নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারাদণ্ডের রায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। সোমবার সেগুনবাগিচায় নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
বিকেলে রায় ঘোষণার পর পররাষ্ট্রসচিবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না? জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, একজন ব্যক্তির কারণে রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র সম্পর্কে প্রভাব না পড়াই স্বাভাবিক। রায়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়েছে, তাছাড়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সুতরাং এটি আইনের চলামান প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে। তাই এ নিয়ে এখনই আর কিছু বলতে চাই না।
ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি দেয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেয়া হয়নি। মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেয়া হয় নি। অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ৯ নভেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজন বিবাদী লিখিতভাবে আদালতকে বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী।
কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেয়া হয়ে থাকে।
মামলায় নিয়োগ স্থায়ী না করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রশাসনিক ও দেওয়ানি মামলার বিষয়। আদালতে দাখিল করা লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়, সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। মামলায় রায় ঘোষণার পর একই আদালতে জামিনের আবেদন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আপিলের শর্তে তাঁকে এক মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দেন আদালত।