সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমেরিকা সফর করেছেন। বিশ্ব ব্যবস্থার নতুন মেরুকরণের পটভূমিতে এবং ভূ-রাজনীতির প্যারাডাইম শিফটের প্রেক্ষাপটে এই সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তারা সংবাদ সম্মেলন করেন। মোদির প্রায় ৯ বছরের ভারত শাসনের মেয়াদকালে এই প্রথম কোনো সাংবাদিকের মুখোমুখি হলেন। ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর প্রশ্নকর্তা মার্কিন সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারাসহ উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তীব্র রোষের মুখে পড়েন। ভারতীয় সমালোচকরা তাকে ‘পাকিস্তানের চক্রান্তকারী’ বলেও প্রতিপন্নের চেষ্টা করে। (প্রথম আলো, ২৮ জুন ২০২৩)
প্রশ্নটি ছিল খুব সাধারণ ও প্রাসঙ্গিক। মোদিকে প্রশ্ন করা হয় ভারতের গণতন্ত্র ও মুসলমাদের অবস্থা সম্পর্কে। জবাবে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘গণতন্ত্র আমাদের চেতনা। আমাদের সংবিধান, আমাদের সরকার ধর্ম, বর্ণ, জাতের ভিত্তিতে কোনো বিভেদ করে না’ (প্রথম আলো, ২৩ জুন ২০২৩)। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই উত্তর কি সঠিক? তিনি কি সত্য বলেছেন? সংবিধানে অনেক ভালো কথাই লিখা থাকে। কিন্তু মোদি সরকার কি সংবিধান মেনে চলছে? ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কি ভালো আছে? সরকারের রাষ্ট্রযন্ত্রগুলো কি সংখ্যালঘুদের সাথে মানবিক আচরণ করছে? বিজেপি নেতা, রাজ্যসরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী, পুলিশ-প্রশাসন, কট্টরপন্থী জনপ্রতিনিধিরা কি নিত্যদিন মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন না? বিচার বিভাগ কি সংখ্যাগুরুদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে না? ভারতের অভ্যন্তরীণ ঘটনাগুলোর সাম্প্রতিক সংবাদগুলোর প্রতি চোখ বুলালেই বোঝা যাবে, হোয়াইট হাউজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিথ্যা বলেছেন!
২০১৯ সালে আসামের মুসলিমদের অবৈধ বাংলাদেশী বলে চিহ্নিত করার জন্য করা হয়েছে ‘এনআরসি’ বা ‘নাগরিকপঞ্জি’। আর ভারতজুড়ে মুসলমানদের অভিবাসন ঠেকানোর জন্য করা হয়েছে ‘সিএএ’ বা ‘নাগরিকত্ব সংশোধন’ আইন, যার দ্বারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে অভিবাসী হওয়া মুসলমানদের নাগরিকত্ব হরণ করা হবে। অন্য দিকে হঠাৎ করে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার মাধ্যমে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এবং কাশ্মিরকে দুই ভাগ করে কেন্দ্র শাসনের অধীনে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সাথে সাথে কাশ্মিরের শীর্ষ নেতাদের গৃহবন্দী করাসহ ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয় এবং ৫০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয় কাশ্মিরে। এরপর ধীরে ধীরে কাশ্মিরের ‘ডেমোগ্রাফি’ পরিবর্তনের সব কলাকৌশল করা হয় মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমিয়ে আনার জন্য। এমনকি কৌশলে গোপনে ভোটার তালিকায় কাশ্মিরের বাইরে থেকে বিপুল হিন্দু ভোটার সংযুক্ত করা হয়।
মুসলমানদের মসজিদ-মাদরাসায় হামলা ও নিষেধাজ্ঞা এখন নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে সারা ভারতজুড়ে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল ভারতে মসজিদ ভাঙা অভিযান। সেই মসজিদ ভাঙার মামলায় ভারতীয় আদালতকেও উগ্র হিন্দুদের পক্ষ নিতে দেখা গেছে। রায়ে আদালত স্পষ্ট বলেছে, তারা প্রমাণের ভিত্তিতে নয়; বরং হিন্দুদের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে রায় দিয়েছেন। আদালত, ভাঙা বাবরি মসজিদের জায়গা হিন্দুদেরকে হস্তান্তর করে মসজিদের জন্য অন্য স্থানে ভূমি বরাদ্দ দেয়ার কথা বলেন। আর ‘সিবিআই’ আদালতের বিশেষ বিচারক এসকে যাদব জোরালো প্রমাণ না থাকার অজুহাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র মামলার ৩৫ অপরাধীর সবাইকে খালাস দিলেন। অথচ তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণাদির এত স্তূপ ছিল যে, কোনো মামলায় এত প্রমাণ (অডিও-ভিডিওসহ) খুব কমই একত্র হয় (নয়া দিগন্ত, ২০ আক্টোবর ২০২২)। এর মধ্যে ২০২১ সালের আগস্টে উত্তর প্রদেশের বারানসিতে জ্ঞানবাপি মসজিদের দেয়ালে পূজা করার অনুমতি চেয়ে পাঁচ হিন্দু নারী মামলা করে। তারা মসজিদ চত্বরের অজুখানায় শিবলিঙ্গের উপস্থিতি দাবি করে; যেটিকে মসজিদ কর্তৃপক্ষ আসলে ফোয়ারার একটি অংশ বলে জানায় (প্রথম আলো, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২)। কিন্তু মসজিদ কর্তৃপক্ষ এই মামলা না চলার আবেদন করলে আদালত আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদ নিয়েও একই ধরনের বিতর্ক উঠানো হয়েছে। হিন্দুসেনা নেতা বিষ্ণু গুপ্ত আদালতে আবেদন করেন, শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি চত্বরে মন্দির ভেঙে মোগল সম্র্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে ১৬৬৯-৭০ সালে ১৩ একর জমির ওপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আদালত আবেদন গ্রহণ করে ওই মসজিদেরও জরিপ চালানোর নির্দেশ দেয় (প্রথম আলো, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২)। আবার হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো দাবি তুলছে লক্ষ্ণৌর ‘টিলাওয়ালি মসজিদ’ আসলে টিলাওয়ালি মসজিদ নয়, বরং ‘লক্ষণটিলা’ ছিল। তারা মসজিদের সামনে মূর্তি স্থাপন এবং পূজা-অর্চনারও দাবি জানিয়েছেন। গত ঈদুল ফিতরের নামাজ ঈদগাহের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মসজিদের বাইরে রাস্তায়ও নামাজের কাতার করার অপরাধে দুই হাজার মুসল্লির বিরুদ্ধে উত্তর প্রদেশে মামলা করা হয়েছে বলে জানা যায়। একই প্রদেশে মোরাদাবাদ জেলার ছাজলাট এলাকার একটি বাড়িতে ২৬ জন মুসলমান একত্রে জামাতে নামাজ আদায় করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সর্বশেষ, গত ১১ জুলাই মহারাষ্ট্রের জুলগাঁওয়ের একটি ৮০০ বছরের পুরনো মসজিদ রাজ্য সরকারের কালেক্টরেট অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। ‘বজরং’ এবং ‘আরএসএস’-এর সাথে সংশ্লিষ্ট ‘পা-বাওয়াদা সংঘ সমিতি’ নামের একটি অনিবন্ধিত সংগঠন দাবি করে যে, হিন্দুদের উপাসনালয়ের ওপর এখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। ফলে তারা এই মসজিদটি দখল করার আবেদন জানায়। এ নিয়ে শুনানি চলাকালে হঠাৎ করেই জেলা কালেক্টর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মসজিদের ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা কেবল নোটিশ পাওয়ার পর এসব দাবি সম্পর্কে জানতে পারেন। ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ (এএসআই) বলেছে, এটি একটি প্রাচীন কাঠামো। ১৯৮৬ সাল থেকেই ‘এএআই’ এই স্থাপনার সাথে জড়িত হওয়ার পর থেকে মসজিদে নামাজ আদায় করা হচ্ছে (নয়া দিগন্ত, ১৭ জুলাই ২০২৩)।
