দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং চুরি যাওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং দেশের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, তার প্রশাসন অর্থনীতিকে ‘পুনঃস্থাপন, সংস্কার ও পুনরায় চালু করতে’ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে, আর্থিক খাতে সংস্কার শুরু করেছে এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করছে।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা এ সহায়তা চান।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক গঠন ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘যেহেতু বাংলাদেশ আরো ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের রূপরেখা খুঁজছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টায় সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের কথা বলেন, যা বাংলাদেশে আশার নতুন যুগের সূচনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ, উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জেরড ম্যাসন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগের একটি রূপরেখা বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ভোট কারচুপি রোধ; বিচার বিভাগ, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন ও দেশের দুর্নীতি দমন সংস্থার সংস্কার এবং সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে তার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর ছয়টি কমিশন গঠন করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তার সরকার আগের স্বৈরাচারী শাসনের সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজদের চুরি করা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দুর্নীতি মোকাবিলায় সরকার যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির সাগরে ছিলাম।’
মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতা ব্রেন্ট নেইম্যান ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ওয়াশিংটন ডিসি তার সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন করবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের জন্য প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।
ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম ইস্যু, রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফর নিয়েও আলোচনা হয়।
সূত্র : ইউএনবি