সারাদেশে যারা ধর্ষণ, অত্যাচার, অবিচারের সাথে যুক্ত রয়েছে তারা এই সরকারের আশ্রয় প্রশ্রয় পাচ্ছে এবং এ কারণেই তারা আরো বেশি অপকর্ম করতে উৎসাহিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে পরিস্থিতিগুলো চলছে, এই পরিস্থিতি সভ্য সমাজের নয়। এটা সম্পূর্ণ একটি অসভ্য সমাজে পরিণত হয়েছে। যে সমাজে কোন নৈতিকতা নেই, যে সমাজে কোন বিচার নেই, যে সমাজে কোন আইনের স্বাধীনতা নেই, আজকে আমরা সেই সমাজে পরিণত হয়েছি। এই অবস্থার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী আজকের আওয়ামী লীগ সরকার। তারা এই সমাজে ভয়ঙ্কর নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সারাদেশে যারা ধর্ষণ, অত্যাচার, অবিচারের সাথে যুক্ত রয়েছে তারা এই সরকারের আশ্রয় প্রশ্রয় পাচ্ছে এবং এ কারণেই তারা আরো বেশি অপকর্ম করতে উৎসাহিত হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি এই সরকার জনগণের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। তারা জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নিয়ে আসেনি। তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের একটাই লক্ষ্য, একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা। আজকে সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় বসে রয়েছে। ১৯৭১ সালে আমরা যে চেতনা নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করার জন্য একটি গণতান্ত্রিক সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। কিন্তু এই সরকার আমার সব স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার শুরু থেকে একটা কাজ করছে যে, দেশের বিভিন্ন মত প্রকাশের লোক, ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে। আজ কেন আমাদের দেশের নারীদের নিরাপত্তার অভাব? কেন দেশের শিশু নির্যাতিত হচ্ছে? এর একটাই কারণ এই সরকার জনগণের সরকার নয়। এ সরকার তাদেরকেই মদদ দেয়, যারা সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য গুন্ডামি করে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা ইচ্ছা তা করবে। এ সরকার শুধুমাত্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে এভাবে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ গণমাধ্যমে একটা খবর এসেছে, উচ্চ মাধ্যমিকে যারা পরীক্ষায় দিচ্ছে বা যারা স্কুলে পড়ছে এ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে সার্কুলার দেয়া হয়েছে। সার্কুলাতে এমনটা লিখেছে যে, শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়াতে কোন ধরণের বক্তব্য দিতে পারবে না, যেখানে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট। এর থেকে বোঝা যায় ছাত্রদেরকে, কিশোরদেরকে, তরুণদেরকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সরকার।শুধু তাই নয় আজকের আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা, রাজনীতিবিদেরা এবং যানা আইন পেশায় আছেন তারা তাদের মত প্রকাশ করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মুক্ত একটা পরিবেশে বাস করতে চেয়েছে। একটা মুক্ত পরিবেশে থাকার জন্য সংগ্রাম করেছে। কিন্তু এই বাংলাদেশকে তো আমরা দেখতে চাই চাইনি। আমরা তো চেয়েছি একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।আমরা চেয়েছি এমন একটা দেশ যে দেশে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, মানুষের স্বাধীনতা থাকবে, মতের ভিত্তিতে একটা সৌরভ ছড়িয়ে পড়বে। সেটা হবে গণতন্ত্রের সৌরভ। এজন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করে দেশে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।
একযুগ ধরে দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, এই সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, মানুষের অধিকারকে ধ্বংস করেছে। একটা মানুষের যে নূন্যতম বেঁচে থাকার অধিকার, একটা নারীর, একটা শিশু বেঁচে থাকার যে অধিকার, সে অধিকার থেকে সরকার বঞ্চিত করেছে। এ সমাজ থেকে প্রতিকার পেতে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং নিজেদের রক্ষা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে হবে, আর কোন সময় দেয়া যাবে না। আমরা বরাবরই বলে আসছি আজও হাতে বলছি আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কথা একটাই এ সরকারকে আর সময় দেয়া যাবে না।