রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় ২২ বছরের কারাদণ্ড

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৫৬ বার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার অভিযোগে দ্য প্রাউড বয়েজ নামে একটি সংগঠনের সাবেক নেতাকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের আসনে আক্রমণ চালানোর দায়ে কোনো একজন মূল হোতার বিরুদ্ধে এটাই এখনো পর্যন্ত দেয়া দীর্ঘতম সাজা।

গত মে মাসে হেনরি এনরিকে টারিও নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার ষড়যন্ত্রসহ অন্য অভিযোগ আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে এ ধরনের অভিযোগ আনা হতো।

৩৯ বছর বয়সী টারিও দাঙ্গার সময় ওয়াশিংটনে না থাকলেও তিনি কট্টর ডানপন্থী সংগঠনটির সংশ্লিষ্টতায় সহায়তা করেছেন।

ক্যাপিটল হিলে হামলার অভিযোগে এক হাজার এক শ’র বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার তার সাজা ঘোষণার আগে টারিও ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির দাঙ্গায় নিজের ভূমিকার জন্য পুলিশ ও ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমা চান। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা কংগ্রেস ভবনে হামলা চালায়- যেখানে জো বাইডেনের জয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছিল।

ওয়াশিংটনের ফেডারেল কোর্ট হাউজে তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত লজ্জিত এবং হতাশ। আমার বাকিটা জীবন এই লজ্জা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে।’

কমলা রঙের কারাগারের পোশাক পরা টারিও আরো বলেন, ‘আমি আমার নিজেরই সবচেয়ে খারাপ শত্রু ছিলাম। আমার অকারণ গর্ব আমাকে বুঝিয়েছিল, আমি একজন ভুক্তভোগী এবং আমাকে অন্যায্যভাবে টার্গেট করা হয়েছে।’

ট্রাম্প ২০২০ সালের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হেরে গেছেন উল্লেখ করে টারিও বলেন, ‘আমি রাজনৈতিকভাবে গোঁড়া নই। কারো ক্ষতি করা বা নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেয়াও আমার লক্ষ্য ছিল না। নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেয়া যে সম্ভব তা আমি মনেও করতাম না। আমার প্রতি দয়া করুন।’

টারিও বিচারকদের বলেন ‘আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি আমার কাছ থেকে আমার ৪০-এর দশক ছিনিয়ে নেবেন না।’

এর আগে একপর্যায়ে তাকে চোখ থেকে অশ্রু মুছতে দেখা যায় এবং তার মা বিচারকদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

প্রাউড বয়েজের ন্যাশনাল চেয়ারম্যান ছিলেন টারিও। এটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কট্টর ডানপন্থী এই সংগঠনটি নিজেদেরকে শুধু পুরুষদের পানশালা বা ‘অল মেল ড্রিংকিং ক্লাব’ বলে বর্ণনা করত।

তারা নিজেদের ট্রাম্পের পদাতিক সেনা মনে করত এবং প্রায়ই রাস্তায় কট্টর বামপন্থী ফ্যাসিবাদ বিরোধী সক্রিয়কর্মীদের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হতো।

মঙ্গলবার তার আইনজীবী তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, তার মক্কেল একজন ‘কিবোর্ড নিনজা’ এবং ‘বিপথগামী দেশপ্রেমিক’- যিনি ‘আবোল-তাবোল কথা বলেন’। কিন্তু সরকার উৎখাত করার মতো কোনো ইচ্ছা তার ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের জেলা জজ টিমোথি কেলি অবশ্য তুলে ধরেন, টারিও এর আগে তার কোনো কাজের জন্য কখনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার ষড়যন্ত্র একটি মারাত্মক অভিযোগ। এই ষড়যন্ত্রের মূল নেতা ছিলেন টারিও।’

এর আগে মে মাসে টারিওর বিরুদ্ধে বাধা প্রদান ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, নাগরিক বিশৃঙ্খলা এবং সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।

প্রসিকিউটররা তার কাজকে ‘সুচিন্তিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তার ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দাবি করেছেন। তবে প্রতিপক্ষ ১৫ বছরের সাজার আবেদন করেন।

বিচারকরা সাজা ঘোষণার সময় টারিও নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আদালত থেকে চলে যাওয়ার সময় টারিও পাবলিক গ্যালারি থেকে তার পরিবারের উদ্দেশে হাত নাড়ান এবং শান্তির চিহ্ন প্রদর্শন করেন।

তার আইনজীবীরা বলছেন, তারা আপিল করার পরিকল্পনা করছেন।

২০২০ সালের নির্বাচনের পর টারিও এবং প্রাউড বয়েজ গ্রুপের অন্য সদস্যরা ট্রাম্প ক্ষমতা ছেড়ে দিলে সহিংসতা ও অস্থিরতার সতর্কবাণী এবং অনলাইনে হুমকিমূলক পোস্ট দেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাপিটল দাঙ্গার দু’দিন আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রবেশ করার সময় পুলিশ তাকে আটকে দিয়েছিল।

টারিও নিজেকে একজন আফ্রো-কিউবান বংশোদ্ভূত হিসেবে দাবি করেন। তাকে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের একটি ব্যানার পোড়ানোর অভিযোগে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানায় গ্রেফতার করা হয়। ওই ব্যানারটি তিন সপ্তাহ আগে শহরের একটি আফ্রিকান-আমেরিকান গির্জা থেকে নেয়া হয়েছিল।

তার কাছ থেকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গোলাবারুদ ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়, যা শহরটির আগ্নেয়াস্ত্র আইনের পরিপন্থী। তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছিল এবং রাজধানী ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

দাঙ্গার দিন তিনি বাল্টিমোরে ছিলেন।

ট্রাম্পের সমর্থকরা যখন কংগ্রেস ভবনে হামলা চালায় তখন টারিও অনলাইনে এক পোস্টে বলেছিলেন, ‘তিনি শো উপভোগ করছেন।’

দাঙ্গাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেন, ‘যা করার দরকার তা করো।’

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল দাঙ্গায় জড়িত মূল হোতাদের সাজা শুনানির শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ ১৮ বছরের কারাদণ্ডের সাজা গত সপ্তাহে দেয়া হয়েছে আরেক প্রাউড বয়েজ সদস্য ইথান নরডিনকে। এছাড়া মে মাসে আরেকটি কট্টর ডানপন্থী আধা-সামরিক সংগঠন ওথ কিপার এর প্রতিষ্ঠাতা স্টুয়ার্ট রোডসকেও সাজা দেয়া হয়।

ক্যাপিটল দাঙ্গায় নিজেদের ভূমিকার জন্য গত সপ্তাহে প্রাউড বয়েজের আরো তিন সদস্যের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

সাবেক মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্য ডমিনিক পেজোলা এবং যাকারি রেল যথাক্রমে ১০ এবং ১৫ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন।

জো বিগস নামে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক সদস্যের ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

২০২৪ সালে আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এই সাজাপ্রাপ্তদের সবার কিংবা বেশিরভাগের সাজা মওকুফ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মি. ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অনুমতি বহির্ভূত এলাকায় প্রবেশ করা থেকে শুরু করে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস, আক্রমণ এবং ষড়যন্ত্র। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় ২০০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

তদন্ত এখনো চলছে। ভিডিওতে ধরা পড়া পুলিশ কর্মকর্তা বা মিডিয়ার সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে এমন অন্তত ১৪ জন মূল হোতাকে এখনো খুঁজছে এফবিআইয়ের সদস্যরা।
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com