রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

‘বরই’ খেয়ে ২ শিশুর মৃত্যু ঘিরে আতঙ্ক, উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরাও

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৪৯ বার

কুড়িয়ে আনা বরই খেয়ে অসুস্থ হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু এবং পরে এর প্রকৃত কারণ না জানা যাওয়ায় ‘অজানা ভাইরাস’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহীর সাধারণ মানুষের মধ্যে। এদিকে, মারা যাওয়া দুই শিশু এবং আইসোলেশনে থাকা তাদের মা-বাবার ‘নিপাহ ভাইরাস’ টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এ জন্য ‘অজানা ভাইরাস’ নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরাও।

এমন পরিস্থিতিতে শিশু দুটির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে ৩ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল দল রাজশাহী এসে কাজ শুরু করছেন।

তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, ‘এখনই বলা যাচ্ছে না বরই খেয়ে নাকি অন্য কোনো কারণে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে, নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় কাচা রস ও বাদুরের খাওয়া বা আঁচড়ানো কোনো ফল না খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

জানা গেছে, আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে আইইডিসিআর’র বিশেষজ্ঞ দলটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩০ নম্বর নিপাহ আইসোলেশান ওয়ার্ডে গিয়ে মারা যাওয়া শিশু দুটি ও তাদের বাবা-মায়ের রোগের হিস্ট্রি শোনেন। এছাড়া মৃত দুই শিশুর পাকস্থলী থেকে সংগ্রহ করে রাখা নমুনা নেন। এসময় রামেক হাসপাতালের পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাও আইইডিসিআর’র বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে কথা বলেন।

এরপর বিশেষজ্ঞ দলটি রামেক হাসপাতাল থেকে জেলার চারঘাটে অবস্থিত রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে যান। সেখানে শিশু দুটি ও তার বাবা-মা যে কোয়ার্টারে থাকতেন সেখানকার কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে তারা শিশু দুটির পরিচর্যার জন্য যে গৃহপরিচারিকা ছিলেন তার সঙ্গে এবং রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

তবে বিশেষজ্ঞ দলটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। গবেষণা শেষে এ বিষয়ে ফলাফল জানানো হবে বলে জানান তারা।

এদিকে রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আইসোলেশনে থাকা শিশু দুটির বাবা-মাকে রিলিজ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আজ বেলা ১১টার দিকে তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) ইনচার্জ ডা. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘গত রবিবার শিশু দুটির মায়ের শরীরে হালকা জ্বর ছিল। আজ তারা সুস্থ থাকায় তাদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। তবে বাড়িতেও তাদের আপাতত আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে। কেননা- আমরা বলছি বাচ্চা দুটি অজানা এক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কিন্তু অজানা সেই ভাইরাসটি আসলে কী সেটি কিন্তু এখন পর্যন্ত আইডেন্টিফাই করা সম্ভব হয়নি। ভাইরাস শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের পরিবারের লোকজন থেকে আলাদা থাকতে বলা হয়েছে।’

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘মৃত দুই শিশু ও তার বাবা-মা আসলে কোনো অজানা রোগে আক্রান্ত কিনা তার সঠিক কারণ বের করা প্রয়োজন। তাই আইইডিসিআর’র তিন সদস্য অধিকতর তদন্তের জন্য রাজশাহীতে কাজ করছেন। তারা সোমবার আমাদের এবং শিশু দুটির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। মৃত্যুর সঠিক কারণ বের করতে তারা কাজ করছেন। ঢাকায় পাঠানোর আগের নমুনাও পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া মৃত শিশুর পাকস্থলীর খাবারের নমুনা হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। এই নমুনাও তদন্ত টিম সংগ্রহ করেছেন। এটি ঢাকার ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে যে, খাবারে কোনো বিষক্রিয়া ছিল কিনা।’

উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাসের গাছতলা থেকে বরই কুড়িয়ে এনে শিশু মুনতাহা মারিশা (২) ও মুফতাউল মাশিয়াকে (৫) খেতে দিয়েছিলেন তাদের বাসার গৃহকর্মী। বরইগুলো ধোয়া ছিল না। বরই খাওয়ার পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ মারিশার গায়ে জ্বর আসে এবং বমি শুরু হয়। পরে ওইদিনই হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটি মারা যায়।

এর দুদিন পর ১৬ ফেব্রুয়ারি মাশিয়ারও জ্বর ও বমি শুরু হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরদিন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাশিয়াও মারা যায়। তাদের বাবার নাম মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিতের প্রভাষক। বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) ও দুই মেয়েকে নিয়ে ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com