সুপার ফোর সুখকর হলো না বাংলাদেশের। পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হারতে হলো টাইগারদের। ১৯৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৩৯. ৩ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান।
বুধবার লাহোরে মুখোমুখি হয় দু’দল। এদিন পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৯৪ রানের। ছোট এই লক্ষ্য তাড়া করতে তাই কোনো চাপ ছিলো না, নিতে হয়নি ঝুঁকিও। স্বাচ্ছন্দ্যেই পাড়ি দিয়েছে পথ।
যদিও বুধবার বড় হয়নি পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি, দলীয় ৩৫ রানের মাথায় ফখর জামানকে ফিরিয়ে প্রথম আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন শরিফুল ইসলাম। ফখর ফেরেন পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে, ৩১ বলে ২০ করে।
আরেক ওপেনার ইমাম উল হক অধিনায়ক বাবর আজমকে নিয়ে এগোতে থাকেন লক্ষ্যপানে। ৭৪ রানে থামে এই জুটি। বাবরের স্ট্যাম্প ভেঙেই এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। বরাবরই ইনসুইং করে ভেতরে আসা বলে অস্বস্থিবোধ করে থাকেন বাবর। আর সেখানেই ফোকাস করেন তাসকিন। বাবরকে তার দুর্বলতার জায়গাটা আরো একবার মনে করিয়ে দেন তিনি।
তবে একপ্রান্ত আগলে খেলতে থাকেন ইমাম। বেশ কয়েকবার তার বিপক্ষে এলবিডব্লুর আবেদন করা হলেও রিভিউ সহায়তায় বেঁচে যান তিনি। তাকে সঙ্গ দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তাদের জুটিতেই তিন অংক ছুঁয়েছে পাকিস্তান। পাড়ি দেয় দেড় শ’র মাইলফলকও। ১০৫ বলে ৮৫ রান আসে এই জুটিতে।
জুটি ভাঙে শেষ মুহূর্তে এসে। বারবার ভাগ্যকে পাশে পাওয়া ইমাম ফেরেন এবার ৩৩তম ওভারে এসে। মিরাজের ওপর চড়াও হতে গিয়ে ফিরতে হয় তাকে। প্রথম তিন বলে ছক্কা-চারে ১০ রান নেয়ার পর ফের বড় রান বের করতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। ৮৪ বলে ৭৮ রান করেছেন র্যাঙ্কিংয়ে সেরা তিনে থাকা ইমাম।
ইমাম আউট হবার পর ফিফটি তুলে নেন রিজওয়ানও। আগা সালমানকে নিয়ে ইনিংসের শেষটাও টেনে নিয়ে আসেন তিনি। ৮ ওভার তিন বল বাকি থাকতেই নিশ্চিত করেন দলের জয়। রিজওয়ান ৭৯ বলে ৬৩ ও আগা সালমান অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ১২ রানে।
এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং ধসে বিপর্যস্ত হয় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর এবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও ২০০ স্পর্শ করতে ব্যর্থ দলের ইনিংস। সাকিব-মুশফিকের জোড়া অর্ধশতকের পরও খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওভার। ৩৮.৪ ওভারে মাত্র ১৯৩ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ।
এদিন আরো একবার জ্বলে উঠেন হারিস রউফ। বাংলাদেশের ইনিংসের কোমর ভেঙে দেন তিনি। মাত্র ১৯ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট এই পেসার। ৩ উইকেট নেন নাসিম শাহ। ৩ রান তুলতেই বাংলাদেশ শেষ ৪ উইকেট হারায়। আর শেষ ৪৬ রানে হারায় ৬ উইকেট!
সাকিব-মুশফিক অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন, তবে বাকিদের ব্যর্থতায় তা আর পূর্ণতা পায়নি। সাকিব ৫৭ বলে ৫৩ ও মুশফিক করেন ৮৭ বলে ৬৪ রান।
আগের ম্যাচেই ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শতক হাঁকিয়েছিলেন, আজ পাকিস্তানের বিপক্ষেও তাই তার থেকে প্রত্যাশা ছিল ঢের। তবে ব্যর্থ হয়েছেন মিরাজ, গোল্ডেন ডাক মেরেছেন তিনি। কোনো রান যোগ করার আগেই প্রথম উইকেটের পতন। এরপর আর সেখান থেকে বেরই হতে পারেনি টাইগাররা।
এরপরও লিটন দাস ও নাইম শেখ হাল ধরার চেষ্টা করেছে। তবে তা খুব অল্প সময়, ৪.৫ ওভারেই হয় দ্বিতীয় উইকেটের পতন হয়; ফেরেন লিটন। আরো একবার ভালো শুরুর ‘আত্মহত্যা’ তার, উইকেটের পেছনের বলে খোঁচা দিয়ে ফিরেছেন ১৩ বলে ১৬ করে। এরপর পরপর দুই ওভারে জোড়া উইকেট তুলে বাংলাদেশ ইনিংসের কোমর ভেঙে দেন হারিস রউফ।
ফিল্ডিং করতে গিয়ে নাসিম শাহ চোট পাওয়ায় একটু আগেই বোলিংয়ে আসেন হারিস। তাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য। প্রথমে নাইম শেখকে ২০ ও তাওহীদ হৃদয়দের স্ট্যাম্প ভাঙেন ৯ বলে ২ রানে রেখে। এশিয়া কাপটা মোটেও ভালো যাচ্ছে না হৃদয়ের। প্রথম দুই ম্যাচেও হাসেনি তার ব্যাট। পাওয়ার প্লে শেষে সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৯ /৪।
সেখান থেকে দলটে টেনে তুলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। ধসের মুখেও বলের সাথে পাল্লা দিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দুজনে। দু’জনেই স্পর্শ করেন অর্ধশতক, গড়েন শত রানের জুটি। তবে এরপর আর আগায়নি, ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সাকিব ফেরায় ভাঙে এই জুটি।
অবশ্য মুশফিককে সাথে নিয়ে অধিনায়কের মতোই খেলছিলেন সাকিব। ধসের মুখে দাড়িয়ে অর্ধশতক তুলে নেন। স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন বড় সংগ্রহের। তবে আট ইনিংস পর পাওয়া ফিফটি আর টেনে নিতে পারেননি। ফাহিম আশরাফকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়েন সীমানায়। ১৪৭ রানে তিনি ফেরার পর আর মাত্র ৪৬ রান যোগ হয়।
সাকিব ফেরার পরপরই ফিফটি তুলে নেন মুশফিক, যা তার ক্যারিয়ারের ৪৬তম ওয়ানডে ফিফটি। শামিম পাটোয়ারীকে নিয়ে তিন ছন্দটা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। তবে শামীম ২৩ বলে ১৬ করে আউট হলে তা আর হয়নি। ৩৮তম ওভারে ফেরেন মুশফিকও, ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৪ করেন তিনি। ১২ রান আসে আফিফের ব্যাটে।