একজন মানুষকে জঙ্গলের কোন হিংস্র প্রাণী আক্রমণ করলে তার শরীর থেকে দাঁত দিয়ে মাংস ছিড়ে ফেলে। তৈরি হয় গভীর ক্ষতের। সেই ব্যক্তি হয়ত চিকিৎসার মধ্য একসময় কিছুটা সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারেন। দীর্ঘ সময় পরে, তার সেই বেঁচে ফিরে আসার অভিজ্ঞতার কথা নাতি-নাতনিদের সাথে গল্পও করতে পারেন। আশপাশের প্রতিবেশীরা তার ওই অভিজ্ঞতা, অনুভতির কথা শুনতে বাড়িতে আসবেন। কিন্তু এই ধর্ষক নামের পশুগুলো যখন একটা মেয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন শরীরের ক্ষতের চেয়েও বড় যে ক্ষত তৈরি হয় তা হচ্ছে মনের ক্ষত। এই নারী যে মানসিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যান তা প্রকাশ করার মতো শব্দও জানা নেই। তার শরীরের ক্ষত হয়ত ডাক্তার সারিয়ে তোলেন কিন্তু মনের ক্ষত? আর বাকি জীবনটা কাটে অনেকটা জীন্দা লাশের মতো। এই মানসিক কষ্টের কথা না পারে ভুলতে, না পরে বলতে।
এদিকে, সংখ্যার দিক দিয়ে বিবেচনা করলেও ধর্ষণের মাত্রা শুধু বেড়েই চলেছে। কেন বেড়েই চলছে সেদিকে একটু পরে আসি। তার আগে একটু দেখি কী হারে বাড়ছে।এই করোনার মধ্যে কেবল জুলাই মাসে বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৭ নারী ও শিশু। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে এ তথ্য দেয়া হয়। বাংলাদেশের ১৩টি প্রথম সারির সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে পরিসংখ্যানটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। জুলাই মাসে হওয়া দেশের ১০৭টি ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। শুধু তাই নয়, জুলাই মাসে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিনজন নারীকে। এক মাসে এই ১০৭টি ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে শিশুদের সঙ্গে ঘটেছে ৭২টি ঘটনা। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুসারে ২০১৪ সাল এ পর্যন্ত ২০,৮৩৫টি রেপ কেস ফাইল করা হয়েছে। এর মধ্যে ১,৫৩৮ কেস ফাইল হয়েছে জানুয়ারি ১ থেকে এপ্রিল ৩০, ২০১৯ সালের মধ্যে। গড় হিসাব করলে প্রতিদিন ১২.৮১টি কেস ফাইল করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ এই ৫ বছরের মধ্যে গড়ে ১০.৫৭ রেপ কেস ফাইল হয়েছে।
সংখ্যাগুলোর দিকে তাকালে অনুধাবন করা যায় যে এই পশুদের দৌরাত্ম্য কী গতি বাড়ছে। ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশু বা বৃদ্ধারাও। সেইসাথে ধর্ষণে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মাত্রা। তাদের যৌন ক্ষুধা যেন মৃত্যু ছাড়া মিটবে না। এর পিছনের কারণ খুঁজতে গেলে মারাত্মক সামাজিক অবক্ষয় থেকে শুরু করে আমাদের বিচারহীনতার সাংস্কৃতি সব মিলিয়ে পাঠক শ’খানেক কারণ বলতে পারবেন। অপরাধীর কাজ অপরাধ করা। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব কী? আমাদের এত বড় প্রশাসনিক যন্ত্র কি এদের কাছে এতটাই অসহায়? ধর্ষক ধরা পড়লেই আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি, তিনি এলাকার প্রভাবশালীর ব্যক্তির কাছের লোক। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বিচার করে শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
কোভিড ১৯ যা পৃথিবীর উন্নত দেশ, বিশেষ করে যারা বিভিন্ন দেশের মাথার উপর ছড়ি ঘোরায় তাদেরকে কাবু করলেও আমাদের কাবু করতে পারেনি। বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর করোনাও আমাদের কাহিল করতে পারেনি। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ফ্রাইওভার বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জিডিপি বাড়ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের গাড়ি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এই গাড়ি সঠিক গন্তব্যে নিতে আরো একটু শক্ত হাতে স্টিয়ারিংটা ধরতে হবে। একটু উনিশ-বিশ হলেই গাড়ি গভীর খাদের মধ্যে উল্টে পড়বে। আর মুহূর্তে শেষ হয়ে যাবে সব কিছু!
labinrahman@yahoo.com