শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যান বাগদাদি!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৩১৯ বার

শনিবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় লেখা হচ্ছিল উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সেনা অভিযানে উগ্রবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট তথা আইএসের প্রতিষ্ঠাতা এবং শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদি মারা গেছেন।

শনিবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এক টুইটে পরোক্ষভাবে এই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

রোববার ওয়াশিংটন সময় সকালে হোয়াইট হাউজে তা নিশ্চিত করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, এবং অভিযানের বিস্তারিত বিবরণ দেন।

ট্রাম্প বলেন, মি আল বাগদাদি যে বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন রাতের বেলায় মার্কিন স্পেশাল ফোর্স সেখানে ঐ অভিযান চালায়।

আটটি হেলিকপ্টার অভিযানে অংশ নেয়।

‘প্রচণ্ড গোলাগুলির’ পর আমেরিকান কমান্ডোরা বাড়িটি ঘিরে ফেলে দরজা দিয়ে না ঢুকে দেয়াল ভেঙ্গে বাড়ির আঙ্গিনায় ঢোকে।

আল বাগদাদি সেসময় তার তিন বাচ্চাকে নিয়ে একটি বদ্ধ সুড়ঙ্গে লুকানোর চেষ্টা করেন। মার্কিন সেনাদের সাথে থাকা কুকুর তাকে তাড়া করলে উপায় না দেখে আইএস নেতা শরীরে বাঁধা বিস্ফোরক ফাটিয়ে দেন। বিস্ফোরণে সুড়ঙ্গটি তার শরীরের ওপর ধসে পড়ে।

বিস্ফোরণে আল বাগদাদির শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সাথে থাকা তিনটি শিশুও নিহত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আই এস নেতার বেশ কজন সহযোগীও নিহত হয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ছিন্নভিন্ন শরীরের ডিএনএ পরীক্ষা করে আল বাগদাদির পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। তিনি বলেন, দু ঘণ্টা ধরে চলা অভিযানের শুরুতে ১১টি শিশুকে সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। তারা অক্ষত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “বাগদাদি কুকুরের মতো মারা গেছে…কাপুরুষের মতো মারা গেছে। বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী নেতার বিচার সম্পন্ন করেছে।”

বিবিসিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী

উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় ইদলিব প্রদেশে বারিশা নামের একটি গ্রামের একজন গ্রামবাসী শনিবার গভীর রাতে চালানো ঐ নাটকীয় সেনা অভিযানের কথা বিবিসিকে বলেছেন।

তিনি বলেন, ৩০ মিনিট ধরে হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়।

দুটি বাড়িকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। অভিযানে একটা বাড়ি গুঁড়িয়ে যাওয়ার কথা তিনি জানান এবং বলেন এরপর সেনাবাহিনী সেখানে ঢোকে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছেন, মার্কিন বাহিনী ঐ অভিযানে ব্যাপক অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

২০১১ সালে আইএস নেতাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে আমেরিকা। পরে পুরস্কারের অঙ্ক বাড়িয়ে ২৫ মিলিয়ন ডলার করা হয়। ঐ পুরস্কারের লোভেই কেউ বা কারা তার সন্ধান দিয়েছে কিনা- তা জানা যায়নি। তবে ট্রাম্প তার বক্তব্যে এই অভিযানে নানাভাবে সহায়তা করার জন্য সিরিয়া, তুরস্ক, রাশিয়া এবং কুর্দিদের প্রশংসা করেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, অভিযানস্থল থেকে তারা স্পর্শকাতর নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন যার মধ্যে ইসলামিক স্টেটের ভবিষ্যত পরিকল্পনাও ছিল।

কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের কমান্ডার মাজলুম আবদি বলেছেন, শনিবার রাতের এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে তারাও এতে অংশ নেন।

আবু বকর আল বাগদাদি নিহত হওয়ার খবর এর আগেও অনেকবারই পাওয়া যায়, কিন্তু পরে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। বিবিসির একজন সিরিয়া বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলেছেন অন্তত ৩৫বার তার নিহত হবার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে, সেসব খবর সঠিক ছিল না।

কে ছিলেন আবু বকর আল-বাগদাদি?
আবু বকর আল বাগদাদীর আসল পরিচয় কী তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। আল বাগদাদী তার আসল নাম নয় বলে মনে করা হয়।

নাম আবু বকর আল-বাগদাদি – তবে তার আসল নাম ইব্রাহিম আওয়াদ আল-বদরি। ধারণা করা হয়, ১৯৭১ সালে ইরাকের সামারার কাছে একটি সুন্নি পরিবারে তার জন্ম।

অল্প বয়সে গভীরভাবে ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর কোরানিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০০৪ সালে ইঙ্গ-মার্কিন আক্রমণের শিকার হয়ে ক্যাম্প বুকাতে বন্দী হন তিনি। সেখানে তিনি প্রাক্তন ইরাকী গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ অন্য বন্দীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে সামরিক অভিযান চলে, তখন আল বাগদাদি বাগদাদের কোনো একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন বলে দাবি করা হয় কোন কোন রিপোর্টে।

অনেকের বিশ্বাস, সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলেই আল বাগদাদি উগ্রবাদীতে পরিণত হয়েছিলেন। তবে অন্য অনেকের ধারণা, যখন তাকে দক্ষিণ ইরাকে একটি মার্কিন সামরিক ক্যাম্পে চার বছর আটকে রাখা হয়েছিল তখনই আসলে আল বাগদাদি উগ্রবাদে দীক্ষা নেন। এই ক্যাম্পে অনেক আল কায়েদা কমান্ডারকে বন্দী রাখা হয়েছিল।

আল বাগদাদি পরে ইরাকে আল কায়েদার নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। পরে অবশ্য ইরাকের আল কায়েদা নিজেদেরকে ২০১০ সালে ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এন্ড লেভান্ট’ বলে ঘোষণা করে।
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com