করোনা মহামারির মধ্যে বিজিএমইএ’র সভাপতির পোশাক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা এবং তার স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনে বিস্মিত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। শুক্রবার নাগরিক ঐক্যের সদস্য সাকিব আনোয়ার স্বাক্ষরিত গনমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বছরের পর বছর ধরে যে শ্রমিকদের শ্রমকে পুঁজি করে এই পোশাকশিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, সেই শ্রমিকদের এই দুর্দিনে কর্মহীন করা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের কাঁচামাল প্রধানত আমদানি নির্ভর। অর্থাৎ আমরা পোশাক শিল্প থেকে যা আয় করি তা শুধুমাত্র পোশাক শ্রমিকদের শ্রমের মূল্য।
তিনি আরো বলেন, কিছু অর্ডার বাতিল হয়েছে, সেই বাতিল অর্ডারের কিছু আবার ফিরেছে, হয়তো আরো ফিরবে। চলতি বছরে পোশাক শিল্পের আয় ২৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৩.১ বিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছিল যার ২৬ শতাংশ এখন পর্যন্ত ফেরানো গেছে। এত বছর ধরে যে শ্রমিকদের শ্রম বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি অগ্রসর হয়েছে এবং মালিকেরা ধনী থেকে ধনকুবের হয়েছেন, সেই শ্রমিকদের এই মহামারির সময়ে ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাচ্ছি।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, “বিজিএমইএ সভাপতি নিজেই বলেছেন, এখনো ১৮ হাজার শ্রমিকের কয়েক মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, শ্রমিকদের জন্য তহবিল গঠনের জন্য সরকারের সাথে বসা হবে।”
শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ কি যথেষ্ট ছিল না প্রশ্ন করে মান্না বলেন, সে বিষয়ে তো আপনারা কিছু বলছেন না। সরকারের সাথে বসে পোশাক শ্রমিকদের বিষয়ে বিজিএমইএ কেই গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনভাবেই পোশাক শ্রমিকদের ছাঁটাই করা যাবে না এবং প্রত্যেক শ্রমিকের বকেয়া বেতন চলতি জুন মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। যারা ইতোমধ্যে চাকরি হারিয়েছেন, তাদের শ্রম আইন অনুযায়ী বেতন বা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের পুনঃনিয়োগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এই সকল বিষয়ে পোশাক কারখানা মালিকদের সহযোগিতা করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় পোশাক খাতের এই অস্থিরতা যে পরিস্থিতি তৈরি করবে তা সামাল দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না।
শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য বিজিএমইএ সভাপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাহমুদ রহমান মান্না বলেন, আশা করি স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শ্রমিকদের জীবিকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে সরকারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিজিএমইএ উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধান করবেন।