আতঙ্ক আর সচেতনার অভাবে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা বিভ্রান্তির তৈরি হয়েছে। নানা গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন মানুষজন। বিজ্ঞানীদের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যেও রয়েছে করোনা নিয়ে নানা প্রশ্ন। যার উত্তর খুঁজছে পুরো বিশ্ব। বিবিসির বরাত দিয়ে এমনই কিছু প্রশ্ন-উত্তর তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
আক্রান্তের সংখ্যা আসলে কত?
ইতোমধ্যে পরীক্ষা করে লাখ লাখ মানুষের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে অনেক গবেষকদের ধারণা, এই সংখ্যাটি মোট আক্রান্তের একটি অংশ মাত্র। বিষয়টিকে আরও বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে, যাদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে কিন্তু কোনো উপসর্গ সেভাবে এখনো প্রকাশ পায়নি।
কারও শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে সাধারণভাবে তার শরীরে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হয়। যদি সেই এন্টিবডি তৈরির একটি ভালো পদ্ধতি পাওয়া যায়, তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো আক্রান্তের সংখ্যা সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।
কতটা প্রাণঘাতী এই ভাইরাস?
আক্রান্তের সংখ্যা নিশ্চিত করে জানা না গেলে, মৃত্যুহারও সঠিকভাবে বলা সম্ভব না। বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান হিসাব করে বলা যায়, এখন পর্যন্ত মৃত্যুহার ৫ শতাংশের কম। তবে আক্রান্ত হলেও উপসর্গ দেখা যায়নি এমন রোগীর সংখ্যা বেশি হলে মৃত্যুহার কমে আসবে।
কী কী উপসর্গ
করোনা রোগের প্রাথমিক উপসর্গ জ্বর ও শুকনো কাশি। যেগুলো থাকলে সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া গলাব্যথা, মাথাব্যথা এবং কারও কারও ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার মতো উপসর্গও হয়ে থাকে। কিছু ঘটনায় রোগীর গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা লোপ পাওয়ার কথাও এসেছে। আবার সর্দি কিংবা হাঁচির মতো উপসর্গ, যেগুলো সাধারণ ফ্লুতে দেখা যায়, সেরকমও অনেকের মধ্যে দেখা যেতে পারে।
গবেষণা বলছে, উপসর্গ প্রকাশ না পাওয়ায় অনেকেই হয়তো নিজেদের অজ্ঞাতে ভাইরাসটি বহন করছেন এবং অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
শিশুদের থেকে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কতটুকু?
পরিসংখ্যান বলছে, এই ভাইরাসে শিশুদের আক্রান্ত হওয়া বা মৃত্যুর হার অন্য বয়সশ্রেণির তুলনায় অনেক কম। তবে ঝুঁকির বিষয় হচ্ছে, শিশুদের থেকে বড়দের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ তারা বড়দের কাছে যায়, মাঠে খেলতে যায়। তবে করোনা শিশুদের মাধ্যমে কতটা ছড়াচ্ছে, সেই চিত্রটি এখনো স্পষ্ট নয় গবেষকদের কাছে।
করোনাভাইরাস কোথা থেকে এলো
গত ডিসেম্বরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এক বাজার থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সার্সের করোনাভাইরাসের জ্ঞাতি ভাই এ নতুন ভাইরাসকে সার্স-সিওভি-২ নামেও ডাকা হচ্ছে। বাদুরে এই ভাইরাস দেখা গেলেও একটি মধ্যবর্তী কোনো প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের শরীরে এসেছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু গবেষকদের কাছে সেই যোগসূত্রটি এখনও স্পষ্ট নয়।
গরমে কী এর প্রকোপ কমে আসবে?
শীতকালে জ্বর-সর্দি সহজেই কাবু করে মানুষকে। গরমে এই সমস্যা কম হয়। তবে গরমকালে ভাইরাসটি সংক্রমণ কমবে কি না, তার নিশ্চিত কোনো প্রমাণ এখনও গবেষকরা খুঁজে পায়নি।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঋতু বদলে এই ভাইরাসের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রভাব যদি থেকেও থাকে, তা সাধারণ জ্বর-সর্দি বা ফ্লুর ভাইরাসের ক্ষেত্রে যে প্রভাব, তারচেয়ে কম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
গরমে যদি সংক্রমণের হার সত্যি কমে যায়, তাহলে এই আশঙ্কাও থাকবে যে শীতে হয়ত সংক্রমণের হার আবার বেড়ে যাবে। আর ওই সময়টায় হাসপাতালগুলোতে এমনিতেই সাধারণ ফ্লুর রোগীর ভিড় লেগে থাকে।
কারও কারও অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয় কেন?
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই মৃদু অসুস্থতা অনুভব করেন। তবে ২০ শতাংশের অসুস্থতা গুরুতর রূপ নেয়। এর একটি কারণ, ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যার যত সক্রিয়, তার মধ্যে অসুস্থতার মাত্রা হয়ত তত কম। এক্ষেত্রে জেনেটিক গঠনও গুরুত্বপূর্ণ।
একবার সেরে উঠলে আবার করোনা হতে পারে?
এ বিষয়ে নিয়ে এখনো এখনো অনেক জল্পনা কল্পনা আছে। বিজ্ঞানীদের কাছেও এর কোনো প্রমাণ নেই। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কারও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা একবার জয়ী হলে, সেই এন্টিবডি যে স্থায়ী হবে সেটি এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। একবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরও কারও কারও পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার কিছু খবর এসেছে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষায় ভুল থাকার সম্ভাবনা থেকেই যায়। অর্থাৎ এমন হতে পারে, পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসায় রোগীকে যখন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তখনও হয়ত তার মধ্যে সংক্রমণ ছিল।
আর এই ভাইরাসের সঙ্গে গবেষকদের পরিচয় যেহেতু মাত্র তিন মাসের, সেহেতু নিশ্চিত করে কিছু বলার মতো পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তও গবেষকদের হাতে নেই।
ভাইরাসটি কী নিজেকে বদলাচ্ছে?
ভাইরাসের ক্ষেত্রে জিনগত পরিবর্তন খুব সাধারণ ঘটনা। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জিনকাঠামোতে ওই পরিবর্তন খুব বড় কোনো পার্থক্য তৈরি করে না। মনে হতে পারে যত দিন যাবে, এ ভাইরাস মানুষের জন্য তত কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তবে সেটা যে হবেই, তা নিশ্চিত ভাবে এখনই বলা যাচ্ছে না।
সমস্যাটা হচ্ছে, ভাইরাস যদি নিজেকে বদলে ফেলতে পারে, তাহলে শরীরে তৈরি হওয়া এন্টিবডি হয়তো আর তাকে চিনতে পারবে না। তখন পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।