করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ফের খারাপের দিকে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। ১৬টি অঙ্গরাজ্যে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশ ‘মারাত্মক সমস্যায়’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি এস ফাউসি।
গত দুই মাসের মধ্যে হোয়াইট হাউস টাস্ক ফোর্সের প্রথম ব্রিফিংয়ে ফাউসি বলেছেন, কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে দেশ। এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে একসঙ্গে কাজ করা।
আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ কমাতে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানালেও দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স যুক্তরাষ্ট্রের ‘অগ্রগতির’ প্রশংসা করেছেন। গতকাল শুক্রবার দেশটিতে নতুন করে ৪০ হাজার সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমিত শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে, যা তার আগের দিনের রেকর্ড ভেঙেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
শুক্রবারের ব্রিফিংয়ে মিলেনিয়ালদেরও পরীক্ষা করা কথা বলা হয়। যাদের মধ্যে উপসর্গ নেই, তাদেরও পরীক্ষার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।
মাইক পেন্স বলেন, প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে টাস্ক ফোর্সকে মার্কিন জনগণকে সংক্রমণ সম্পর্কে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও অ্যারিজোনায় লকডাউন শিথিল করার প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা আরও ১০ গুণ বেশি হতে পারে।
ফাউসি বলেন, বর্তমানে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে তড়িঘড়ি করে আগেভাগে সবকিছু খুলে দেওয়া। জনগণ নিয়ম মানেনি এবং খোলার সময়েও নিয়মগুলো যথাযথভাবে মানা হয়নি। একে অপরকে সংক্রমিত করছে। এতে ঝুঁকিপূর্ষ অনেকেই সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, দ্রুত সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে দেশের যে অংশে সংক্রমণ কমেছে সেখানে আবার সংক্রমণ দেখা দেবে।
তবে নিউইয়র্ক, নিউজার্সির মতো করোনাভাইরাস ছড়ানোর কেন্দ্রস্থলগুলোতে এখন এটি নিয়ন্ত্রণে আসায় এর প্রশংসা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি বলেন, ‘আমরা সংক্রমণের গতি কমিয়েছি, কার্ভ নিচে নামিয়ে জীবন বাঁচিয়েছি। তবে তিনি রাজ্যগুলো সচল করার সঙ্গে সংক্রমণ বাড়ার সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন। তিনি উপসর্গহীন তরুণদের কাছ থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ার কথা বলেছেন। তিনি তাদের সরকারি উপদেশ শুনতে পরামর্শ দেন।’
এর আগে গত মঙ্গলবার ফাউসিসহ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত চার সদস্যের প্যানেল বলেছিল, নতুন মহামারি রোধে সামনের কয়েক দিন গুরুত্বপূর্ণ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। প্যানেলের চার শীর্ষ বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনার পরীক্ষা কমিয়ে দিতে কখনোই বলেননি।
এদিকে, করোনা মহামারির মধ্যেই নির্বাচনী সমাবেশ পুনরায় শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লকডাউন-পরবর্তী প্রথম নির্বাচনী ওই জনসভা গত শনিবার ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের টালসা শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যত বেশি টেস্ট করা হতে থাকবে, তত বাড়বে করোনার সংখ্যা। এ কারণে আমি আমার সমর্থকদের বলেছি করোনা পরীক্ষা কমিয়ে দিতে।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্যে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফাউসি বলেন, ‘আমার জানা মতে, আমাদের কাউকে কখনো করোনার পরীক্ষা কমিয়ে দিতে বলা হয়নি। বরং আমরা আরও বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষা করছি।’
এই কমিটির অপর তিন কর্মকর্তা রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি), খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তারাও একই কথা বলেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী সচিব ব্রেট গিরোয়ার, যিনি মার্কিন ডায়াগনস্টিক সক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করেছেন, আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেন, তিনি আশা করেন, শিগগিরই প্রতি মাসে ৪ কোটি থেকে ৫ কোটি নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম হবেন তারা।
এর আগে গত ১৮ জুন ফাউসি অবশ্য ভিন্ন কথা বলেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় দৈনিক সংক্রমণের হার সমানতালে এগিয়ে চলা সত্ত্বেও করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর বিস্তৃত লকডাউন প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসের মতো এলাকায় যেখানে সংক্রমণের হার বাড়ছে, সেখানে লকডাউন লকডাউনের প্রয়োজন আছে কি না, সে প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসের পরিচালক ফাউসি বলেন, ‘আমি মনে করি না, আমরা লকডাউনে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আর কথা বলব।’
বার্তা সংস্থা এএফপিকে ফাউসি আরও বলেছিলেন, তিনি আশাবাদী যে শিগগিরই বিশ্ব একটি ভ্যাকসিন পাবে, যা মহামারির অবসান ঘটাবে। ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক।