করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের। এ নিয়ে আতঙ্কিত না হতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এতে মৃত্যুর ঝুঁকি ইবোলা ভাইরাসের চেয়ে অনেক কম, ৩ শতাংশেরও কম। এটি হবে, আমরা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। যদি সবাই মিলে কাজ করি, প্রটেকটিভ মেজারগুলো মেনে চলি, পাবলিক গ্যাদারিং পরিহার করি- যেগুলো আমরা বলে আসছি, আশা করি করোনাভাইরাস আমরা প্রতিরোধ করতে পারব। এ ছাড়া প্রবাসীদের এই মুহূর্তে দেশে না ফেরার জন্যও তিনি আহ্বান জানান। সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাড়াও বিএমএর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ক্লিনিক অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীদের দেশে আসতে নিরুৎসাহিত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে প্রবাসীরা এসেই দেশে করোনা ছড়িয়েছেন। বিদেশ থেকে যারা আসতে চাইছেন, আমি বলব এ মুহূর্তে আপনারা দেশে আসবেন না। নিজ নিজ স্থানে থাকুন। এটা আগেও আমরা বলেছি। অ্যাম্বাসেডরদেরও (রাষ্ট্রদূত) আমরা নির্দেশনা দিয়েছি তাদের জন্য সেফ জোনের ব্যবস্থা করতে। মন্ত্রী বলেন, দেশ থেকে তারা বেশি যাবেন, আমরা সেটাও চাই না। সবাইকে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে (স্বেচ্ছায়) থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
এ দিকে সোমবার আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা ব্রিফিংয়ে জানান, দেশে করোনায় আক্রান্ত তিনজন বর্তমানে ভালো আছেন। এদের সাথে ঘনিষ্ঠ আরো চারজনের নমুনা পরীক্ষায় তাদের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো জানান, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জাতীয় কমিটির পাশাপাশি জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে। দেশের বাইরে থেকে যেকোনো লোক এলে তার খবর নিতে ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে কোরিয়া, ইরান, ইতালি ও চীনের নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে যারা আসবে তাদের সবাইকে প্রয়োজন হলে কোয়ারেন্টাইন করা হবে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পোস্টার, ব্যানার, লিফলেটসহ প্রচারপত্র বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় ক্যাবল টিভির মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানোর জন্য ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
করোনায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সচেতন ও সতর্কভাবে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। খেলাধুলাসহ ধর্মীয় যেকোনো অনুষ্ঠান সীমিত পরিসরে করতে বলা হয়েছে। মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানও সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ক্রিকেট ম্যাচে যাতে দর্শক না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়কে তাদের আওতাধীন তিন লাখেরও বেশি মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি করমর্দনসহ সামাজিক আচার এড়িয়ে যেতেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জনসমাগম থেকে দূরে থাকতে বলা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হবে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত স্কুল-কলেজ বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিকভাবে সব প্রতিষ্ঠানই চলবে। তবে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত হ্যান্ডওয়াশ ও সাবান রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্কুল ও কলেজগুলোতে হাত ধোয়ার জন্য সরকারিভাবে বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, স্কুল-কলেজে একই মানুষ প্রতিদিন আসেন। বহিরাগতরা সেখানে যান না। অন্য দিকে সামাজিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সমাগম হয়। তাই এগুলো এড়িয়ে যেতে বলা হচ্ছে।
চিকিৎসায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, জানুয়ারি থেকে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমাদের আশঙ্কা ছিল ভাইরাসটি আমাদের আক্রমণ করতে পারে। রোববার তিনজন শনাক্ত হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় জেলাপর্যায়ে ১০০ বেড এবং ঢাকায় ৪০০ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট, মেশিন ও ওষুধ মজুদ রয়েছে। আরো ওষুধ ও কিট সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের ১০০ মিলিয়ন ডলার ফান্ড দিয়েছে। তবে আরো ফান্ডের দরকার। সমাজের বিত্তবান এবং বিভিন্ন কোম্পানিকেও সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। তারা এই মুহূর্তে মাস্ক ও গাউন দিলে উপকার হবে।
ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের দুর্বলতা হচ্ছে ঢাকা ও পুরো দেশ ঘনবসতিপূর্ণ। এক কোটির মতো মানুষ দেশের বাইরে কাজ করেন। এটি আমাদের দুর্বলতা। বিশ্বের ১০২টি দেশে ভাইরাস ছড়িয়েছে। এসব দেশের অনেকগুলোতে বাংলাদেশী নাগরিকরা কাজ করেন। বিদেশীদের স্ক্যানিংয়ে নতুন দু’টিসহ বিমানবন্দরে ছয়টি স্ক্যানার বসানো হবে। এ ছাড়া দেশের সব বন্দরেই স্ক্যানার বসানো হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে এসবের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে।