস্য। কমিটির সদস্য সচিব ইউজিসি সচিব। সবাই পদাধিকার বলে সদস্য হওয়ায় কমিটির আদেশে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাতে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠন প্রক্রিয়া এখনো আটকে রয়েছে। যদিও চলতি বছর থেকেই এই এনটিএ গঠন করার কথা ছিল। তবে নানা জটিলতায় এটা এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে ইউজিসির একজন সদস্য। এনটিএ গঠন করতে হলে বেশ কিছু আইনি জটিলতা এবং সময়েরও একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে এনটিএ গঠন না করা পর্যন্ত সদ্য গঠিত এই কমিটি আপাতত ভর্তি পরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালন করবে বলে জানা গেছে।
ইউজিসির একটি সূত্র জানায়, দেশের সরকারি ও বেসরকারি মিলে মোট ১৬৩টি বিশ্বদ্যিালয়ে ভর্তির জন্য গত বছরই এনটিএ গঠনের মাধ্যমে একটি মাত্র পরীক্ষায় ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা কথা ছিল। কিন্তু আইনি জটিলতায় সেই উদ্যোগে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আওতাভুক্ত করে একক ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলরের অভিপ্রায় অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেই প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ এপ্রিল ইউজিসির এক সভায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একক ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে দেশে ৫৩টি পাবলিক ও ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে ভর্তি নেয়া হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েটসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। আর ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুুক্ত হয়ে তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট) আরেকটি গুচ্ছে এবং কৃষি ও কৃষিশিক্ষা প্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় অপর একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
অবশ্য গত বছর থেকেই সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে ভর্তি পরীক্ষা নিতে একটি ইউনিক কাঠামো গঠন নিয়ে কাজ শুরু করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোপূর্বে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং অভিভাবকদের ব্যয় কমাতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হলেও সেখানে সব বিশ্ববিদ্যালয় অংশ না নেয়ায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমেনি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। গত দুই বছর গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের অভিযোগও ছিল বিস্তর।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আলমগীর হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, এনটিএ’র গঠন নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু করা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এনটিএ গঠন প্রক্রিয়ায় আইনি জটিলতার কিছু বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া এনটিএ গঠন করার আগে আইনি বেশ কিছু বিষয় পরিবর্তনও করতে হবে। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় ভর্তি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রমতো আর থেমে থাকবে না। তাই আগামী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন তারা যেন একটি মাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারে সেটির প্রক্রিয়া ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করতেই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধ্যাপক আলমগীর আরো জানান, যেহেতু ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে তাই আমাদের একটু সময় লাগবে। সবাইকে নিয়ে সভা করে শিগগিরই আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে।
ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতসহ উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে নির্দিষ্ট অথরিটি রয়েছে। সেখানে পরীক্ষা নিয়ে স্কোরের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেয়া হয়। বিষয়টি আইইএলটিএস, জিআরই-এর মতো। বাংলাদেশেও সে ধরনের সংস্থার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।