কোটা আন্দোলন প্রতিহত করতে নেতাকর্মীদের মাঠে না থাকা অথবা টিকে থাকতে না পারাকে সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে দলের হাইকমান্ড। যে কারণে শিগগিরই দল ও সহযোগী সংগঠনের কোথায় কি সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে এবং কেন তারা মাঠে নামেনি তা চিহ্নিত করার নিদের্শনা দিয়েছেন হাইকমান্ড। একই সাথে দায়িত্বশীল পদে থেকেও যারা এ সময়ে মাঠে ছিলেন না বরং আত্মগোপনে চলে গেছেন তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশও দেয়া হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, রাজধানীর সব এমপিদের ডেকে জরুরি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ওবায়দুল কাদের দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে মাঠে অনুপস্থিত থাকা এবং আত্মগোপনে চলে গেছেন এমন নেতাদের তালিকা তৈরির নির্দেশনার বার্তা পৌঁছে দেন বলে জানা গেছে। একই সাথে তিনি দলের নেতাকর্মীদের ছয়টি নির্দেশনা মেনে চলার কথা বলেন। সেগুলো হচ্ছে- চলমান কারফিউ আইন ভঙ্গ না করা এবং নেতাকর্মীদের প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজ নিজ এলাকা ও অলিগলিতে অবস্থান নেয়া, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে থানায় তালিকা দেয়া, আহত ও নিহত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করা, গুজব প্রতিরোধে নিজ নিজ এলাকার মসজিদভিত্তিক কাজ করা, অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রাখা এবং নিজ নিজ পাড়া-মহল্লায় সমন্বয় সভা করা।
ছাত্রদের কোটা আন্দোলন চলতি মাসের ১ জুলাই থেকে শুরু হলেও গত ১৮ জুলাই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-র্যাব এবং কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা শুরু হয়। এতে সাংবাদিক-পুলিশসহ অনেকে নিহত ও আহত হয়েছেন। পরে অবস্থার বেগতিক হলে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। জারি করা হয় কারফিউ, যা বর্তমানে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে। এভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে। বৈঠকে দলীয় সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করতে দলের সিনিয়র নেতা, দলীয় সংসদ সদস্য, দলীয় কাউন্সিলর ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সমন্বয় করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনাগুলো নেতাকর্মীদের জানান। তিনি বলেন, নেত্রী সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন, তিনি আমাদেরও চোখ-কান খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করার কথা জানান। এর মধ্যে রয়েছে- ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, রাজধানীর প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ-সাইনবোর্ড ও সানারপাড়, মানিকনগর-খিলগাঁও, রামপুরা-বাড্ডা, নতুনবাজার, কুড়িল বিশ^রোড, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও গাবতলী। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের উল্লেখিত এসব স্থানে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে কারফিউ চলার কারণে মূল সড়কে একত্রে সমাবেশ না করে প্রতিটি অলিগলির মোড়ে মোড়ে অবস্থান থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। এ ছাড়া সভায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়েও সমালোচনা করা হয়। বিভিন্ন স্থানে জেলা কমিটি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় ছাত্রলীগকে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে আরো শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ দিকে আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত-আহত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরির নির্দেশনার কথা জানান ওবায়দুল কাদের। গত কয়েক দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডির দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের খুব একটা ভিড় দেখা যায়নি। তবে গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই দলীয় কার্যালয় দু’টিতে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ অন্যান্য ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। কেউ কেউ সকাল ১০টা থেকে কারফিউ শিথিল হওয়ায় আশপাশের কয়েকটি চায়ের দোকানেও আড্ডা দিচ্ছেন। অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে ছাত্র আন্দোলন চলার সময় তারা নিজেদের রক্ষার্থে পালিয়ে ছিলেন। আবার কেউ কেউ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।