ভারতে মাদরাসাগুলো আক্রমণের আরেকটি লক্ষবস্তু। সম্প্রতি কর্নাটকের বিদারে অবস্থিত ৫৫০ বছরেরও পুরনো একটি মাদরাসায় উগ্রবাদী হিন্দুরা জোরপূর্বক প্রবেশ করে পূজা করে এবং ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘হিন্দুধর্মের জয়’ সেøাগান দেয়। এ দিকে একাধিক সরকারি বিধি লঙ্ঘনের অজুহাতে উত্তর প্রদেশে বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দসহ ৩০৭টি মাদরাসাকে বেআইনি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার (নয়া দিগন্ত. ২৫ অক্টোবর ২০২২)। ২০২২ সালের আগস্ট নাগাদ আসামে হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের তিনটি মাদরাসা বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক বার বার বলেছেন, আসামের মাদরাসা শিক্ষকদের একটি অংশ ‘আলকায়েদা’ ও বাংলাদেশের ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সঙ্গে কাজ করে। পুলিশের মহাপরিচালক ভাস্কর জ্যোতি মোহন্ত বলেছেন, নতুন করে আসামে আর কোনো বেসরকারি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হবে না (প্রথম আলো-২৭ আগস্ট ২০২২)। আর মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ^শর্মা গত ২১ জানুয়ারি আসামে মাদরাসা সংখ্যা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গত ৩১ মার্চ বিহারে শতবর্ষ পুরনো একটি মাদরাসায় হাজার খানেক, উগ্র হিন্দুরা প্রবেশ করে পাঠাগার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সম্প্রতি তারা মুসলিম বিদ্বেষের আরেকটি উদাহরণ স্থাপন করেছে। গত বছর ২৩ অক্টোবর আসামের গোয়ালপাড়া জেলার লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের ডবকারভিটা গ্রামে বাঙালি মুসলমানদের একটি সংগ্রহশালা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ঐ সংগ্রহশালায় লাঙল, মাছ ধরার সামগ্রী ইত্যাদি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল। হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রেমের ঘটনাগুলোকে ‘লাভ জিহাদ’ আখ্যা দিয়ে মুসলমান নির্যাতনের ঘটনাও ঘটানো হচ্ছে। উত্তর ভারতের শান্ত পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ডের ছোট্ট নগর ‘পুরোলায়’ ১৪ বছরের এক হিন্দু কিশোরীর সাথে এক মুসলমান তরুণের প্রেমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম বিবাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত ২৬ মে এই প্রেমের ঘটনা জানাজানি হলে পুরোলায় ‘লাভ জিহাদের’ বিরুদ্ধে হিন্দু উগ্রবাদীরা মিছিল বের করে। এলাকার মুসলমানদের বাড়িঘরের দেয়ালে কালো কালি দিয়ে ‘ক্রস’ চিহ্ন এঁকে দেয়া হয় এবং ১৫ জুনের মধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দেয়া হয়। মুসলমানদের বেশ কিছু দোকান ভাঙচুর করা হয় এবং ১২টি পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। শহরটিতে ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে মাত্র ৫০০ মুসলমানের বসতি রয়েছে।
মসজিদ-মাদরাসাগুলোকে লক্ষবস্তু বানানোর সাথে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনও চলছে সমান তালে। গত ১ এপ্রিল কর্নাটকে ইদ্রিস পাশা নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে জনৈক পুনিত কেরেহাল্লি গো-রক্ষার নামে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের জুনাইদ ও নাসির নামের দুই মুসলিম যুবক নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে হরিয়ানা রাজ্যের এক গোয়ালঘর থেকে তাদের অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ ‘বজরং’ দলের লোকজন তাদেরকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। কিছু দিন আগে কর্নাটকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কিছু সন্ত্রাসী এক মুসলমানের মুরগির দোকানে গিয়ে ‘হারাম’ গোশত দিতে বলে। দোকানদার দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তাকে বেদম প্রহার করা হয়। গত বছর মধ্য প্রদেশে মুসলমান সন্দেহে ‘বানওয়ারলাল’ নামের এক জৈন সম্পদায়ের বৃদ্ধকে দীনেশ কুশওয়াহা নামের এক উগ্রবাদী হিন্দু পিটিয়ে হত্যা করে। এমনকি শিশুরাও উগ্রবাদীদের নৃশংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র শায়ান কর্নাটকের ম্যাঙ্গালুরু শহরে একটি মসজিদ থেকে কুরআনের ক্লাস করে বাড়ি ফেরার পথে একদল উগ্র হিন্দু যুবক তাকে আক্রমণ করে হত্যা করে (নয় দিগন্ত, ৩০ জুন ২০২২)।
