পলিথিনে মোড়ানো কুঁড়ে ঘরটির দরজায় বসে আছেন বৃদ্ধা আয়শা। ওই দরজা দিয়েই দেখা যাচ্ছে, কী করুণ অবস্থা এই বিধবার! শেষ বয়সে থাকার মত একটি ঘরও নেই তার। তাই আবদার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। জীবনের শেষ আবদার, তাকে যেন একটা ঘর দেয়া হয়। যে ঘরে শেষ জীবনে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন। আর দোয়া করবেন শেখ হাসিনার জন্য।
বৃদ্ধা আয়শা কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের উত্তর গড়মাছুয়া গ্রামের মৃত আমির উদ্দিনের স্ত্রী। ৩০ বছর আগে তিনটি ছোট ছোট ছেলে সন্তান রেখে তার স্বামী মারা গেলেও জুটেনি বিধবা ভাতার কার্ড। সংসারের হাল ধরতে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেছেন। সন্তানদের বড় করেছেন। কিন্তু একা আর কত! অভাবের তাড়নায় মারা গেছেন একটি ছেলে। বেঁচে থাকা দুই সন্তানরা নিজ পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই বৃদ্ধা মাকে নিজের দায়িত্ব নিজেরই নিতে হয়েছে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে জোগাতে হয়েছে দু’মুঠো ভাত।
কিন্তু বয়সের ভারে নতজানু আয়শা আর পারছেন না নিজেকে টানতে। নানান অসুখ বাসা বেধেছে শরীরে। তার প্রকৃত বয়স ৭৫ বছরের বেশি। কিস্তু জন্ম নিবন্ধন কার্ডে তার জন্ম সাল ১৯৫৮ হিসেবে বর্তমান বয়স ৬২। এত দিন ৬০ বছর পূর্ণ না হওয়ায় মিলেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড।
তার অভিযোগ, অনেকেই ভাতা দেয়ার কথা বলে একাধিকবার নাম নিলেও তার ভাগ্যে এখনো জুটেনি কোনো প্রকার কার্ড। জন্ম থেকে যদিও একটি চোখ নষ্ট, সে হিসেবে অন্তত একটি প্রতিবন্ধি কার্ড পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটিও জোটেনি। মনের বেদনা এভাবেই জানালেন এই বৃদ্ধা।
রান্না ঘরেই এখন তার বসবাস। যার দৈর্ঘ্য তিন ফুট আর প্রস্থ পাঁচ ফুট। সেখানে অর্ধেক জায়গায় চৌকি ফেলে আর বাকিটায় হাড়ি-পাতিল রেখে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
সেখানে বসেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে জীবনের শেষ আবদারটি জানালেন তিনি, ‘এ বয়সে যদি একটি ঘর পেতাম, তবে সে ঘরে অন্তত শেষ জীবনে একটু শান্তিতে ঘুমিয়ে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করতাম।’