রাজশাহী অঞ্চলে আগামী ১৫-২০ দিন বিদ্যুতের আবাসিক সংযোগে লোডশেডিং বাড়বে। বোরো ধান রক্ষায় এই বিদ্যুৎ দেওয়া হবে সেচের জন্য। বিশেষ করে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত যতটা প্রয়োজন শহরেও লোডশেডিং করে সেচযন্ত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। বিভাগীয় প্রশাসনও এ সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছে।
আজ সোমবার চলমান সেচ মৌসুম ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এ সভার আয়োজন করে।
সভায় রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও লোডশেডিংয়ের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর বিভাগের আট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে শুধু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিরই সেচের জন্য এখন ৫৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৩৮৮ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে ১৯৩ মেগাওয়াট। বাণিজ্যিক ও আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে আরও প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে প্রতিদিন। একইভাবে নেসকোর ক্ষেত্রেও প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে এখন।
সভায় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকারের নির্দেশনার কথা তুলে ধরে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘বিদ্যুতের ঘাটতি থাকলেও আগে ফসল বাঁচাতে হবে। দেশকে খাদ্যের সংকটে ফেলা যাবে না। খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে তখন আবার ডলার খরচ করে আমদানি করতে হবে। সেদিকে আরেক সংকট। তাই সেচের জন্যই বিদ্যুৎ বেশি দিতে হবে।’
এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সেচযন্ত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া গেলে ফসল উৎপাদনে সমস্যা হবে না। কিন্তু এটি করতে গেলে সবগুলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় করে শহরেও রাতে লোডশেডিং দিতে হবে। আবাসিকে সরবরাহ কমিয়ে সেচে বিদ্যুৎ দিতে হবে।
এ সময় বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘ফসল রক্ষার জন্য রাতে আমার বাসারও বিদ্যুৎ বন্ধ করেন। শহরে আবাসিকের বিদ্যুৎ সরবরাহ কমান। সেই বিদ্যুৎ সেচের জন্য পাঠান। সবার আগে আমাদের ফসল রক্ষা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লোডশেডিং শুরু হলে রাজনীতি শুরু হয়। মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে একটা পক্ষ ফায়দা হাসিল করতে চায়। গোয়েন্দা তথ্য হচ্ছে, আবাসিকে লোডশেডিং বাড়লে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার আশঙ্কা আছে। তাই মানুষকে বোঝাতে হবে। ১৫-২০ দিন আমাদের কষ্ট করতে হবে ফসল রক্ষার জন্য। তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এই সময়ের মধ্যেও যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা এখনও নেই, সেখানে দ্রুতই লাগাতে হবে যেন অপরাধীদের অন্তত শনাক্ত করা যায়।’
সভার সভাপতি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (প্রশাসন) মো. হাসান মারুফ বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চল খরাপ্রবণ এলাকা। এখানে সেচ লাগে বেশি। তাই শহরে ও রাতে লোডশেডিং করে সেচের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে ফসল রক্ষা করতে হবে। কোনো এলাকায় উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জবাবদিহি করতে হবে। তাই সবাইকে এই কয়েকটা দিন ফসল রক্ষায় আন্তরিক থাকতে হবে।’
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (প্রশাসন) মো. হাসান মারুফের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামীল।
সভায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।