স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যের হুকুমে কাবিনামা ছাড়াই অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক মাদ্রাসাছাত্রীর বিয়ে পড়িয়েছেন মসজিদের এক ইমাম। গত সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের সোনাইবর পাড়া জামে মসজিদে এ ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মাদ ইছহাকের হুকুমে এ বাল্য বিয়ে পড়ান পাশের গৌড়স্থান চৌধুরী পাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা খালেক হোসেন। ওই ছাত্রী উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের গৌড়স্থান আখতারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির নিয়মিত ছাত্রী ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন আগে উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়ারবর বাড়ির আবুল হোসেনের ছেলে মো. মিজানের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়। এরই সূত্র ধরে গত সোমবার আসর নামাজের পর স্থানীয় সোনাইবর পাড়া জামে মসজিদে বিয়ের আকদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে মেয়ের বয়স কম হওয়া এবং বাল্যবিয়ের বিষয়টি জানতে পেরে পুটিবিলা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার অ্যান্ড কাজী আবদুস সোবাহান এই বিয়েটি রেজিস্ট্রেশন করতে অপারগতা প্রকাশ করে আকদ অনুষ্ঠান বয়কট করেন। এসময় জরুরি কাজ থাকার অজুহাত দেখিয়ে ওই মসজিদের দীর্ঘদিনের ইমাম মাওলানা নুরুল আলমও আকদ অনুষ্টান এড়িয়ে যান।
পরে পাশের গৌড়স্থান চৌধুরী পাড়া জামে মসজিদের ইমামকে ডেকে এনে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মাদ ইসহাকের হুকুমে এবং উপস্থিতিতে নিকাহ রেজিস্ট্রার কিংবা কাবিননামা ছাড়াই এ বাল্যবিয়ের আকদের আয়োজন সম্পন্ন হয়।
বিয়ে পড়ানো ইমাম মাওলানা খালেক হোসেন বলেন, ‘পুটিবিলা ইউনিয়নের স্থানীয় মেম্বার মোহাম্মাদ ইসহাকের হুকুমেই মেয়েটির বিয়ের আকদ পড়িয়েছি। ইসহাক মেম্বার আমাকে বলেছেন, কোনো সমস্যা হবে না। অনলাইনে নতুন জন্মনিবন্ধনে মেয়ের বয়স ১৮ বছর ৭ মাস করে এনেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মাদ ইসহাক বলেন, ‘মাদ্রাসায় জমা দেওয়া মেয়েটির জন্মনিবন্ধনে বয়স ১৫/১৬ বছর হবে। তবে, মেয়েটি শারীরিক গড়নে প্রাপ্তবয়স্ক দেখা যাওয়ায় বিয়ের জন্য ১৮ বছর ৭ মাস করে নতুন জন্মনিবন্ধন অনলাইন করে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় পুটিবিলা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার অ্যান্ড কাজী আবদুস সোবাহান বলেন, ‘আমার মহুরীর মাধ্যমে ছাত্রীটির বিয়ের বিষয়ে জানতে পেরে আমি ছাত্রীর পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তারা আমার কাছে স্বীকার করেছেন মেয়েটি স্থানীয় গৌড়স্থান আখতারুল উলুম দাখিল মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এ ছাড়া আমি জানতে পেরেছি মেয়েটি বয়সে ছোট। তাই আমি দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মেয়েটির বাল্য বিয়ের আকদ অনুষ্ঠান বয়কট করি এবং রেজিস্ট্রেশন করতে অপারগতা প্রকাশ করি। পরে জানতে পারলাম পার্শ্ববর্তী স্থানীয় মসজিদের ইমামকে ডেকে এনে কাবিননামা ছাড়াই মেয়েটির আকদ পড়িয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় গৌড়স্থান আখতারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. মাহমুদুর রশিদ বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী পড়ালেখায় মোটামুটি ভালো ছিল। সে নিয়মিত মাদ্রাসায় ক্লাস করতো। এতো অল্প বয়সে তার বিয়ের খবর শুনে আমি খুবই মর্মাহত।’ এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তৌছিফ আহমেদ বলেন, ‘বাল্যবিবাহ একটি বড় অপরাধ। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’