‘ছায়াবাজ’ সিনেমাটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে। এই সিনেমার ভারতীয় অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে এনেছিলেন গুরুতর অভিযোগ। জানিয়েছিলেন, কক্সবাজারে শুটিং করার সময় অনুমতি না নিয়ে তার হাত স্পর্শ করেছেন সিনেমার নৃত্য পরিচালক মাইকেল বাবু। এরপর বেরিয়ে আসে এ নায়িকার অপেশাদার আচরণের কথা।
প্রযোজক মনিরুল ইসলাম জানান, যৌন হয়রানি নয়, বরং নায়িকাই নৃত্যপরিচালককে ‘লাথি’ মারতে চেয়েছিলেন। মাইকেল প্রযোজকের কাছে জায়েদ-সায়ন্তিকার অপেশাদার আচরণ নিয়ে অভিযোগও করেছিলেন। এমন কথা শোনার পর ভারতের আনন্দবাজারে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রযোজককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন সায়ন্তিকা। আর এবার নায়িকার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুললেন প্রযোজক।
মনিরুল ইসলাম ভাষ্য, ‘সায়ন্তিকার সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হাস্যকর। হাত ধরা নিয়ে সায়ন্তিকার সমস্যা মাইকেল বাবুর সঙ্গে। তিনি পরিচালককে ফোন করে মাইকেল বাবুকে মারতেও চেয়েছিলেন। এখন আমার বিরুদ্ধে সায়ন্তিকা কেন অভিযোগ করছেন, সেটাই তো বোধগম্য নয়। অপেশাদার আচরণ আমি নই, সায়ন্তিকা করেছেন। চুক্তির বাইরে আমরা তাকে ৫০ হাজার রুপি দিয়েছি (বাংলা টাকায় প্রায় ৬৬ হাজার) পোশাকের জন্য। অথচ তিনি কোনো পোশাক নিয়ে আসেননি। এরপর আবার ড্রেসম্যান মনিরকে দিয়ে পোশাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেই পোশাকগুলোও সায়ন্তিকা ফেরত দিয়ে যাননি।’
এদিকে, গত ৩০ আগস্ট ঢাকায় আসেন সায়ন্তিকা। কথা ছিল ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে শুটিং করার। কিন্তু সেটা না করে গেল ৭ সেপ্টেম্বরই চলে যান তিনি।
সূত্র অনুযায়ী, গান দিয়ে শুরু হয় সিনেমার কাজ। নির্বিঘ্নেই শেষ হয় প্রথম গানের শুটিং। দ্বিতীয় গানের শুটিং চলাকালীন হঠাৎ করেই সায়ন্তিকা অভিযোগ করেন নৃত্য পরিচালক মাইকেলের বিরুদ্ধে। তার দাবি, নৃত্য পরিচালক অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তাকে স্পর্শ করেছে।
প্রযোজক মনিরুলের ভাষ্য, ‘সেদিন বিকালে ৫টার পর মাইকেল আমাকে জানায়, জায়েদ ও সায়ন্তিকা ড্রেস চেঞ্জের কথা বলে দুপুরে হোটেলে গিয়েছেন। তারা দীর্ঘ সময় পর স্পটে আসেন। তখন বিকাল ৫টা। সূর্যের আলো প্রায় পড়ে গেছে। দিনের সিকোয়েন্সটা তিনি এখন কীভাবে করবেন, সেটা মাইকেল জানতে চান আমার কাছে। আর রাতে সায়ন্তিকা আমাকে মেসেজ করেন, “যদি মাইকেল থাকেন তাহলে তিনি কাজ করবেন না।” পরদিন আমি স্পটে সবাইকে ডাকি। জানতে পারি, আমাকে বলা মাইকেলের কথাটা (অভিযোগ) সায়ন্তিকা শুনে ফেলেছিলেন। বিষয়টি তিনি ভালোভাবে নেননি। এরপর গানের কাজ দেড় ঘণ্টা হয়েছে। কিন্তু মাইকেলের একটি ডিরেকশন তিনি বুঝতে পারছিলেন না। মাইকেল তখন দেখিয়ে দেবেন কিনা জানতে চায় সায়ন্তিকার কাছে। সায়ন্তিকার চার আঙুল ধরে সেটা দেখিয়ে দেন। সায়ন্তিকা সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে নেন। এবং জিজ্ঞেস করেন, তিনি কেন হাতটা ধরেছেন? হাত না ধরে মুখে বলার কথা বলেন সায়ন্তিকা।’
ভারতীয় পত্রিকাতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী জানান, মূল সমস্যার নেপথ্যে রয়েছেন সিনেমার প্রযোজক। অভিনেত্রীর ভাষ্য, ‘বারবার আমি প্রযোজক মনিরুলের সঙ্গে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনো উত্তরই পাওয়া যায়নি। তার কোনো পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেই।’
সায়ন্তিকা জানান, দু’দিন ধরে কক্সবাজারে গিয়ে তিনি অপেক্ষা করেন। প্রযোজকের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। অভিনেত্রীর কথায়, ‘হঠাৎ বলা হলো নাচের দৃশ্যের শুটিং করা হবে! বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করার পরেও যখন মনিরুল উত্তর দেননি; তখন বলেছিলাম, আমি এই ভাবে কাজ করব না মাইকেলের সঙ্গে।’
নায়িকার দাবি, এত কিছুর পরেও প্রযোজক মনিরুল নাকি জানিয়েছিলেন, মাইকেলকে নিয়েই কাজ করতে হবে। ‘ছায়াবাজ’ সিনেমাটি পরিচালনা করছেন তাজু কামরুল।