পুলিশ স্বীকার করেছে যে ব্রিটেনের বিমানবন্দরগুলোতে মুসলিম নারীদের হিজাব খুলতে বাধ্য করা বেআইনি সাব্যস্ত হতে পারে। এই আচরণ করা হয়েছিলো একজন ভুক্তভোগীর সাথে, যাকে তার হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল। মেট্রোপলিটন পুলিশ স্বীকার করেছে যে, পুলিশ কর্মকর্তারা ছবি তোলার জন্য যখন কোনো নারীকে তার হিজাব খুলতে বাধ্য করে তখন সেটি তার মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল এবং ধর্মীয় রীতি পালনে নারীদের অধিকারেরও লঙ্ঘন।
অক্টোবর ২০১৮ সালে হিথ্রো বিমানবন্দরে আসিয়াহ নামে ২৫ বছর বয়সী এক নারীর সাথে পুরুষ কর্মকর্তাদের একটি রেকর্ড হওয়া সাক্ষাৎকারের লিখিত রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে যে, পুলিশ তাকে বলছিল, ‘আমরা জোর করে আমাদের প্রয়োজনীয় ছবি তুলতে পারি।’
ওই নারীর ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা একটি বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী ক্ষমতা আইন ব্যবহার করেছিল, যা ধারা-৭ নামে পরিচিত। ওই ক্ষমতা আইনে যেকোনো ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার সন্দেহের কোনো ভিত্তির বিষয়ে না জানিয়েই ব্রিটেনের বিমানবন্দর এবং বন্দরগুলোতে আটকানো এবং তল্লাশি চালানোর অনুমোদন দেয়। ব্রিটেনে ২০০০ সালে প্রণীত সন্ত্রাস দমন আইনের ৭ ধারায় বিমানবন্দর ও বন্দরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্দেহবশত যে কাউকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত আটক রাখতে পারে। এ সময় আটক ব্যক্তির নীরব থাকার কোনো সুযোগ নেই। তাদের ফোন, কম্পিউটার ও পাসওয়ার্ড সোপর্দ করতে হয়। এমনকি চাওয়ামাত্র আঙুলের ছাপ এবং ডিএনএ নমুনাও প্রদান করতে হয়। আর ওই আইনের কারণে সীমান্তে বিভিন্ন ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা হয়; কিন্তু পরীক্ষার নামে মুসলিমদের হয়রানির অভিযোগ ও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কোনো ব্যক্তি যদি কর্মকর্তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয় বা মাথার হিজার সরাতে অসম্মতি জানায় তবে এটি একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়। সাক্ষাৎকারের সময় কর্মকর্তারা অসিয়াহকে বলেছিল, ‘আপনি গ্রেফতার হতে পারেন কারণ আপনি আমাদের চুলের ছবি তুলতে দেবেন না।’
বাহরাইনে এক বোনের সাথে দেখা করতে পরিবারের সাথে বেড়াতে আসা আসিয়াহ এ বিষয়ে বলেন, তার হিজাব অপসারণের অনুরোধে তিনি ‘অস্বস্তি’ বোধ করছিলেন, তবে একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন যে, তিনি হিজাব পরা অবস্থায় তাকে শনাক্ত করতে পারেননি। সাক্ষাতকারের প্রকাশিত অনুলিপিতে কর্মকর্তাদের বলতে শোনা যায়, ‘আপনার (আসিয়াহ) মুখে আপনার কানের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নেই। ধরুন, আপনার কোনো কানই নেই। আপনি দেখতে কেমন তা আমরা জানি না।’
মানবাধিকার সংগঠন কেইজ জানিয়েছে, তারা এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনার বিষয়ে জেনেছে। ওইসব ঘটনা ব্রিটেনের বিমানবন্দরগুলোতে মুসলিম মহিলাদের লক্ষ্যবস্তুতে পারিণত করে পুলিশ কর্তৃক একটি অঘোষিত কৌশলকেই প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।
কেইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ রাব্বানি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে পুলিশ জানত তারা মুসলিম নারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। অতএব অসিয়াহর ক্ষেত্রে অন্যান্য নারী যাদের হিজাব জোর করে খুলে ফেলা হয়েছে তাদের নজির স্থাপনের বিষয়টি এড়ানোর জন্য তারা আদালতের বাইরে মীমাংসার পথ বেছে নিয়েছে।’ ধারা-৭ বর্জন করার এখনই উপযুক্ত সময়, বলেন রাব্বানি।
হিথ্রোর ঘটনার পরে অসিয়াহ মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারিক পর্যালোচনা দায়েরের পর মামলাটি জিতেছিলেন। তার সাক্ষীর বিবৃতিতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, কিভাবে কর্মকর্তাদের দ্বারা শক্তি প্রয়োগের হুমকি তাকে আতঙ্কিত করেছিল। ওই মামলার ধারাবাহিকতায় মেট্রোপলিটন পুলিশ আসিয়াহকে ১৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছিল। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে নতুন দিকনির্দেশনা জারি করতে বা অসিয়াহর মতো নারীদের উদ্বেগের সমাধান করতে সমর্থ হয়নি।
মুসলিমদের এমন হয়রানির ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন ‘কেইজ’ বলছে, সন্ত্রাস নির্মূলের ওই আইনটির প্রয়োগ মুসলিমদের প্রতি এতটাই বৈষম্যমূলক যে, এটি ইসলামবিদ্বেষী আচরণে পরিণত হয়েছে। গত বছর প্রকাশিত কেইজ-এর এ সংক্রান্ত এক রিপোর্টে বলা হয়, চার লাখ ২০ হাজার ঘটনা বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি দেখেছে , মাত্র ০.০০৭ শতাংশ ক্ষেত্রে আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। অথচ জিজ্ঞাসাবাদের নামে হাজার হাজার লোককে হয়রানি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের বোরকা ও হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়।
দ্য গার্ডিয়ান