ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপির ভাবনায় তিনি (ওবায়দুল কাদের) ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই সমালোচনা করেন। ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি, আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলসহ সকল রাজবন্দীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে হাবিব উন নবী খান সোহেল মুক্তি পরিষদ।
রিজভী বলেন, প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। মানুষ তিন বেলা খেতে পায় না। আজ মায়ের গর্ভ থেকে যে শিশুটা জন্মগ্রহণ করছে, তার ঋণ হচ্ছে এক লক্ষ টাকারও বেশি। তারপরও সরকার ঋণ চাচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খুব বকবক করছে, বেশি কথা বলছে, মনে হচ্ছে বিএনপির জন্য উনার খুব মায়া কান্না। বিএনপির ভাবনায় উনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মুরগির বাচ্চার জন্য চিল যেমন মায়া কান্না করে, ওবায়দুল কাদেরের কান্নাও সে রকম। তিনি (ওবায়দুল কাদের) মাঝে মাঝে আওয়াজ দেন, বিএনপি নাকি দুর্বল হয়ে গেছে, বিএনপি ক্লান্ত, হতাশ, বিদেশ চলে যাচ্ছেন। তারা যে ভিতর থেকে ধ্বসে গেছে, ভেঙে গেছে এটা ধামাচাপা দেয়ার জন্যই তিনি এসব কথা বলেন।
কয়েকজন সুবিধাবাদী লোক, কয়েকজন ঋণ খেলাপি, কয়েকজন বাজার সিন্ডিকেটের লোক আওয়ামী লীগকে ঘিরে আছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণের সাথে বার বার বিশ্বাসঘাতকতা করা। জনগণের মালিকানা ছিনিয়ে নেয়া। এই কারণে জনসমর্থন নেই সরকারের। এরা তো গণশত্রু, যারা বাজার সিন্ডিকেট করে দ্রব্যের দাম বাড়ায়, যারা ব্যাংক লুটপাট করে টাকা বিদেশে পাচার করে। তাদের সাথে তো দেশের জনগণ থাকে না। এখন ফাঁফা বুলি মারে। টিনের বক্সে যদি মুড়ি না থাকে, তাহলে সেই টিন ঝনঝন করে, বেশি তেমনি আওয়ামী লীগ এখন শূন্য মুড়ির টিন। এই কারণে আওয়ামী লীগের নেতারা ঝনঝন করে কথা বলছে।
উপজেলা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, সরকার আবার একটি দামি নির্বাচন করতে যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের আপনার দল যে শূন্য মুড়ির টিন হয়ে গেছে, ওইটা আগে ভরেন। তারপরে বিএনপির কথা বলুন। বিএনপি দুর্বল নাকি হতাশ, এটা তো টের পান প্রতি মুহূর্তে। বিএনপিকে মোকাবেলা করা সাহস আওয়ামী লীগের নাই । এইজন্য পুলিশ দিয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণকে দমন করে, জনগণের গলায় রশি দিয়ে আজ কথা বলছেন।
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভাঙা কলসি বাজে বেশি। আপনাদের আওয়ামী লীগ ভাঙ্গা কলসি। তাই আপনারা বাজছেন বেশি করে। জনগণকে যা দেখিয়েছেন, যা বলেছেন সব মিথ্যা। ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল,পদ্মাসেতু দেখান এইবার বাজেটে লক্ষ কোটি টাকার ঋণ চাচ্ছেন কেন? জনগণ আরামে থাকতে দিচ্ছেন না কেন? জনগণের গলায় পাড়া দিয়ে বিদ্যুতের বিল গ্যাসের বিল পানির বিল বাড়াচ্ছেন কেন? আজ দেশে গণতন্ত্রের শাসন নাই বলে, বৈধ সংসদ নাই বলে সরকার জনগণের টুটি চেপে ধরে বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি থেকে বেশি বিল নিচ্ছে, ট্যাক্স নিচ্ছে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার বিষয়ে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন আজ পর্যন্ত জমা দিতে পারিনি। ১০৯বার এই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করার পরেও জমা দিতে পারেনি, তারিখ শুধু পেছাচ্ছে। সাংবাদিক দম্পতির ভয়ঙ্কর হত্যার বিচার এখন পর্যন্ত করতে পারেননি। কেন পারেননি এটা দেশের জনগণ জানে। এরকম একটি ঘটনা নিয়ে অমীমাংসিত নামের একটি সিনেমা করা হয়েছিল সেটা সেন্সর থেকে আটক করে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে যত চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ঘটেছে সবগুলোরই সিনেমা হয়েছে। সেন্সর বোর্ড এতটাই মূর্খ যে তারা বলেছে এই মামলা বিচারাধীন আছে। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনই জমা দেয়া হয়নি। অথচ তারা বলছে এটার মামলা চলমান, এই কারণে আমরা মুক্তি দিতে পারলাম না। কত মূর্খ তারা। অর্থাৎ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ক্ষমতাবানরা জড়িত এই কারণে ওইটা আড়াল করতে চাচ্ছে।
সাগর-রুনি হত্যার বিচার করতে পারেনি অথচ বিএনপির কবরে যাওয়া নেতাদের নামে মামলা দেয়। এই পরিস্থিতি চলতে দেয়া যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, এ সরকার ব্যর্থ সরকার। ষড়যন্ত্রকারী সরকার। এই সরকার এদেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে আসেনি।
গণতন্ত্রের প্রতীক, গণতন্ত্রের মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে একেবারে সাজানো মামলায় এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, তিনি অসুস্থ, এমনকি তার উন্নত চিকিৎসার সুযোগও দেয়া হচ্ছে না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে রাখা হয়েছে। তারপরও তিনি এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়, জনগণকে তার মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
সরকারের পক্ষে যারা অস্ত্র ধরছেন ইতিহাসে পাতায় তাদের নাম মীরজাফর হিসেবে লেখা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আর যারা গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করছেন, জেলে যাচ্ছেন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তারা সিরাজউদ্দৌলার মতো দেশপ্রেমিক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা থাকবে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, স্বেচ্ছাসেবক দল দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম নোমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সভাপতি ডা: জাহিদুল কবির, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ছাদরেজ জামান, যুবদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, শাহ আলম বেপারী, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, বিএনপি নেতা জাকির হোসেন, ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান আউয়াল, নুরুল মজুমদার মিশু, ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ, যুগ্ম সম্পাদক রাজু আহমেদ, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন, ছাত্রদল নেতা হিরন, শাহ পরান, রাফসান হোসেন-সহ নেতৃবৃন্দ।