মালয়েশিয়ার স্থগিত শ্রমবাজার কোনো সিন্ডিকেটের জন্য নয়, জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রার) সব সদস্যের জন্য খুলতে যাচ্ছে। ‘নো সিন্ডিকেট’ মেসেজ নিয়েই প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলটি গত সোমবার মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে।
আজ বুধবার মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়ায় দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৬ সালের ১০ মার্চ জি টু জি প্লাস (সরকার টু সরকার + ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি) পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হয়, যা ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলে। মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর এক নির্দেশনায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে দাতো আমিন নুরের বেস্টিনেট কোম্পানির (এসপিপিএ সিস্টেম) কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
এর আগ পর্যন্ত দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের হিসাব মোতাবেক ২ লাখ ৯৭ হাজার শ্রমিক কলিং ভিসা নিয়ে পাড়ি জমান।
অভিযোগ রয়েছে, বেস্টিনেট কোম্পানির কর্ণধার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দাতো শ্রী আমিন নুরের নেতৃত্বে ঢাকার প্রভাবশালী ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়েছিল। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন নাজিব রাজাক। জাতীয় নির্বাচনে নাজিব সরকারের পতন হলে মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপরই বেস্টিনেটের কার্যক্রম বন্ধ ও সিন্ডিকেটের অনিয়ম অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের তিনি নির্দেশনা দেন।
একই সাথে তিনি ঘোষণা দেন, বিদেশী শ্রমিক আমদানি হবে সিন্ডিকেটমুক্ত। মালয়েশিয়ার সাথে এমওইউ চুক্তিতে প্রতি কর্মীর জন্য সরকার নির্ধারিত ৩৩ হাজার ৫০০ টাকায় কর্মী পাঠানোর নিয়ম থাকলেও বাস্তবে নেয়া হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত।
এর মধ্যে আমিন নুরের অনলাইন সিস্টেম কোম্পানি (এসপিপিএ) বেস্টিনেট প্রতি কর্মীর নামে কোনো রসিদ ছাড়াই ৫ হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিট (১ লাখ টাকা) আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আন্ডারহ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে এই টাকা আদায় করার কারণে দেশটির সরকারের ভেতরেও ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। নতুন করে যাতে এসব বিতর্ক না ওঠে সেটি এড়াতেই আজ বুধবার কুয়ালালামপুরে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে ‘নো সিন্ডিকেটের’ প্রস্তাবনা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া হতে পারে। সরকারের কাছ থেকে এমন বার্তাই তারা নিয়ে গেছেন।
মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র নয়া দিগন্তকে জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলটিকে যদি মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে (জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক) সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক নেয়া যায় কি না এমন প্রস্তাবনা দেয়া হয়, তাহলে তাদেরকে সে ব্যাপারে কোনো মতামত না দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা একটাই, সেটি হচ্ছে এবার কোনো সিন্ডিকেট হবে না। সবার জন্যই ব্যবসা খুলবে। অর্থাৎ ‘ওপেন ফর অল’।
এক প্রশ্নের উত্তরে একজন ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে বলেন, যেহেতু আমাদের সরকার সিন্ডিকেটের বিপক্ষে, তাই আজকের বৈঠক থেকে ভালো কিছু সংবাদ শোনার অপেক্ষায় আছি।