কক্সবাজারের টেকনাফে বুধবার পর্যন্ত পূর্ববর্তী দুই দিনে আটজনকে অপহরণের তথ্য ছিল পুলিশের কাছে। অপহৃতদের স্বজনরা পুলিশের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ বা তথ্য জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে আসছিল। তারপরও পুলিশ পাহাড়ি এলাকায় অভিযান শুরু করে। টেকনাফের জাহাজপুরা পাহাড়ি এলাকায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বুধবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়। তবে অপহরণকারীদের ধরা যায়নি। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপহরণকারী চক্রের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে টেকনাফ থানা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ফাঁড়ির ৫০ জন পুলিশ একযোগে টেকনাফের জাহাজপুরা পাহাড়ে অভিযান শুরু করে। পাশাপাশি অভিযানে যোগ দেয় র্যাব সদস্যরা। অভিযানের এক পর্যায়ে পুরো পাহাড়টি ঘিরে ফেলা হয়। অভিযানের মুখে রাত সাড়ে ১২টার দিকে অপহৃত ১০ জনকে পাহাড়ে ছেড়ে দিয়ে অপহরণকারী চক্রটি পালিয়ে যায়। পরে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। এখন তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অপহরণকারীদের ধরতে পাহাড়ে অভিযান চলমান রয়েছে।
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অপহৃত ১০ জনকে অক্ষত অবস্থা উদ্ধার করেছি। এখানে মুক্তিপণের কোন বিষয় নেই। অপহৃতদের পরিবারের সদস্যরা কোন তথ্য দেয়নি। এমন কি, একাধিকবার চেষ্টার পরও লিখিত অভিযোগ দেয়নি। স্বজনরা তথ্য না দেওয়ায় পুলিশ তাদের কাজে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। তবে সবকিছু মাথায় রেখে অপহরণকারীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া ১০ জনের কাছে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
ওসি জানান, লিখিত অভিযোগ বা স্বজনরা পুলিশকে সারাসরি কোন তথ্য না দিলেও তাদের কাছে ৮ জনকে অপহরণের তথ্য ছিল। এর মধ্যে বুধবার দুপুর ২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাংয়ের ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিম পাহাড়ি এলাকায় ৬ জন এবং আগের দিন মঙ্গলবার টেকনাফের হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু আনতে গিয়ে ২ জন অপহরণের তথ্য ছিল। কিন্তু অভিযানে উদ্ধার হল ১০ জন। অপর ২ জনকেও বুধবার বিকালে পুটিবুনিয়া পাহাড়ি এলাকায় থেকে অপহরণ করা হয়।
উনচিপ্রাং এলাকা থেকে অপহরণের স্বীকার ও উদ্ধার ৬ ব্যক্তি হলেন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের করাচি পাড়া এলাকার লেদু মিয়ার ১৫ বছর বয়সী ছেলে শাকিল মিয়া, বেলালের ১৩ বছর বয়সী ছেলে জুনাইদ, নুরুল আমিনের ১৪ বছর বয়সী ছেলে সাাইফুল, শহরের আলীর ৩৫ বছরের ছেলে ফরিদ, নাজির হোছনের ২৪ বছর বয়সী ছেলে সোনা মিয়া এবং মুল্লুকের ৩২ বছর বয়সী ছেলে গুরা পুইত্যা।
পুটিবুনিয়া এলাকা থেকে অপহরণের স্বীকার ও উদ্ধার দুই ব্যক্তি হলেন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যং উত্তর পাড়ার আলী আকবরের ৩৩ বছর বয়সী ছেলে ছৈয়দ হোসেন ওরফে বাবুল এবং রইক্ষ্যং দক্ষিণ পাড়ার কালা মিয়া ওরফে লম্বা কালুর ৪৭ বছর বয়সী ছেলে ফজল কাদের।
হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে অপহৃত ও উদ্ধার ব্যক্তিরা হলেন রোজার ঘোনা এলাকার আমির হোসেনের ৩২ বছর বয়সী ছেলে অলি আহমদ এবং কম্বনিয়া এলাকার ফিরুজের ১৭ বছর বয়সী ছেলে নুর মোহাম্মদ। তাদের মঙ্গলবার অপহরণ করা হয়।
এর আগে হোয়াইক্যং ইউপি সদস্য মো. শাহজালাল বলেছিলেন, বুধবার সকালে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং এলাকার ৬ বাসিন্দা স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় গরু চরানো ও চাষের কাজ করতে যান। পরে তারা দুপুর গড়িয়ে গেলেও বাড়ি ফিরেননি। দুপুর ২টার পর অপহরণকারী চক্রের এক ব্যক্তি অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি নম্বর থেকে একজনের পিতার মোবাইলে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এতে অপহৃতদের মারধরের চিৎকার শোনানো হয়। এ বিষয়ে পুলিশকে জানালে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।
বুধবার বিকালে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পুটিবুনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু চরাতে গিয়ে ছৈয়দ হোসেন ও ফজল কাদের নামের আরও দুইজন অপহৃত হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী।
স্বজনদের বরাতে তিনি বলেন, সকালে গরু চরাতে গিয়ে তার ইউনিয়নের আরও দুই বাসিন্দা নিখোঁজ হয়েছে। বুধবার রাত ৯টার পরও তারা বাড়ি ফিরেনি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দুইজনও অপহরণের শিকার হয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি জানান, অপহরণ বন্ধে পুলিশের জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন, তা না হয় এটা বন্ধ করা যাবে না।
গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা। বাকিরা আশ্রিত রোহিঙ্গ।
ভুক্তভোগী পরিবারের তথ্য অনুযায়ী, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে।
কিন্তু ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে অপহরণ হওয়া মাদ্রাসা ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে ২০ দিন অতিবাহিত হলেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি । যদিও পুলিশ অপহরণ ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও সংঘবদ্ধ চক্রের নারী সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পাঁচজনই রোহিঙ্গা।