কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী সর্বোচ্চ সমান সংখ্যক ভোট প্রাপ্ত হওয়ায় লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন রিটানিং কর্মকর্তা। সমান সংখ্যক ভোট প্রাপ্ত প্রার্থীদ্বয় ও তাদের এজেন্টরা লটারির সময় উপস্থিত থাকার বিধান থাকলেও লটারি পদ্ধতির প্রতি দুই প্রার্থীরই আপত্তি থাকায় তাদের দু’জনের কেউ এ সময় উপস্থিত ছিলেন না।
এ দিকে এই ফলাফল প্রত্যখ্যান করে আইনি লড়াই করার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্বেলন করেছেন ফারুক আহমেদ। সংবাদ সম্বেলনে তিনি দাবি করেন, ভোটের ফলাফল থেকে শুরু করে লটারি পদ্ধতি কোনোটিতেই যথাযথ আইন অনুসরণ করা হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিধি ৪১ এর‘খ’ উপ-বিধি ৬ মোতাবেক শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১টার পরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে কুষ্টিয়া জেলা সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আবু আনছার, দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ওবায়দুল্লাহ ও সমান সংখ্যক ভোট প্রাপ্ত দুই প্রার্থি এবং তাদের পোলিং এজেন্টরা উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল লটারির মাধ্যমে আব্দুল মান্নান বিশ্বাসকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত ভোটের ফলাফলে আব্দুল মান্নান বিশ্বাস ও ফারুক আলম দু’জনেই সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬ হাজার ১২৩ ভোট পান। ফলে কে বিজয়ী হবেন, কোনো পদ্ধতিতে হবেন তা নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি হয়।
এদিকে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে চেয়ারম্যান কে হবেন, কিভাবে হবেন তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। সন্ধ্যায় ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল দুই প্রার্থীর মধ্যে পুণরায় ভোট গ্রহণের কথা জানালেও পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাত ১০টায় লটারির পদ্ধতির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণার কথা জানান।
লটারির জন্য দুই প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের রাত ১০ মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। লটারি পদ্ধতিতে দুই প্রার্থীর কেউই সম্মতি দেননি। এ সময় ফারুক আহমেদ উপস্থিত হয়ে এ পদ্ধতির বিরোধিতা করে পুণরায় ভোট গণনার দাবি জানালেও আব্দুল মান্নান বিশ্বাস লটারির আমন্ত্রন প্রত্যাখ্যান করেন এবং পুণরায় ভোট গ্রহনের দাবি জানান। আইনের বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে কুষ্টিয়া জেলা সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আবু আনছার, দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ওবায়দুল্লাহ ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল দুই প্রার্থীকে আইন অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেন। রাত ১টা পর্যন্ত দুই প্রার্থীকে বোধানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত চলে। কিন্তু প্রার্থীদের সাড়া না দেয়ায় রাত দেড়টার দিকে প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের অনুপস্থিতেই নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে আব্দুল মান্নান বিশ্বাসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পরাজিত প্রার্থী ফারুক আলম রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রিফাইতপুরে তার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্বেলন করে অভিযোগ করেন, নির্বাচনের কেন্দ্রের ফলাফল শীট ঘষামাজা করা হয়েছে। বাতিল ভোটসহ সব ভোট পুণরায় গণনা করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকের একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তা আমুলে নেননি। তিনি বলেন, শনিবার রাতে লটারি করার জন্য তার কার্যালয়ে আমাকে আমন্ত্রন জানালে আমি সেখানে উপস্থিত হয়। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাত ১টা পর্যন্ত বসে থাকলেও প্রতিপক্ষের প্রার্থী সেখানে যাননি। আমি বাড়ি চলে আসার পর রাত দেড়টার দিকে আমার অনুপস্থিতে লটারি করে আব্দুল মান্নান বিশ্বাসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এই ফলাফলের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা জানান তিনি। এ সময় তার নির্বাচনী এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিধি ৪১ এর ‘খ’ উপ-বিধি (৬) মোতাবেক সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত দুই প্রার্থীর মধ্যে লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে আব্দুল মান্নান বিশ্বাসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আবু আনছার বলেন, দুই প্রার্থীকে আইনি প্রক্রিয়াটি বারবার বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার অনুরোধ করার পরও লটারিতে প্রার্থীরা অনুপস্থিত থাকলে আমাদের কী করার আছে। তাই বলে তো আর বিধানের বাইরে গিয়ে সিন্ধান্ত নেয়া যায় না। আইন অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এর আগে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও শান্তিপুর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৮৪৬ জন। ভোট প্রদান করা হয়েছে ১৭ হাজার ৯২৬টি। বাতিল হয় ১১৩ ভোট।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অন্য তিন প্রার্থী মধ্যে জামিরুল ইসলাম ৪৯১৩, মেহেদী হাসান ৬৩৬ এবং আব্দুল মজিদ পেয়েছেন ১৮ ভোট।
উল্লেখ্য, এই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বাবলুর মৃত্যুর কারণে উপনির্বাচন অনুষ্টিত হয়।