রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন

করোনায় জমাট বাঁধছে রক্ত, তরুণদের বাড়ছে স্ট্রোক প্রবণতা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০
  • ৩৯২ বার

করোনাভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করে ধারণা করা হলেও এটি রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দেহের গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ বিকল করে দিতে পারে। আর করোনার ফলে তরুণদের স্ট্রোক করার প্রবণতাও বাড়ছে।

মার্কিন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের করোনা নিয়ে পর্যবেক্ষণের আলোকে এ প্রতিবেদন করেছে তারা।

মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা আক্রান্তদের ফুসফুসের একটি অংশ অস্বাভাবিকভাবে রক্তশূন্য হয়ে পড়ছে। হাসপাতালটির কিডনি বিশেষজ্ঞরা জানান, কিডনি ডায়ালাইসিস ক্যাথেটারে রক্ত জমাট বেঁধে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্ত জমাট বাঁধার কারণে আগেরে চেয়ে বেড়েছে স্ট্রোকের রোগীর সংখ্যা। তরুণদের মধ্যে অনেকেই স্ট্রোক করছেন। আর স্ট্রোক করাদের অর্ধেকই করোনা আক্রান্ত।

মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের নিউরোসার্জন ডা. জে. মকো বলেন, ‘এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে কোভিড-১৯ রক্ত জমাট বাঁধতে অস্বাভাবিক ভূমিকা রাখছে। অনেক বিশেষজ্ঞরাই এটাকে এখন শুধুমাত্র ফুসফুসের রোগের চাইতেও বেশি বলে মনে করছেন।’

তিনি জানান, কয়েকজন তরুণের ক্ষেত্রে প্রথম উপসর্গই ছিল স্ট্রোক।

ডা. জে. মকো মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে তিন সপ্তাহে ৩২ জন স্ট্রোক করা রোগীকে দেখেছেন। এই রোগীদের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকভাবে জমাট বাঁধা রক্ত দেখেছেন তিনি।

তিনি জানান, এই তিন সপ্তাহে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক রোগী এসেছে। পাঁচ জনের বয়স ছিল ৪৯ বছরের নিচে। সবচেয়ে কম বয়সী রোগীর বয়স ৩১ বছর। তারা কেউই স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ছিলেন না।

করোনা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের এমন পর্যবেক্ষণের পর চিকিৎসার নতুন নিয়ম তৈরি করেছেন এ হাসপাতালসহ নিউইয়র্কের অনেক চিকিৎসকরা। তারা রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন। রক্ত জমাট বাঁধার কোনো লক্ষণ দেখার আগেই করোনা আক্রান্তদের উচ্চমাত্রায় রক্ত লঘু করার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালটির সভাপতি ডা. ডেভিড রেইখ বলেন, ‘রক্ত জমাট বাঁধা আটকানো গেলে হয়তো রোগটির ভয়াবহতা কিছুটা কমে আসতে পারে। তবে, এখনো বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। তাই উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে না। জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে এটা করতে গেলে হিতে বিপরীত হয়ে মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। ‘

ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. হুম্যান পোর জানান, হাসপাতালে ১৪ জন করোনা রোগীকে ভেন্টিলেটর সেবা দিতে গিয়ে তিনি অবাক হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত নিউমোনিয়ায় যেমন হয়, এই রোগীদের ফুসফুস তেমনটা শক্ত হয়ে যায়নি। বরং মনে হচ্ছিল, ফুসফুসের মধ্যে রক্তের প্রবাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না।’

হাসপাতালটির কিডনি বিশেষজ্ঞ ডায়ালাইসিস ক্যাথেটারে রক্ত জমাট বেঁধে থাকতে দেখেন।

ইস্টার সানডের দিন অর্থাৎ গত ১২ এপ্রিল রাত তিনটার দিকে নিউরোসার্জন ডা. জে. মকোর সঙ্গে ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. হুম্যান পোর যোগাযোগ করেন। এরপর চিকিৎসকরা আলোচনায় বসেন। তারা মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ১৯ জন করোনা রোগীর রিপোর্টের পাশাপাশি চীনের হুবেই প্রদেশসহ অন্যান্য অঞ্চলের করোনা আক্রান্তদের রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। নিউইয়র্ক বাইরে অন্যান্য অঞ্চলের রোগীদের ক্ষেত্রেও একইরকম বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এরপরই তারা করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নতুন নিয়ম তৈরি করেন।

মাইন্ট সিনাই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার থমাস জেফারসন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের চিকিৎসক পাস্কাল জ্যাব্বার। তিনিও করোনা আক্রান্তদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি এর আগে কখনো কোনো ভাইরাসের আক্রমণে এ রকম কিছু হতে দেখিনি।’

করোনা রোগীর রক্ত জমাটের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে আমেরিকান সোসাইটি অফ হেমাটোলজি। সম্প্রতি তারা একটি নির্দেশিকায় জানিয়েছে যে, করোনা আক্রান্তদের রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গ রয়েছে কিনা তার এখনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই, তাদের রক্ত লঘু করলে চিকিৎসায় সুবিধা হবে কি না সেটা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না বলেও জানায় তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com