

বাংলাদেশে টাইফয়েড প্রতিরোধে অর্জিত সাম্প্রতিক সাফল্যকে ‘যুগান্তকারী জাতীয় মাইলফলক’ হিসেবে অভিহিত করেছে ইউনিসেফ। সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেছেন, ২০২৫ সালের টিসিভি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৯৭ শতাংশ অর্থাৎ চার কোটি পঁচিশ লাখেরও বেশি শিশু টাইফয়েড প্রতিরোধী টিকার আওতায় এসেছে। তার মতে, এটি শুধু সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলনই নয়, বরং প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা এবং পরিবারের আর্থিক-মানসিক চাপ কমাতে বাংলাদেশের সক্ষমতারও প্রমাণ। টিকা কার্যক্রম চালু করার ক্ষেত্রে বিশ্বের অষ্টম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন টাইফয়েড মোকাবিলায় বৈশ্বিক নেতৃত্বের কাতারে।
ফ্লাওয়ার্স আরও জানান, দেশের নিরাপদ পানি ব্যবস্থার সীমাবদ্ধ। পানির উৎসের প্রায় অর্ধেকেই ই. কোলাই দূষণ এবং ব্যবহৃত পানির নমুনায় উচ্চ হারে দূষণ টাইফয়েডের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। এ পরিস্থিতিতে টিসিভি টিকাকে শিশুদের জন্য জীবনরক্ষাকারী সুরক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। এই বৃহৎ ক্যাম্পেইনের পরিকল্পনায় পাঁচ কোটি চল্লিশ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ, কোল্ড চেইন শক্তিশালীকরণ, নতুন কোল্ড রুম স্থাপন এবং ভ্যাক্সইপিআই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সঠিক শিশুর কাছে সঠিক সময়ে টিকা পৌঁছে দেওয়ার মতো প্রতিটি ধাপে ইউনিসেফ সহযোগিতা করেছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, মাঠপর্যায়ের প্রচারণা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে অংশীদারত্ব ও বারো কোটির বেশি মানুষের কাছে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়গুলোও ক্যাম্পেইনের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধ অঞ্চল, উপকূল, পাহাড়ি এলাকা, ভ্রাম্যমাণ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী শিশু থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা শিবিরের চার লাখের বেশি শিশুকেও টিকার আওতায় আনার মত অর্জন বাংলাদেশের সকল শিশুর প্রতি গভীর অঙ্গীকারের প্রতিফলন। এই সাফল্যের জন্য তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ইপিআই কর্মসূচি, গ্যাভি, ডব্লিউএইচও ও অন্যান্য অংশীজনকে ধন্যবাদ জানান। গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং অভিভাবকদের আস্থা ও সহযোগিতার প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। রানা ফ্লাওয়ার্সের ভাষায়, ‘টিকা শুধু সুরক্ষা নয়। এটি আমাদের শিশুদের জন্য সুস্থ, নিরাপদ ও আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি; আর সেই ভবিষ্যতের দিকে বাংলাদেশ আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল’।