বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কাকে এমপি ঘোষণা দেয়া হবে আর কাকে তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা হবে সব কিছুই তো প্রস্তুত আছে। এখনি ঘোষণা দিলেই তো হয়ে যায়। যারাই জিতবে তারা সবাই তো প্রধানমন্ত্রীর লোক- ‘অল দি প্রাইম মিনিস্টারস মেন’! এত নাটক, এত কাহিনী, এত হত্যা-গুম-খুন-গ্রেফতার-সহিংসতা করার কী দরকার?
বুধবার বিকেলে ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, গোটা দেশের জনগণ, সমস্ত বিরোধী দলগুলোর প্রচণ্ড বিরোধিতা এবং আন্তর্জাতিক মহলের অব্যাহত আহ্বান উপেক্ষা করে সরকার একতরফা প্রহসনের নির্বাচন করার অপরিণামদর্শী আত্মঘাতী খেলায় মেতে উঠেছে। সরকারের একগুয়েমী দেখে অনুমিত হচ্ছে তারা দেশ এবং জনগণকে ধ্বংস করেই তবে বিদায় নেবে। যখন দেশের ঘরে ঘরে ক্ষুধার জ্বালায় মরনাপন্ন মানুষ, অন্নের অভাবে কচু-ঘেচু সেদ্ধ খেয়ে প্রাণ বাঁচাচ্ছে, চারদিকে হাহাকার, অর্থনীতি বলে কিছু নেই, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। আর তো নিচে নামার পথ নেই। তার জীবনে এর চেয়ে সংকটাপন্ন সময় আর দেখেননি-এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী মতের গলা টিপে ঢাক-ঢোল-তবলা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির উৎকট উল্লাস চলছে দিকেদিকে। চলছে বিরোধীদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করার মোচ্ছব। জনগণ জানতে চায়, গণভবনের তালিকায় শুধুমাত্র নির্বাচনের নামে সিলমোহর দেয়ার জন্য কেন রাষ্ট্রীয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে? দেউলিয়া এবং বুভুক্ষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে কেন এই ভোটের নামে করা হচ্ছে ভেল্কিবাজী? কাকে এমপি ঘোষণা দেয়া হবে আর কাকে তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা হবে সব কিছুই তো প্রস্তুত আছে। এখনি ঘোষণা দিলেই তো হয়ে যায়। যারাই জিতবে তারা সবাই তো প্রধানমন্ত্রীর লোক- ‘অল দি প্রাইম মিনিস্টারস মেন’! এত নাটক, এত কাহিনী, এত হত্যা-গুম-খুন-গ্রেফতার-সহিংসতা করার দরকার কী?
তিনি বলেন, এখনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পচাত্তরের মতো শ্লোগান দিচ্ছে- ‘এক নেতা এক দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’। এখন আর শুধু একটি শ্লোগান না, এটা শেখ হাসিনা সরকার বাস্তবেই করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০০ বছরের পুরানো বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃত্বপরায়ণ শেখ হাসিনার রেজিমকে ভয়াবহ বাকশাল ২.০ বলে আখ্যায়িত করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সুতরাং যারা এই পাতানো সিলমোহরের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বা প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহযোগিতা করছেন, -তাদেরকে আমি বিএনপির পক্ষ থেকে উদাত্ত্ব আহ্বান জানাচ্ছি আপনাদের যদি ন্যূনতম দেশপ্রেম থাকে, যদি মনুষ্যত্ব থাকে, বিবেক বিবেচনাবোধ থাকে তবে ফিরে আসুন। আপনারা মীরজাফরের উত্তরসূরী হবেন না। ১৮ কোটি মুক্তিকামী মানুষের ঘৃণা রুদ্ররোষের শিকার হবেন না। প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী ভাগবাটোয়ারার পাতানোর নির্বাচনে কেউ কোনো সহযোগিতা করবেন না। ভোটাররা ভোটদান থেকে বিরত থাকুন। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা প্রত্যাহার করুন। অন্যথায় এই অমার্জনীয় অপকর্মের জন্য জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাসের পাতায় আপনাদের নাম বেইমান-মীরজাফরের পাশে উৎকীর্ণ থাকবে। দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। এই পরীক্ষা বার বার আসে না। আপনাদের একদিকে স্বাধীনতার পতাকা অন্যদিকে নাৎসীবাদী স্বৈরাচার-গোলামীর জিঞ্জির। আপনারা দেশপ্রেম ও ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করুন।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার হর্স ট্রেডিং শুরু করেছিল, কিন্তু তাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাতে বিএনপির সাচ্চা কাউকে হালুয়া রুটির লোভে রাজদলে হায়ার করতে পারেনি। গুটিকয় উচ্ছিষ্ট, পূর্ব থেকেই দল বিতাড়িত কিছু জনধিকৃতকে টাকার বিনিময়ে ভাগিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন লোক ভাগানোর দলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাদের লজ্জা হওয়া উচিত যে, দেড় বছর ধরে এতো রাষ্ট্রীয় লোক লস্কর মাঠে নামিয়ে এতো নগদ অর্থ বিতরণ, ব্লাকমেইলিং, এমপি-মন্ত্রী করার প্রলোভন দিয়ে পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো অবস্থা হলো। যাদের কিনে ভোটে ভিড়িয়েছে তাদের দুই-একজন ছাড়া কারো নাম পর্যন্ত শোনেনি দেশের মানুষ। এমপি হওয়ার জন্য জনগণের কাছে নয়, আওয়ামী লুটেরা চক্র এবং তাদের দোসররা এখন গণভবনের দিকে ছুটছে। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ চলছে। প্রতিদ্বন্দ্বীরা সবাই হাস্যকরভাবে আকুতি জানাচ্ছেন সংসদে যাওয়ার জন্য। তারা কেউ সরকার গঠনের কথা ভাবছেন না, তারা শুধু সংসদে যেতে চান। তাই তারা শেখ হাসিনার মুখের দিকে তাকিয়ে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনার তার রেজিমের প্রধান বিরোধীদল বানিয়েছেন যাদের সেই জাতীয় পার্টির মহাসচিব গতকাল বলেছেন, ‘সরকার আশ্বাস দিয়েছে বলেই নির্বাচনে এসেছি।’ কী ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে, তা জাপা মহাসচিবের বক্তব্যে স্পষ্ট। শেখ হাসিনার আর্শীবাদ ছাড়া দেশে কেউ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হওয়ার যোগ্যতাও নেই। গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ১২ কোটি ভোটারের কাছে আমাদের আহ্বান আপনারা কারো প্রহসনের নির্বাচন করার স্বার্থসিদ্ধিতে অংশ নেবেন না।
রিজভী বলেন, সরকারের ক্ষমতার লোভ মেটাতে গিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দেশের জন্য কলঙ্ক বয়ে এনেছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাতজন কর্মকর্তাই র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা। এবার নতুন করে আমেরিকা জানিয়ে দিয়েছে, পুলিশের বিশেষ শাখা সোয়াত’কে আর সহযোগিতা করা হবে না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অতি উৎসাহী কর্মকর্তা যারা সরকারের ক্ষমতালিপ্সা মেটাতে এভাবে দেশের সম্মান নষ্ট করছেন তাদেরকে অচিরেই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বিএনপি এখন কুয়াশার মধ্যে মিছিল করে। একথা শুনে সাধারণ মানুষ চাপা হাসি হেসেছে।