বৃটিশ কতৃক অখন্ড ভারত বিভাজনের ৭২ বছর তথা ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বাধীনতার ৭২ বছর পূর্তি উপলক্ষে, গত ১৯শে অক্টোবর, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কস্থ “ইন্ডিয়ান পার্টিশন” সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় বাৎসরিক কনফারেন্স। এই উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায়, এবছরও বহুল প্রত্যাশিত ” ওঝচধউ চধৎঃরঃরড়হ ঈবহঃবৎ ঔড়ঁৎহধষ ২০১৯″ “ওঝঝঘ ২৩৭৭-৭৫৬৭ ” প্রকাশিত হয়। ২০১৯ সালের জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধের রচয়িতা যথাক্রমে, প্রফেসর ড. অতনু সরকার, প্রফেসর অরজিৎ আদিত্য, প্রফেসর ড. মহিন্দ্র সিং শেরা, প্রফেসর ড. সাচী দস্তিদার, সুদীপ্ত দাস, প্রফেসর ড. হূড্ডয়, ড. ইয়াং সু. কঙ্।
প্রারম্ভে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ১৫০ তম জন্ম জয়ন্তী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯ জ্ন্ম জয়ন্তীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপন পূর্বক কনফারেন্স চেয়ার এবং প্রতিষ্ঠাতা নিউইয়র্ক ষ্টেট ইউনিভার্সিটি অফ ওল্ড ওয়েষ্টবেরীর স্বনামধন্য অধ্যাপক ড. সব্যসাচী ঘোষ দস্তিদার আনুষ্ঠানিকভাবে কনফারেন্সসূচনা করেন। ২০১৯ জার্নাল এডিটরিয়াল কমিটির সদস্য ড.টম লিলি, রামেন নন্দী এবং ড. দিলীপ নাথ , ২০১৯ -কনফারেন্সের প্রস্তাবক প্রফেসর ড. আলি রেজা ইব্রাহীমী, মো: খুরশেদুল ইসলাম, প্রফেসর প্রভাত দাস এবং শুভ রায়ের হাতে প্রকাশিত জার্নাল তুলে দেন। পরিচয় পর্ব সহ এই অনুষ্ঠানটি সম্পাদনা করেন ড. শেফালী ঘোষ দস্তিদার। তার পর পরই পার্টিশন সেন্টারের বাৎসরিক রিপোর্ট পেশ করেন, প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর শুভ দস্তিদার।
প্রাতরাশের বিরতির পর শুরু হয়, কনফারেন্স সেশন-১। শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মাননীয় কাউন্সিলম্যান বেরী গর্ডনচীক। ইহুদী বংশোদ্ভূত বেরী তার পরিবারের দেশত্যাগে কথা উল্লেখ করে, বলেন “দেশ ত্যাগ কোন কালেই কারো কাম্য নয়” সেসময় সে তার পরিবারের আপনজনের স্মৃতি চারণ করে, ইতিহাস সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে ড. দস্তিদারের ভূয়সী প্রশংসা করে, পার্টিশন সেন্টারের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে, সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
সেশন -১ এর প্রথম উপস্থাপক, প্রোগেসিভ ফোরাম, যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহবায়ক, বাংলাদেশ-আমেরিকান পলিটিক্যাল এক্টিভিষ্ট খোরশেদুল ইসলাম ” জনগনকে বিভক্ত করার নীতি: উপনৈবেশিক যুগে ও একবিংশ শতাব্দীতে” নাতিদীর্ঘ লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। বক্তব্যের সমালোচনায় অংশ গ্রহন করেন, ড. শেফালী ঘোষ, ড. আলীরেজা ইব্রাহিমী, শুভ রায় এবং প্রফেসর ড. সব্যসাচী ঘোষদস্তিদার।
কনফারেন্সের দ্বিতীয় সেশনে প্রথম উপস্থাপন করেন, নিউইয়র্ক সিটি স্কুলের শিক্ষক, সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট, ইউ এস’র আহবায়ক, কম্যুনিটি এক্টিভিষ্ট, সাংস্কৃতিক সংগঠক শুভ রায়।
“দ্যা ইষ্টার্ন টেল অফ টিয়ারস্” -এ শুভ রায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয়দের আত্মত্যাগের ভূমিকা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে বৃটিশ কতৃক কৃত্রিম খাদ্য সংকটে ভারতীয়দের অর্ধাহারে-অনাহারে মৃত্যু, সর্বোপরি বৃটিশ কতৃক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক বিভেদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফলাফল অদ্যাবধি বয়ে বেড়ানোর চিত্র তুলে ধরেন।
কনফারেন্সের দ্বিতীয় সেশনের সর্বশেষ উপস্থাপনায় ছিলেন সেন্ট জোন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. প্রভাত দাশ” ভারত বিভাজন” বিষয়ে সুদীর্ঘ লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। ড. দাশ শ্রীলঙ্কা, বার্মা, ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ সহ ভারত বিভাজন, তথা সমগ্র ভারতবর্ষে বৃটিশ রাজের শুরু থেকে শেষ পর্য্যন্ত দুমুখো নীতি, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক প্ররোচনা সহ আসাম, বেঙ্গল, জম্বু-কাশ্মীর ভাগ সহ, বৃটিশ-ইন্ডিয়া আর্মি, বৃটিশ-ইন্ডিয়া নেভী, রেলওয়ে সহ রেডক্লিফের বন্টন বিষয়ে আলোকপাত করেন।
উপস্থাপিত বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন, মি. জে হাইমেন, প্রফেসর ড. আলীরেজা ইব্রাহিমী, ড. ঘোষ দস্তিদার, ড. প্রদীপ দাস, শুভ রায় এবং খোরশেদুল ইসলাম। চলমান রাজনৈতিক কৌশল সহ উপনবৈশিকতার সুফল-কুফল নিয়ে মুক্ত আলোচনা এক ভিন্নমাত্রা সংযোজন হয়। পরিশেষে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানব জাতি সহ সকল প্রানীর কল্যানে, রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শুভ্রা গোস্বামী। ইন্ডিয়ান পার্টিশন এন্ড ডকুমেন্টেশন সেন্টারের পরিচালক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. সব্যসাচী ঘোষদস্তিদার সকলের সহযোগিতা কামনা করে ২০১৯ কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।