বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

সৃজনশীলের কারণে শিক্ষকরাও এখন গাইডনির্ভর

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৩১০ বার

আগে নোট ও গাইড কিনতেন শুধু শিক্ষার্থীরা, আর বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকরাও নির্ভর করছেন নোট গাইডের ওপর। শিক্ষক ও অভিভাবকরা অভিযোগ করলেন, এ অবস্থা চালু হয়েছে একমাত্র সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে।

সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর আগ পর্যন্ত এসএসসি পড়–য়া কিছু কিছু শিক্ষার্থী বাংলাসহ দু-একটি বিষয়ে নোট গাইড কিনত। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কোনো ধরনের নোট গাইড ছাড়াই এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পারত। এইচএসসি পর্যায়েও কিছু বিষয়ে শিক্ষার্থীরা নোট গাইড কিনত। কিন্তু বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণী থেকে শুরু করে এসএসসি পর্যন্ত প্রায় সব শিক্ষার্থী সব বিষয়ে গাইডের ওপর নির্ভরশীল।

অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন, তাদের সময় তারা দেখেছেন গণিতের কিছু কিছু শিক্ষক বিশেষ করে যারা প্রাইভেট পড়াতেন তাদের কেউ কেউ গণিতের মেডইজি বাসায় রাখতেন। শিক্ষার্থীদেরও কেউ কেউ মেডইজি রাখত বাসায়। এ ছাড়া মাধ্যমিকের কোনো শিক্ষক ক্লাসে পড়ানোর জন্য বাজার থেকে অন্য বিষয়ের নোট গাইড কিনেছেন এটি কল্পনারও অতীত ছিল। অথচ এখন শিক্ষকদের অনেকে শুধু বাসায় নোট গাইড রাখেন না, বরং ক্লাসে সরাসরি নিয়ে আসেন এবং গাইড থেকে পড়ান। শিক্ষার্থীদেরও বাসায় গাইড থেকে পড়া দেয়। বর্তমানে মাধ্যমিকে এমন কোনো শিক্ষার্থী পাওয়া মনে হয় অসম্ভব যারা গাইডের ওপর নির্ভরশীল নয়। অথচ একসময় কোনো ধরনের নোট গাইড ও প্রাইভেট পড়া ছাড়াই একজন শিক্ষার্থী এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পারত।

সংশ্লিষ্ট অনেকে জানতে চেয়েছেন এটি কি শিক্ষার উন্নতি না অবনতি। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও নোট গাইডের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার পেছনে অনেক শিক্ষক ও অভিভাবকরা সৃজনশীল পদ্ধতিকে দায়ী করার পাশাপাশি বই আগের তুলনায় অনেক কঠিন আর জটিল বলে অভিযোগ করেছেন। সৃজনশীল পদ্ধতি, কঠিন বই, ঘন ঘন পাবলিক পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীরা গাইড ও প্রাইভেট কোচিংয়ের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান অভিভাবকরা।

কয়েক দিন আগে প্রকাশিত গণসাক্ষরতা অভিযান পরিচালিত একটি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাধ্যমিকে ৩৭ ভাগ শিক্ষক বাজারের নোট গাইডের ওপর নির্ভরশীল। অন্য দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) চলতি বছরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতিতে পূর্ণ প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে পারেন। আংশিক প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন ২৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষক। আর ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল বিষয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে পারেন না, তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

অভিভাবকদের অনেকে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকদেরই যদি গাইড পড়তে হয় তা হলে ছাত্রছাত্রীরা কী করবে। এ কেমন শিক্ষাব্যবস্থা, সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করে তা হলে লাভ কী হলো।

২০১০ সালে দেশে এসএসসি পর্যায়ে প্রথমবারের মতো সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়। বর্তমানে প্রাথমিক থেকে এইচএসসি পর্যন্ত এ পদ্ধতি চালু রয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতি আর ঘন ঘন পাবলিক পরীক্ষা ঘিরে নোট গাইড আর কোচিং প্রাইভেটের কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানি আর ভোগান্তি যেমন তীব্র আকার ধারণ করেছে, তেমনি বেড়েছে শিক্ষার ব্যয়। সব কিছু মিলিয়ে বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার কারণে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নাভিশ্বাস অবস্থা বিরাজ করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। আর এ সুযোগে লাভবান হচ্ছেন কিছু শিক্ষক, বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিক, কোচিং ও নোট গাইড ব্যবসায়ীসহ অনেকে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com