শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন

ঢাকায় জাল টাকার ছড়াছড়ি, জড়িত অর্ধশতাধিক চক্র

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০
  • ২২০ বার

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় জাল নোট চক্রের সদস্যরা। পশুর হাট, কাঁচাবাজার ও শপিংমলকে কেন্দ্র করে এসব চক্রের তৎপরতা শুরু হয়েছে। তাদের টার্গেট আসল টাকার ভিড়ে জাল নোট প্রবেশ করানো। প্রতিবছরই ঈদের মাসখানেক আগে থেকেই এসব চক্র প্রস্তুতি শুরু করে। দিন রাত কাজ করে তারা জালনোট তৈরি করে। এসব নোট তারা পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আবার সেটি বাড়তি
মূল্যে খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা জালনোট বিভিন্ন কৌশলে বাজারে ছেড়ে দেয়।

ঈদকে ঘিরে জালনোট চক্রের সদস্যরা যেমন সক্রিয় হয় তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ধরার জন্য তৎপর থাকেন। চলতি সপ্তাহে মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) অভিযান চালিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার জালনোটসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কারখানা বানিয়ে তারা নোট তৈরি করে। পরে তারা পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে জাল ১ লাখ টাকা বিক্রি করে ৮-১০ হাজার টাকায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আবার খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে ১৮-২০ হাজার টাকায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে জালনোট তৈরি চক্রের অন্তত অর্ধশতাধিক চক্র রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে এসব চক্রের সদস্যরা প্রায়ই গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু জামিনে বের হয়ে তারা ফের এসব কাজে জড়িয়ে পড়ে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ঈদ আসলে টাকার ছড়াছড়ি থাকে। ওই সময়টাই তারা সক্রিয় হয়ে যায়। আমরাও তৎপর আছি। তারা যেন মাথাচাড়া না দিতে পারে। এ রকম আরো অনেক জাল টাকা কারবারি আছে। তাদের কাউকেই আমরা ছাড়বো না।
গত সোমবার রাতে ঢাকার মগবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকার কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাব-২। এ সময় র‌্যাব সেখান থেকে কোটি টাকার জালনোটসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- রিফাত ও পলাশ। অভিযানিক দলের নেতা র‌্যাব-২ কোম্পানি কমান্ডার মেজর এইচ এম পারভেজ আরেফিন জানিয়েছেন, চক্রের সদস্যরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুর হাটে জালনোট ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। ইতিমধ্যে তারা এক লাখ টাকার বান্ডিল ১৮-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। জালনোট চক্রের সদস্যদের মাঠ পর্যায়ে খুচরা ক্রেতা রয়েছে। তারা খুব সহজেই বাজারে জালনোট ছড়িয়ে দিতে পারে। গত সপ্তাহে তারা ৭০ লাখ টাকার সমপরিমাণ জালনোট বাজারে ছেড়েছে। ঈদকে সামনে রেখে তারা বেশি বেশি করে জালনোট প্রিন্ট করছিল। এর আগে ১৮ই জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগের একটি টিম ঢাকার বংশাল ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৫ লাখ টাকার জালনোট, জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম ল্যাপটপ ল্যামেনেটিং, ২টি কালার প্রিন্টারসহ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা হলো- মো. আলম হোসেন (২৮), মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে লামু (৩২) ও মো. রুবেল (২৮)। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে তারা জালনোট তৈরি করে আসছিল। পশুর হাট, শপিংমল ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের সময় তারা কৌশলে জাল টাকা ছেড়ে দেয়। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ১ লাখ টাকার নোট তারা সাত হাজার টাকায় বিক্রি করে। ওই তিনজন ছাড়া চক্রে হাবিব মোল্লা, মুজিবর, জীবন ও রানা নামের আরো চারজন রয়েছে। গোয়েন্দারা এর আগে চারজনকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারা জামিনে বের হয়ে ফের এই ব্যবসায় নেমেছে। এছাড়া ৩০শে জুন র‌্যাব মিরপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুটি বাসা থেকে চার কোটি টাকার জাল নোটসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এছাড়া ৩০ কোটি টাকার জালনোট তৈরির সরঞ্জাম ও আরো ৪০ লাখ টাকার রুপি উদ্ধার করেছে। অভিযানের পর র‌্যাব জানিয়েছিল, এই চক্রটি বিভিন্ন পদ্ধতিতে জাল টাকা তৈরি করে বাজারে ছাড়ছিল। বিশেষ করে ১০০ টাকার নোটকে সেদ্ধ করে তার ওপর ৫০০ টাকার ছাপ বসায়। এই কাজে তারা বিশেষ রং, কাগজ ও প্রিন্টার ব্যবহার করে। তাদের তৈরি ১ হাজার টাকার নোট দেখে সেটি আসল না নকল বোঝা অসম্ভব।
র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার মানবজমিনকে বলেন, ঈদের বাজারে জালনোট ছড়িয়ে যাতে কেউ মানুষকে ঠকাতে না পারে সেজন্য র‌্যাবের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পর পর দুটি বড় অভিযানে ভারতীয় জাল রুপিসহ আমরা দেশি জাল টাকা উদ্ধার করেছি। নজরদারি অব্যাহত আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com