বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

গণপরিবহনে নারী নিগ্রহ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৪০২ বার

সময়ের সাথে আমরাও তত উন্নত এবং আধুনিক হচ্ছি। দেশও উন্নত এবং আধুনিক হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মন-মানসিকতা এসব কি উন্নত হচ্ছে? বিষয়টা সত্যিই চিন্তার। আধুনিক হতে পেরেছি তবে মানসিকতায় নয়। এসব এ জন্যই বলছি, আমাদের দেশে এখনো নোংরামি আর নোংরা মানসিকতার প্রাবল্য চলছে।

আমি গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে বলছি। গণপরবিহন কতটা নারীবান্ধব, তা নিয়ে নানা সময়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও কোনোক্রমেই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নারীরা গণপরিবহনে চলাচল করতে গিয়ে নানা সহিংসতার শিকার হন। এমনকি গণধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে। যে কারণে বাংলাদেশে ৪৯ শতাংশ নারী গণপরিবহনকে অনিরাপদ মনে করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমারা খুব কম পুরুষই এর প্রতিবাদ করি। এর ফলে এসব গণপরিবহনে যৌন হয়রানি দিন দিন বাড়ছে।

২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জে শুভেচ্ছা পরিবহনে চলন্ত বাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনা। ওই ঘটনায় বাসচালক ও সহযোগী গ্রেফতার হন। এরপর ২০১৫ সালের ১২ মে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে চলন্ত বাসে এক পোশাককর্মীকে ধর্ষণ করে ফেলে দেন বাসচালক ও চালকের সহকারী। গত বছরের ২৩ জানুয়ারি বরিশালে সেবা পরিবহনের একটি বাসে দুই বোনকে ধর্ষণ করে পাঁচ পরিবহনকর্মী। গত বছরের ২৫ আগস্টের কথা। ময়মনসিংহের একটি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত রূপা, বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাসে ময়মনসিংহ ফিরছিলেন। রূপা যে বাসে ফিরছিলেন, সে বাসটি ওই দিন রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা অতিক্রম করার পর সব যাত্রী নেমে যায়। এরপর বাসটি কালিহাতি এলাকায় পৌঁছার পর বাসের মধ্যেই ধর্ষণের শিকার হন রূপা। পরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায় মধুপুর এলাকার জঙ্গলে। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইলে একটি বাসে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে বাসচালকসহ তিন পরিবহনকর্মী।

চলতি বছরের ৬ মে আবারো চলন্ত বাসে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শাহিনুর আক্তার তানিয়া নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি পিরিজপুরে আসার জন্য ঢাকার মহাখালী বাসটার্মিনাল থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে উঠেন।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে কটিয়াদি আসার পর তানিয়া ও অপর দুই যাত্রী ছাড়া বাকি সবাই নেমে যান। কিছু দূর যাওয়ার পর অন্য দুই যাত্রীও নেমে যায়। বাসটি কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের বিলপাড় গজারিয়ায় পৌঁছার পর তাকে ধর্ষণ করা হয়। সব কিছু মিলিয়ে গণপরিবহন যেন নারীর জন্য এখন এক আতঙ্কের নাম। প্রতিটি মুহূর্তে একজন নারীর ভয়ে থাকতে হয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমীক্ষা অনুযায়ী, গত এক বছরে গণপরিবহনে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর সংখ্যা ২১ জন।

সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক তা আমরা সবাই অনুভব করতে পারছি কিছুটা। গণপরিবহনে যাতায়াতকারী নারীদের বড় অংশই বলেছেন, নানাভাবে তারা হয়রানির শিকার হয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু অবস্থা এমন যে, বেশির ভাগ তা সেটি প্রকাশ করতেও বিব্রত বোধ করেন। শিক্ষা ও চাকরিসহ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন হাজার হাজার নারীকে ঘরের বাইরে বেরুতে হয়। বেশির ভাগেরই একমাত্র ভরসা হলো বাস, মিনিবাস কিংবা টেম্পোর মতো গণপরিবহন। অথচ এসব বাসেই নারীদের সম্ভ্রম হারাতে হয়। তাহলে নারীরা যাবে কোথায়?

আমাদের দেশে যৌন হয়রানি বন্ধে সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় সহায়তা চাইতে গেলে পুলিশের কাছে তেমন কোনো সহযোগিতাও পান না নারীরা। হ্যাঁ, সম্প্রতি এমন অভিযোগ করেছেন বেশ কিছু ভুক্তভোগী নারী। উল্টো নারীদের যেসব প্রশ্ন করা হয়, সেগুলোও এক ধরনের নিগ্রহ। তাহলে নারীদের ওপর এ অমানবিকতার দায় কে নেবে?
আমরা সবাই তো সাধু। কিন্তু আমরা এমন এক ধরনের সাধু, যারা চোরের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারি না। আসলে আমরা ভণ্ড। আমাদের মুখোশের আড়ালে বাস করে একেকটা পশু। কেউ বাসে কেউ ঘরে। ধর্ষণ, নির্যাতন নারীর ওপর চলছেই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com