নিখোঁজের তিন দিন পর মাটি থেকে তোলা হলো সুভাষচন্দ্র দে নামের এক সিপিএম এই নেতার খণ্ডিত লাশ। আজ সোমবার সকালে ওই নেতার লাশ উদ্ধার করা হয়।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভারতের বীরভূম জেলার দুবরাজপুরের একটি পুকুর পাড়ের বাঁশবাগানে তার মাথাহীন শরীর বস্তাবন্দী করে পুঁতে রাখা হয়েছিল। তবে এখনো তার দুই পা এবং মাথা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, পুলিশের হাতে ধরা পড়া খুনি এবং তার সহযোগীর দেখিয়ে দেওয়া জায়গা থেকেই ওই খণ্ডিত দেহ উদ্ধার হয়েছে। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পুলিশের দাবি, বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েই খুন হতে হয়েছে বীরভূমের সিপিএম নেতা সুভাষচন্দ্র দে-কে।
জানা যায়, গত ১৮ অক্টোবর থেকে সুভাষবাবু নিখোঁজ ছিলেন। ১৯ অক্টোবর অর্থাৎ নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন তার বাইক পাওয়া যায় নানুরে এক তৃণমূল নেতার মালিকানাধীন বেসরকারি কলেজের সামনে। সুভাষবাবুর পরিবারসহ অনেকেই যখন নিখোঁজ হওয়ার পেছনে রাজনীতি রয়েছে বলে অভিযোগ তোলা শুরু করছিলেন, সেই সময়েই অর্থাৎ আজ সোমবার সকালে উদ্ধার হল সুভাষবাবুর দেহাংশ।
বীরভূম পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, সুভাষবাবুর এক বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল তার। নিখোঁজ হওয়ার দিন অর্থাৎ শুক্রবারও তিনি ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি যখন ওই তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে ছিলেন, তখন তার স্বামী মতিউর রহমান বাড়ি ফিরে আসেন। নিজের স্ত্রীকে সুভাষবাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে রাগের মাথায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে শাবল দিয়ে আঘাত করেন তার ঘাড়ে। এর পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে উপুর্যপরি আরও কয়েক বার আঘাত করেন। স্ত্রী-র সাহায্যে দেহটি তিন টুকরো করেন।
এর পর মাথা আর দুই পা ভাসিয়ে দেওয়া হয় পানিতে। দেহের বাকি অংশ একটা চটের ব্যাগে ভরে তাদের বাড়ির কাছে একটি পুকুরপাড়ে বাঁশবাগানে পুঁতে দেন স্বামী-স্ত্রী।
নানুর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুরো ঘটনা মতিউর এবং তার স্ত্রী পুলিশের জেরার মুখে স্বীকার করে নিয়েছেন। পরে তাদের দেখানো জায়গা থেকেই উদ্ধার হয়েছে সুভাষবাবুর দেহের অংশ।
যেভাবে ধরা পড়লেন মতিউর ও তার স্ত্রী
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে নেমে নানুর থানার একটি অংশ ঘটনার পেছনে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছিল। সুভাষবাবুর স্ত্রী জানিয়েছিলেন, শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ ওই সিপিএম নেতা বাড়ি থেকে বেরোন। সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করার পাশাপাশি তিনি জীবনবীমার এজেন্টের কাজও করতেন। সেই কাজেই বেরোচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন বাড়িতে।
পুলিশকে সুভাষবাবুর পরিবার জানিয়েছিল, ওই দিন বেলা ৩টার দিকে সুভাষবাবুর মেয়ে ফোন করেছিল বাবাকে। সেই সময় তিনি বলেছিলেন যে, ইলামবাজারে রয়েছেন। জয়দেব ঘুরে বাড়ি ফিরবেন। এর পর আবার ৪টার দিকে ফোন করলে তিনি ফোন তোলেননি বলে পুলিশকে জানানো হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ গত ১৯ অক্টোবর সকালে সুভাষবাবুর গ্রাম নানুরের বাসাপাড়াতেই জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কেরিম খানের কলেজের সামনে থেকে তার বাইকটি উদ্ধার করে। অন্য দিকে, সুভাষবাবুর মোবাইল ট্র্যাক করে দেখা যায়, তার শেষ লোকেশন ছিল দুবরাজপুরের খোঁজমহম্মদপুর। পুলিশ এর পর সুভাষবাবুর মোবাইল কল ডিটেলস দেখা শুরু করে।
সেখানে দেখা যায়, খোঁজমহম্মদপুর গ্রামে এক মহিলাকে নিয়মিত ফোন করতেন তিনি। অন্য দিকে স্থানীয় সূত্রে খবর নিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, ওই গ্রামেই থাকেন বাসাপাড়ার পাশের গ্রাম আটকুলার বাসিন্দা সোনা শেখের মেয়ে। ওই গ্রামের মতিউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। সোনা শেখ এবং সুভাষবাবু দীর্ঘ দিনের বন্ধু।
এর পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে সোনা শেখের মেয়ে এবং তার স্বামী মতিউরকে। পুলিশের দাবি, প্রথমে কিছু স্বীকার না করলেও পরে জেরার চাপে সোনা শেখের মেয়ে স্বীকার করেন, সুভাষ ওই দিন তাদের বাড়িতে এসেছিলেন। এর পরই ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসে মতিউরের স্ত্রীর সঙ্গে সুভাষের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা। এর পরই মতিউর খুনের কথা স্বীকার করেন। সোমবার পুলিশ মতিউরের দেখিয়ে দেওয়া জায়গা থেকে সুভাষের খণ্ডিত ধড় মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে মতিউর এবং তার স্ত্রীকে।