নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে রেজ্যুলেশন গ্রহণকারি রাজনীতিকরা কীভাবে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ পেল তা খতিয়ে দেখার দাবিতে নিউইয়র্কে মুক্তিযোদ্ধা এবং সচেতন প্রবাসীরা মানববন্ধন করলেন। ১৮ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় এই মানববন্ধনের স্লোগান ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি নিপাত যাক’, ‘জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে রেজ্যুলেশনকারি সিনেটর/এ্যাসেম্বলীম্যানদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানালো কে’, ‘৫ সিনেটরের বাংলাদেশ সফরের নেপথ্যে কাদের স্বার্থ জড়িত’, ‘বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তকারিরা নিপাত যাক’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি। এসব লেখা প্লেকার্ড ছিল প্রায় সকলের হাতে। এ কর্মসূচির আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখা।
প্রধান অতিথি ছিলেন ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ৭১’ এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা বেনু। সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সেক্রেটারি মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি। বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরো ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুৃন্নু, কোষাধ্যক্ষ আকাশ খান, মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম ফজলুল হক, মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আনোয়ার বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, ফোরামের আন্তর্জাতিক সম্পাদক সবিতা দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা উইলি নন্দি, প্রচার সম্পাদক শুভ রায়, নির্বাহী সদস্য রুবাইয়া শবনম প্রিয়া, কানু দত্ত, শাহ জে চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সুবল দেবনাথ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য সিনেটের ৫ সদস্য বাংলাদেশে রওয়ানা দিলেন শুক্রবার অপরাহ্নে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিথি হিসেবে তারা সপ্তাহখানেক কাটাবেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার নাকি তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে নিউইয়র্কের ক’টনীতিকরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। এরা হলেন ষ্টেট সিনেটর জন ল্যু, জেমস স্কুফিস, লিরয় কমরি ও কেভিন এ পার্কার। সকলেই ডেমক্র্যাটিক পার্টির সদস্য এবং এ টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদা । উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস’ উপলক্ষে গৃহিত এক রেজ্যুলেশনে জিয়াউর রহমানকে ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় (https://www.nysenate.gov/newsroom/video/ruben-diaz/senate-resolution-j1048-celebrating-march-26-2015-bangladesh-day-and?tab=&page=24)। একই ধরনের আরেকটি রেজ্যুলেশন ঐ বছরেরই ২৪ মার্চ পাশ হয় নিউইয়র্ক স্টেট এ্যাসেম্বলীতে। সেই রেজ্যুলেশনের অন্যতম রূপকার ছিলেন এই টিমের নেতা তদানিন্তন এ্যাসেম্বলীম্যান লুইস সেপুলভেদা। একারণেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে প্রবাসে।
মানববন্ধন থেকে অভিযোগ করা হয় যে, নিউইয়র্কে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত এবং নিউইয়র্ক সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস করফারেন্সে নিষিদ্ধ গণমাধ্যমের লোকজন তাদের বিশেষ মতলব সাধনের অভিপ্রায়ে কতিপয় ক’টনীতিকের মাধ্যমে এই সফরের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী এ বছর নিউইয়র্ক সফরকালীন সময়ে ষ্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন ঐ ক’টনীতিকের মাধ্যমে। সে সময়েই স্পীকার তাদেরকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এই টিমের সাথে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে নিষিদ্ধ ঘোষিত ঐ গণমাধমের লোকজনও।
মানববন্ধনে বক্তৃতাকালে প্রধান অতিথি শাহজাহান মৃধা বেনু উল্লেখ করেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার নেপথ্য চক্রের হদিস উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিশনের দাবি উঠেছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে আরো অনেকের মুখোশ উন্মোচিত হবে। সেটি যাতে না হয় তার প্রাথমিক একটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবেও জামাত-শিবিরের লোকজন সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে ব্যবহার করতে পারে। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে নিষিদ্ধরা কীভাবে এ ধরনের সফরের কারিগর হয়?
এ সময় ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ প্রশ্নের অবতারণা করেন যে, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটের কোনই এখতিয়ার নেই জাতিগতভাবে বাংলাদেশের স্বার্থে কোন কাজ করা। আন্তর্জাতিকভাবে তারা কিছুই করার অধিকার রাখেন না। এটা কী বাংলাদেশের ক’টনীতিকদের অজানা? তাহলে জামাত-শিবিরের পারপাস সার্ভ করতে কেন এদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে? যারা বাংলাদেশের স্থপতি নিয়ে মিথ্যাচার করছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে, যারা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তারা কীভাবে শেখ হাসিনা প্রশাসনের সাথে দহরম-মহরমের সুযোগ পাচ্ছে?
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান এবং ইউএস সিনেটররাই কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কাজ করতে পারেন। কোন স্টেটের সিনেটর/এ্যাসেম্বলীম্যানদের সে এখতিয়ার নেই।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টে সম্প্রতি দুটি রেজ্যুলেশন পাশ হয়েছে যেখানে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় ইমেজকে খাটো করার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে জে-১০৪৮ নম্বরের একটি রেজ্যুলেশন পাশ হয়েছে, যেখানে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এরপরের বছর আরেকটি রেজ্যুলেশনে বঙ্গবন্ধুর নাম বিকৃতভাবে লেখা হয়েছে। দুটি ঘটনার পরই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আপত্তি উঠেছিল। কিন্তু তা আমলে নেয়া হয়নি এখন পর্যন্ত। যাদের প্ররোচনায় রেজ্যুলেশন দুটি গৃহিত হয়েছে, তেমন মহলের ইন্ধনেই তৈরী হয়েছে এই সফরসূচি-এ অভিযোগ করা হয়েছে মানববন্ধন থেকে।