গুজরাটের খেদা জেলার উধেলা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কে বা কারা পাথর ছুড়ে মারার অভিযোগে স্থানীয় পুলিশ ১৮ জন মুসলমান যুবককে গ্রেফতার করে তাদেরকে খুঁটির সাথে বেঁধে বেধড়ক পিটুনি দেয়। আর আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো উল্লাসে মেতে উঠে। ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারনেশনাল’ ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। এ দিকে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে এক হিন্দু যুবকের খুনের ঘটনায় দিলশাদ গার্ডেনের এক জনসভায় বিশ^ হিন্দু পরিষদ নেতা মুসলমানদের সরাসরি ‘হাত ও গলা কাটার’ হুকুম দিলেও পুলিশ তা নীরবে শুনেছে। ভারতের সংবাদ ভাষ্যকার আকোলকার বলেছেন, মহারাষ্ট্রে ২০২২ সালের জুন মাস থেকে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মুসলিমবিরোধী সমাবেশ বেড়েছে। এরই মধ্যে কর্নাটকে চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জন্য বরাদ্দ থাকা ৪ শতাংশ কোটা বাতিল করে দেয় রাজ্য সরকার (নয়া দিগন্ত, ২৭ মার্চ ২০২৩)। মুসলিম বিদ্বেষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, ইতিহাস বিজড়িত বিভিন্ন স্থাপনার মুসলিম নামসমূহ পরিবর্তন করে হিন্দু নাম দেয়া হচ্ছে। যেমন রাষ্ট্রপতি ভবনের বিখ্যাত ‘মোগল গার্ডেন’-এর নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘অমৃত উদ্যান’। এভাবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক শহর, নগর, জনপদ ও সড়কের নাম বদলানো শুরু হয়েছে (প্রথম আলো, ১১ মার্চ ২০২৩)। এমনকি মুসলমানদের ইতিহাসও মুছে দেয়ার চেষ্টা চলছে। ২০২৩ সালের ভারতের দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বই থেকে মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সংবলিত অধ্যায়টি সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ দিকে অভূতপূর্বভাবে গত বছর স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী এলাকা বারানসিতে অখণ্ড ভারতের সংবিধান প্রকাশ করা হয়েছে। ৩০ জন হিন্দু ধর্মগুরু এবং পণ্ডিত এই খসড়া তৈরি করেন। সেই অখণ্ড ভারত হবে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’; সেখানে মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের কোনো ভোটাধিকার থাকবে না। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা এই অখণ্ড ভারতের অধীনস্ত থাকবে। স্বাধীনতার শতবর্ষ তথা ২০৪৭ সালে এই অখণ্ড ভারত বাস্তবায়ন করা হবে (প্রথম আলো-১৬ আগস্ট-২০২২)। মাত্র কিছু দিন আগে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মা মুসলমানদের মহানবী সা:-কে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করে টিভি টকশোতে। এই নূপুর শর্মাকে গ্রেফতারের আবেদন করলে সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ার নির্দেশ দেন। অপর দিকে মহানবী সা:-কে নিয়ে অশ্লীল বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয় উত্তর প্রদেশে। এই বুলডোজার নীতি অনুসরণ করে পরে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কর্নাটক, গুজরাট ইত্যাদি বিজেপি শাসিত রাজ্যে বিভিন্ন অজুহাতে মুসলমানদের ঘরবাড়িতে বুলডোজার চালিয়ে দেয়া হয়।