কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের পদত্যাগ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন নেতা ছাত্রলীগ ছেড়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন- সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম হৃদয়, একই অনুষদের উপসম্পাদক জেবা সায়ীমা, সার্জেন্ট জহরুল হক হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি ওয়াসিক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা, বিজয় একাত্তর হল শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপসম্পাদক শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন, নাট্য ও সাহিত্য সম্পাদক মেহেরুন্নিসা মিম, একই হলের আইন সম্পাদক সিরাজাম মনিরা তিশা।
এর আগে, গত ১৪ জুলাই রাতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এর প্রতিবাদে ও কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রলীগের তিনজন নেতা পদত্যাগ করেন। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ এবং আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম।
পদত্যাগকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ছাত্রলীগ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘যে সংগঠন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, ছোট ভাই ও বোনদের নিরস্ত্র থাকার সুযোগ নিয়ে সশস্ত্র হামলা চালায় কিংবা যে সংগঠন নিজ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের বহিরাগত অস্ত্রধারী টোকাই দিয়ে মারধর করে তারা আর যাই হোক, অনুসরণ করার মতো কিংবা একসঙ্গে বসার মতো কেউ নয়। আমি সজ্ঞানে ছাত্রলীগসহ সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি।’
এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন ও কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজে চারজন পদধারী নেতা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে একজন, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে একজন, লালমনিরহাটে দুজন এবং পটুয়াখালীর বাউফলে একজন ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে এক নেতা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদত্যাগ করা চার নেতা হলেন- নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুসরাত জাহান সুরভী, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, আইন অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক তানভীর আহমেদ গাজী এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিন বখশ সাদী।
তানভীর আহমেদ গাজী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি একজন সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষ, রাজনীতি আমায় শোভা পায় না। আজকের বর্বরোচিত ঘটনা আমায় সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে।’
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের পাঁচজন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে চারজনই পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন- ফাহমিদ হোসেন অরা, শাহাদাত হোসেন মেহেদী, জায়মা হোসেন ও নিঝুম হায়দার।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন কাজী ইসহাক নামের এক নেতা। তিনি উপজেলার আলাওলপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে মো. ওমর ফারুক আকন্দ নামের এক ছাত্রলীগ নেতা পদত্যাগ করেছেন। তিনি ছাত্রলীগ সানন্দবাড়ী সাংগঠনিক থানা শাখার উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান আরিফ এবং লালমনিরহাট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজমাউল খন্দকার সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন। পটুয়াখালীর বাউফলে জয় চন্দ্র নামে এক ছাত্রলীগ নেতা পদত্যাগ করেছেন। তিনি কালাইয়া ইদ্রিস মোল্লা ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের শিক্ষা সম্পাদক পদে ছিলেন। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইমন হাসান পদত্যাগ করেছেন।