ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী শক্তি ১৯৪৭ সালে ভারত ত্যাগের প্রাক্কালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি করলেও কাশ্মিরের সংখ্যাগুরু মুসলমানের ইচ্ছা অনুযায়ী কাশ্মিরিরা স্বাধীনতা পায়নি এবং ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলের অধীনে নতুন ভারত সরকার সামরিক শক্তির বলে অঞ্চলটির বৃহত্তর অংশ দখল করে নেয়। পরে উপজাতীয় নেতাদের সহায়তায় পাকিস্তানও এর অংশবিশেষ দখল করে নাম দেয় ‘আজাদ কাশ্মির’। বিষয়টি জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে উঠে এবং এর সহযোগিতায় দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কাশ্মির বিরোধপূর্ণ এলাকা এবং গণভোটের ভিত্তিতে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। ভারত প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় গণভোটের আয়োজন করে সুরাহা করবে। কিন্তু তারা তা করেনি। মুসলিম অধ্যুষিত এই অঞ্চলটির জনবিন্যাস পরিবর্তনের জন্য তারা নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাইকারি হারে সেখানে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলছে। মুসলমান মেয়েদের শ্লীলতাহানি চলছে এবং সংখ্যাগুরু মুসলমানদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। অধিকৃত কাশ্মির রাজ্যের প্রশাসন ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে কাশ্মিরিরা এখন চাকরি পায় না। ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রভাবশালী ও হিংস্র প্রকৃতির লোকদের এনে এই উপত্যকায় নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে। বিহার রাজ্যের অধিবাসী, জম্মু-কাশ্মির ক্যাডারের নবীন কুমার চৌধুরী নামক একজন ওঅঝ অফিসারকে সম্প্রতি নাগরিকত্ব দেয়ার মাধ্যমে এই কর্মসূচির সূচনা করা হয়েছে।
সম্প্রতি তুরস্কের আনাদুলু নিউজ এজেন্সি কাশ্মিরের ওপর একটি রিপোর্ট করেছে। রিপোর্টটি তথ্যবহুল এবং সাক্ষাৎকারভিত্তিক। সাক্ষাৎকারটি অধ্যাপক খুরশীদ আহমদের।
গুরুত্ব বিবেচনা করে নিচে সাক্ষাৎকারটির উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃত করা হলো।
খুরশীদ আহমদ পাকিস্তানের খ্যাতনামা একজন অর্থনীতিবিদ এবং দেশটির একজন সিনেটর। তিনি একসময় পরিকল্পনামন্ত্রীও ছিলেন। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক খুরশীদ বহু গ্রন্থপ্রণেতা। তিনি পাকিস্তানের বৃহত্তম ‘থিংকট্যাংক’ ওহংঃরঃঁঃব ড়ভ চড়ষরপু ংঃঁফু-এর চেয়ারম্যান। তার সাক্ষাৎকারটি ছিল নি¤œরূপÑ আনাদুলু : আপনি এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, কাশ্মির আন্দোলন বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ কথার মাধ্যমে আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন?
অধ্যাপক খুরশীদ : প্রায় ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কাশ্মিরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আসছি। কাশ্মিরের ইতিহাস এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের যৌক্তিকতার বিষয়টি ভেবে দেখেছি এবং ৬০ বছর ধরে এর ওপর লেখালেখি করছি। আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই, ২০১৬ সালের পর কাশ্মিরের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেটি কাশ্মিরের জনসাধারণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের চূড়ান্ত ধাপ। কত দিন পর্যন্ত তাদের সংগ্রাম করতে হবে সে সম্পর্কে বলা কঠিন। তবুও লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, এটাই তাদের আন্দোলনের সর্বশেষ পর্যায়।
আনাদুলু : এই চূড়ান্ত পর্যায়ে তাদের করণীয় সম্পর্কে আপনার সুপারিশ কী?
অধ্যাপক খুরশীদ : কাশ্মির, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভূখণ্ডগত কোনো বিরোধের নাম নয়। এই সমস্যাটি হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের বা ভারত বিভক্তির অ্যাজেন্ডার অংশ ছিল। এটি দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয়ও নয়। বরং একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু যা জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের অ্যাজেন্ডার অন্তর্ভুক্ত। এই মুহূর্তে আমি মনে করি, কাশ্মির সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি ফলপ্রসূ চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা অপরিহার্য। কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কারণে আমরা আমাদের জাতীয় জীবনের কিছু কাজ বিলম্বিত করতে পারি। কিন্তু একজন মুসলিম বা পাকিস্তানি হিসেবে আমরা কাশ্মির সমস্যাকে উপেক্ষা করতে পারি না, কিংবা দ্বিতীয় গুরুত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারি না।
পাকিস্তানের সরকার ও পাকিস্তানের জনগণ, আজাদ কাশ্মির সরকার এবং বিদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি ও কাশ্মিরি জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে, ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তোলা। বর্তমান পর্যায়ে এটা তাদের প্রধান দায়িত্ব বলে মনে করি। বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে অথবা টুইটারে বার্তা পাঠিয়ে এ দায়িত্ব পালন করা যায় না। এ জন্য মৌলিক কাজ করতে হবে এবং ফলপ্রসূভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে ধরনা দিতে হবে। এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে শিগগিরই একটি ভালো ফল আশা করতে পারি। সন্দেহ নেই যে, কূটনৈতিক মিশনগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় ফ্যাসিবাদ, মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের বৈষম্য ও অত্যাচার প্রভৃতি সারা বিশ্বে তুলে ধরা দরকার। তবে সামগ্রিকভাবে ভারতীয় মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের প্রতি নির্যাতনের বিষয়টি কাশ্মিরের সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। কাশ্মির আলাদা একটি ইস্যু এবং বিশে^র দরবারে তাকে আলাদাভাবে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করতে হবে।
আনাদুলু : আজাদ কাশ্মিরকে কাশ্মির প্রতিরোধ আন্দোলনের ভিত্তি ক্যাম্প হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এর পরিচালনায় মুজাফফরাবাদের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
অধ্যাপক খুরশীদ : আজাদ কাশ্মির সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ ও কৌশল গ্রহণ করা উচিত। আজাদ কাশ্মিরের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা। আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত পাকিস্তানের দলগুলো থেকে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা এবং একটি জাতীয় সরকার গঠন করা। স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বজায় রাখার পরও পাকিস্তানি রাজনীতিতে তারা বিরোধী দলে অবস্থান করতে পারে এবং কাশ্মিরের স্বাধীনতার বিষয়ের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরে একটি আদর্শ সরকার গঠনের ওপর নিশ্চয়তা দিতে পারে। পাকিস্তানের রাজনীতিকে কাশ্মিরে টেনে আনার দরকার নেই। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কাশ্মিরের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর কোনো প্রকার ছায়া বিস্তার না করার ব্যাপারে পাকিস্তানি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ছিল।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে আজাদ কাশ্মিরে কাজ করার অনুমতি দেন। কিন্তু ৪৮ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এই সিদ্ধান্ত আজাদ কাশ্মিরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ব্যাহত এবং তাদের আন্দোলন ও সংগ্রামের পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। তবে পাকিস্তান জামায়াত কাশ্মিরে তাদের কোনো ইউনিট স্থাপন করেনি এবং আজাদ কাশ্মিরের ব্যাপারে নাকও গলায়নি। তারা দু’টি স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করেছে। পাকিস্তানের প্রত্যেকটি দলের উচিত ১৯৭২ সালের আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়া।
আনাদুলু : পাকিস্তানের ‘কাশ্মির কমিটি’ বিতর্কিত বলে অনেকে মনে করেন। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
অধ্যাপক খুরশীদ : গত দুই দশক ধরে কাশ্মির কমিটির কাজকর্ম হতাশাব্যঞ্জক। পাকিস্তানের বর্তমান সরকারও এই কমিটিকে সচল করতে পারেনি। তবুও দেশের ভেতরে ও বাইরে অবশ্যই এই কমিটিকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। একজন যোগ্য, জ্ঞানী ও সক্রিয় লোককে এর প্রধান করা উচিত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইস্যুটি তুলে ধরার মতো তার যোগ্যতা, প্রজ্ঞা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব থাকা দরকার। কমিটির একজন বিশেষ উপদেষ্টা থাকা উচিত যিনি একজন বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হবেন। কাশ্মির কমিটিকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা ও গভীর প্রজ্ঞা নিয়ে কাজ করতে হবে।
আনাদুলু : আপনার মতে, ফলপ্রসূ কাশ্মির কমিটি বলতে কী বুঝায়?
অধ্যাপক খুরশীদ : ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা-পরামর্শের জন্য আজাদ জম্মু কাশ্মির সরকারের সাথে পরামর্শ করে পাকিস্তানে একটি কমিটি গঠন করা দরকার যার সদস্য হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এবং খ্যাতনামা রাষ্ট্রদূতরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। যারা ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের ভূমিকা পালনের সুযোগ দেয়া উচিত।
কাশ্মির কমিটির অ্যাজেন্ডায় জাতিসঙ্ঘের সিদ্ধান্ত ও তাকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ভারতকে বয়কট করার বৈশ্বিক আহ্বান থাকতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলন এবং সেখানে বর্ণবাদ নিরসনে এ বিষয়টি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিক বর্জন, পরিত্যাগ ও অবরোধ আন্দোলন বিশ্বব্যাপী ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করেছে। জাতিসঙ্ঘের সিদ্ধান্ত, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্ট এবং জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে নিরাপত্তা কাউন্সিলের পরিষদের আলোকে আমাদের উচিত কাশ্মির ইস্যুকে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোর প্রভাব অপরিসীম। তবে এই সম্মেলনগুলো বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টারিয়ানদের সাথে নিয়ে করা অপরিহার্য। কাশ্মির ইস্যুটি তাদের পার্লামেন্টে তারা উত্থাপন করে প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেন। অনুরূপভাবে এ ধরনের প্রস্তাব যাতে মানবাধিকার সংস্থাগুলোতেও গৃহীত হয় এর জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
আনাদুলু : আপনি বলেছেন, আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পর্যায়টি আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন, এখানে কি গুণগত কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
অধ্যাপক খুরশীদ : গুণগত পরিবর্তনটি হচ্ছে, দিল্লির আধিপত্যবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকারী শক্তি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মৃত্যুর ভয় উধাও হয়ে গেছে। কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলনের এটিই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় দিক। ইতোমধ্যে ভারতপন্থী মুসলিম নেতৃত্বেরও মুখোশ খসে পড়েছে। তাদের উপাখ্যান অর্থহীন হয়ে পড়েছে। জনগণ তাদের বিশ্বাস করছে না। এটি একটি বিরাট সাফল্য।
অনুরূপভাবে কাশ্মিরকে ভারতভুক্তির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ভারতের পত্রপত্রিকা, রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোতে আলাপ-আলোচনা ও সমালোচনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিবর্তন অস্বাভাবিক এবং কাশ্মিরের অনুকূলে। এর আরেকটি দিক রয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক অবস্থান এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ সত্ত্বেও অনেকগুলো দেশ থেকে এখন ভারতের জবাবদিহিতা চাওয়া হচ্ছে। এখনো যদিও এই প্রবণতাগুলো দুর্বল এবং অনেকটা অকার্যকর, তবুও এসব দাবি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘটনা পরম্পরা প্রমাণ করে, আমরা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে এসব বিরাট সম্ভাবনাকে আমরা কিভাবে ব্যবহার করছি তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।
আনাদুলু : কাশ্মিরের সাথে অনেক ইস্যু জড়িয়ে গেছে। এখন কাশ্মির শুধু আত্মনিয়ন্ত্রণের বিষয় নয়। কাশ্মির অঞ্চলের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের বিষয়টিও এর সাথে যুক্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
অধ্যাপক খুরশীদ : ভারতের আধিপত্যবাদী সরকার কর্তৃক গৃহীত সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে স্থায়ীভাবে কাশ্মিরকে ভারতের সাথে সংযুক্ত করা। এ জন্য তারা কাশ্মিরিদের পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করছে এবং সেখানকার সংখ্যাগুরু মুসলমানদের সংখ্যালঘুতে রূপান্তরের চেষ্টা করছে।
উপনিবেশবাদের এটা হচ্ছে সর্বনিকৃষ্ট ধরন। এর মুখোশ উন্মোচন করা দরকার এবং এই বিষয়টিকে আজাদি আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে হবে। অতীতে বহু দশক ধরে যেসব কাশ্মিরি মুসলমান কাশ্মিরে ভারতীয় শাসন সমর্থন করে এসেছেন তারা এখন বলছেন, তারা প্রতারিত হয়েছেন। ভারত সরকারের ওপর থেকে তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। ভারত সরকারের তরফ থেকে একদিকে তাদের সাথে যোগাযোগ ও আস্থা পুনর্গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে, অন্য দিকে কাশ্মিরিদের উৎখাত করে সেখানে ভারতীয় হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে। এই প্রচেষ্টা যদি সার্থক হয় তাহলে অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী শক্তিগুলোকে দল-মত নির্বিশেষে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাথে হাত মেলাতে হবে এবং কাশ্মিরি মুসলমানদের নিরাপত্তা দিতে হবে। গণতান্ত্রিক পন্থায় কাশ্মিরিদের আন্দোলন হবে এবং এতে হিংসা-বিদ্বেষ অথবা সন্ত্রাস থাকতে পারবে না। তবে তাদের প্রতিবাদের ভাষা রোধ করা যাবে না। একসময় আফগান তালেবানদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধকে সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এখন আর তা করা হয় না। এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে।