করোনাভাইরাসের মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে অফিস, দোকানপাট, মিল, কল-কারখানা, বাস, লঞ্চ খুলে দেয়া হয়েছে। তবে এখনো আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। সীমিত আকারে ভার্চুয়ালি আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন প্রায় ৬০ হাজার আইনজীবী।
গত মার্চ মাস থেকে নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আইনজীবীদের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। আর নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় মানুষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করেন আইনজীবীরা। তাই অন্যান্য সেক্টরের মতো অবিলম্বে নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার দাবি আইনজীবীদের।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, লকডাউন পরবর্তী সময়ে জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে অফিস, দোকানপাট, মিল, কল-কারখানা, বাস, লঞ্চ খুলে দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি অল্প কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়ে ভার্চুয়াল আদালত চালু করেছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো কাজ হয়েছে এবং এজন্য প্রধান বিচারপতি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিকে স্থায়ী পদ্ধতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাধারণ আইনজীবী ও বার (আইনজীবী সমিতি) সংশ্লিষ্ট সব আইনজীবীরা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
এ বিষয়ে সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা বলেন, করোনায় সবকিছুই তো খোলা, অফিস, মার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে, চলছে বাস। করোনার মধ্যে মানুষ সব কিছুই করছে। কোনো পেশার লোক বসে নেই, পুলিশ বাহিনী, আর্মি, বিডিয়ার, ডাক্তার সবাই কাজ করছে। শুধু আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। নিয়মিত আদালত খোলা না থাকায় মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। এ কারণে আমরা অবিলম্বে আদালত খুলে দেয়ার কথা বলছি।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের সব আদালত অবিলম্বে নিয়মিতভাবে খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা বারের আইনজীবীরা।
বেশ কিছুদিন থেকে সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে।
সংগঠনের পক্ষে অবিলম্বে আদালত খুলে দেয়াসহ পাঁচটি দাবি জানানো হয়েছে। এগুলো হলো :
এক. অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের সব আদালত নিয়মিতভাবে খুলে দিতে হবে।
দুই. আইন অঙ্গনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তিন. ২০২০ ও ২০২১ সালের সুপ্রিম কোর্ট ও নি¤œ আদালতের সব ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল করতে হবে।
চার. দেশের সব আদালতে চার মাস যাবৎ নিয়মিত কোর্ট বন্ধ থাকায় ৬০ হাজার আইনজীবীর প্রত্যেককে সরকারি কোষাগার থেকে আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে ১ লাখ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
পাঁচ. আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামানতবিহীন ও সুদমুক্ত ৫ লাখ টাকা ৫ বছর মেয়াদি ব্যক্তিগত ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করতে হবে।