আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেঁধে দেওয়া শর্ত মাথায় রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংস্কার আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রাজস্ব আদায়, মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হারসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এসব সংস্কার আনা হবে।
এদিকে আইএমএফের ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে হাতে পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। ঋণের ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া নানা সংস্কার ও শর্তের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় হয়েছে সংস্থাটি। সর্বশেষ আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে সফরে এমন ইঙ্গিত মিলেছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, বিনিময় হার এসব নিয়ে চাপে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। আইএমএফ এসব বিষয়ে সংস্কার করতে বলেছে। অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচনের আগে এসব সংস্কার সম্ভব নয়; নির্বাচনের পর সংস্কার আনা হবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর কথা ছিল এনবিআরের। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে এনবিআরের প্রায় চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা আহরণের কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে তিন লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়েছে আইএমএফ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে গত মাসে এ দেশের অর্থনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আইএমএফ। তখন একাধিক দফায় এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল।
আইএমএফ সময়ভিত্তিক কিছু লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রিজার্ভ, রাজস্ব আয় ইত্যাদি লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়নি। তবে সরকারের দিক থেকে আইএমএফের দলকে শর্ত পূরণ করতে না পারার কিছু কারণ তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের দিক থেকে বলা হয়েছে, আগামী জানুয়ারিতে যেহেতু বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ফলে এ সময়ের মধ্যে লক্ষ্যগুলো অর্জন করার বাস্তবতা নেই। একটু কমিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত নতুন লক্ষ্যমাত্রা চাইলে আইএমএফ তাতে সম্মতি প্রকাশ করে বলে অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত। শিগগিরই এ বিষয়ে জানা যাবে যে, বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে থেকে ৬৮১ মিলিয়ন ডলার পাচ্ছে, যদি না কোনো বড় শক্তি ভিন্ন কিছু করতে না চায়। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড় হতে পারে। বাংলাদেশের নেওয়া কর্মসূচিতে আইএমএফ খুশি। তারা পুরোপুরি সন্তোষ না হলেও তারা ঋণ দিতে রাজি।
আহসান এইচ মনসুরের আরও বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি এবার আরও কিছু নতুন ইস্যু এসেছে। যেমন শ্রম ইস্যু বড় হয়ে গেছে। বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। শ্রম পরিবেশ ঠিক করতেই হবে। মানবাধিকার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এসব বিষয়ে জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হবে সরকারকে। কিন্তু এসব বিষয়ে অতীত রেকর্ড ভালো নয়; ভালো করতে হবে।